বাংলাদেশের শিশু দিবস

বাংলাদেশের শিশু দিবস : আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। আজকে যে শিশু সে আগামি দিন আমাদের দেশের হাল ধরবে। এবং দেশকে অগ্র-গতির দিকে নিয়ে যাবে। সকল শিশুদের সুষ্ঠু জীবন যাপন নিশ্চিত করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আর একারনেই শিশু দিবস পালন করা হয়। শুধু মাত্র বাংলাদেশ শিশু দিবস পালন করে তা কিন্তু নয়। বরং সারা বিশ্বে শিশু দিবস পালিত হয়ে থাকে।

কিন্ত অন্যান্য দিবসের তুলনায় এই দিবসটি একটু ভিন্নধর্মী। বিভিন্ন দেশে এই দিবসটি বিভিন্ন তারিখে পালন বা উদযাপন করা হয়। বিশ্ব শিশু দিবস উদযাপন ২০ নভেম্বর এ করা হয়। ১লা জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উদযাপন করা হয়। ১৯২০ বিশ্বে সর্বপ্রথম শিশু দিবস পালন করা হয়। এবং এটি সর্ব প্রথম পালন করা শুরু করে তুরস্ক। শিশু দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে UNESCO দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বহু নিস্পাপ ও ফুলের মত শিশুকে নৃশংস ভাবে হত্যা করা হয়। এ ছাড়াও বহু শিশু যুদ্ধে তাদের পিতা মাতাকে হারিয়ে অনাথ হয়ে যায়। যার ফলে তাদের জীবন হয়ে পড়ে দূর্বিষহ এবং যন্ত্রণাদায়ক। তারা গৃহহীন হয়ে পড়ে এবং একই সাথে তারা অন্য, বস্ত্র এবং বাসস্থান সহ যাবতীয় মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। এ কারনে ইউনেস্কো তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। এবং তাদের ফান্ড হতে বিভিন্ন ভাবে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। তখন তারা শিশুদের অধিকার আদায় করার লক্ষে একটি দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যা বর্তমান সময় শিশু দিবস নামে পরিচিত। বাংলাদেশের শিশু দিবস .

আমাদের বাংলাদেশেও শিশু দিবস পালন করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম তারিখ ১৭ মার্চ কে বাংলাদেশের শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে দিনটি সাধারণ সরকারি ছুটির দিন করা হয়। বাংলাদেশের শিশু দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহন করে আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালে ১৭ই মার্চ তারিখকে জাতীয় শিশু দিবস পালনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশুদের খুবই ভালবাসতেন আর এ কারনেই তার জন্মদিনকে শিশু দিবসে রুপান্তর করা হয়।

Read More  আবেদন পত্র বা দরখাস্ত লেখার নিয়ম

বাংলাদেশের শিশু দিবস পালন করার মূল উদ্দেশ্য হলো শিশুদের প্রতি ভালবাসা ও তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার পাশাপাশি তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা। আমরা সকলেই জানি আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যত। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশে শিশুরা তাদের প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। তারা বিভিন্ন ধরনের শিশু শ্রম মূলক কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত। যার ফলে একটি শিশু তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একটি শিশুর স্বাভাবিক ও সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠা, লেখাপড়া করা, সহ প্রয়োজনীয় সকল অধিকার নিশ্চিত করাই শিশু দিবসের লক্ষ্য। বাংলাদেশের শিশু দিবস .

আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ এখনও অশিক্ষিত এবং নিরক্ষর। এ কারনে আমাদের দেশের মানুষ একটি শিশুর মৌলিক অধিকার গুলো নিশ্চিত করা সম্পর্কে সচেতন নয় এবং এটি কতটা জরুরি সে সম্পর্কেও তারা সচেতন নয়। বিভিন্ন কুসংস্কারের কারনে শিশুদের সামগ্রিক ভাবে এগিয়ে যাওয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। আজকের শিক্ষিত শিশুই পারে আমাদের দেশকে উন্নত করতে এবং একটি মানসম্মত জাতি উপহার দিতে।

বাংলাদেশর শিশুদের বর্তমান অবস্থা – বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র এ কারনে প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পূরণ করা সরকারের পক্ষে কখনোই সম্ভব হয় না। একই ব্যাপার ঘটে শিশুদের ক্ষেত্রেও। যার ফলে আমাদের দেশে শিশু বান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠতে পাড়ছে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় শিশুরা বিভিন্ন ধরনের শিশু শ্রম মূলক কাজের সাথে জড়িত। তাদের সঠিক মৌলিক অধিকার গুলো পূরন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক শিশু শিক্ষা গ্রহণ হতে বঞ্চিত হচ্ছে বিভিন্ন কারনে।

বাংলাদেশর শিশু দিবস পালনের মূল লক্ষ্য – আমরা আগেই জেনেছি আমাদের দেশে শিশুদের সকল অধিকার পরিপূর্ণ রুপে পূরন হয় না। এর কতগুলো কারন রয়েছে। এসকর কারন গুলোর মধ্যে সবচাইতে উল্লেখযোগ্য কারন হলো দারিদ্রতা। এর ফলে শিশুদের সকল অধিকার পূরন করার প্রচেষ্টাও অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। জাতিসংঘ শিশুদের সকল মৌলিক অধিকার নিয়ে গবেষণা করার মাধ্যমে শিশু সনদ প্রকাশ করে। এই শিশু সনদে শিশুদের যাবতীয় প্রাপ্য অধিকার ও বিভিন্ন বিষয় গুলো তুলে ধরা হয়। এগুলো হলো,

Read More  দুর্নীতি ও তার প্রতিকার রচনা

শিশুদের বয়স- জাতিসংঘের এই ধারা মোতাবেক ১৮ বছরের কম বয়সি সকল ছেলে অথবা মেয়েকে শিশু বলা হবে।

শিশুদের সকল অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া- একটি দেশের সকল নাগরিকদের শিশুদের অধিকার গুলোর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে হবে।

সকল ক্ষেত্রে শিশুদের স্বার্থ রক্ষা করা- আইনগত দিক থেকে যে কোন বিষয়ে শিশু স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। এবং আইনগত ভাবে শিশুদের অভিভাবক যারা রয়েছে তারা তাদের সকল দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করছে কি না তা রাষ্ট্রীয় ভাবে তদারকি করা ইত্যাদি।

শিশু সনদের বাস্তবায়ন করা- শিশু সনদে যে সকল বিষয়ে বলা হয়েছে তা সঠিক ভাবে পালন করার জন্য রাষ্ট্রীয় ভাবে আইন প্রনয়ণ করা।

এসকল বিষয় গুলো সহ মোট ৩২ টি বিষয়ে কথা বলা হয়েছে শিশু সনদে। যেগুলো বাস্তবায়ন করা গেলেই শিশু সনদ কার্যকর হবে। এবং প্রতিটি শিশু তার মৌলিক অধিকার আদায়ে সামর্থ্য হবে। আর বাংলাদেশের শিশু দিবস পালনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে এই শিশু সনদের বাস্তবায়ন ঘটানো। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এই যে বাংলাদেশের মানুষ এখন পর্যন্ত শিশু দিবসে তাৎপর্য ও এর গুরত্ব বিষয়ে খুব কমই জানে। আমাদের দেশে শিশু দিবস শুধু মাত্র কাগজ কলমেই পালিত হচ্ছে। মানুষ জানে আজ শিশু দিবস এই পর্যন্তই শেষ। কিন্তু এই শিশু দিবস পালনের কারন এবং এটি আমাদের দেশে এর গুরুত্ব কতটুকু তা জানে না অনেকেই।

বাংলাদেশের শিশু দিবস কার্যকর করার উপায় – আমরা বাংলাদেশে শিশু দিবস পালনের কারন গুলো আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি কিন্তু এটি সম্পর্কে যেহেতু সাধারণ মানুষ বেশি জানেন না তাই এই করনে শিশু দিবস সফল হচ্ছে না। বিপরীতে শিশুরা বিভিন্ন লাঞ্ছনা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। অল্প বয়সেই ঝড়ে পড়ছে শিক্ষা জিবন হতে এবং দূর্বিষহ জীবনযাপন করছে তারা। শিশু দিবস ফলপ্রসূ করতে হলে সরকারের বিভিন্ন ধরনের জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে এবং এবং সর্বসাধারণের মধ্যে শিশু সনদের মূল লক্ষ্য ও এটিতে কোন কোন বিষয় গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে সে সম্পর্কে ধারনা প্রদান করতে হবে। কখনোই কাগজে কলমে শিশু দিবস পালনের মাধ্যমে শিশুদের মৌলিক অধিকার আদায় করা সম্ভব নয়। একই সাথে সরকারের সাথে সাথে এগিয়ে আসতে হবে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে। যারা শিশু অধিকার এবং মানুষের মৌলিক অধিকার আদায় করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সেই সাথে সমাজের সকল সচেতন নাগরিকদেরও কাজ কাজ করতে হবে তবেই বাংলাদেশের শিশু দিবস পালনের মূল লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে।

Read More  আমার ছেলেবেলা রচনা

তবে বহু প্রতিকূলতা থাকলেও তার ভিতর থেকেও আশার সূর্য উঁকি দেয়! বাংলাদেশের শিশু দিবসের লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য এবং শিশুদের জীবনমানের উন্নতি ঘটানের লক্ষ্য নিয়ে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একজোট হয়ে কাজ করছে। তারা বিভিন্ন পথ শিশু এবং শিশু শ্রমিকদের মাঝে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এবং তারা এসকল শিশুদের উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের শিশু দিবসের লক্ষ্যকে বাস্তবে রূপদান করার প্রচেষ্টা অব্যহত রেখেছে।

About the Author:

Habibur Rahman is an expert writer about Bangla poems, romantic stories, captions, status and quotes. He is writing about all romantic and motivational quotes, poems, captions, and status messages from the past 12 years. He has completed honors and master's degrees in literature from Dhaka University.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *