বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প টি লিখেছেন শুভাশিস রায় । গল্পটি খুবই চমৎকার । আমি এই রকম অনেক গল্প পরেছি । কিন্তু এই গল্প টা সত্যি অন্যান্ন গল্পের চেয়ে একটু বেশী ভালো লেগেছে । তাই আপনাদের সাথেও শেয়ার করলাম । গল্পটা পড়েই দেখুন, আশা করি খুবই মজা লাগবে ।
বাসর রাতের রোমান্টিক গল্প ( চন্দ্রবাসর ) :
আজকে আকাশ জুড়ে একটা মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে। আজকে বোধহয় পূর্ণিমা। চিলেকোঠায় বসে ছিলাম, চাঁদের উথাল পাথাল আলো দেখে ছাদের কার্নিশে এসে দাঁড়িয়েছি। তারপর একটু একটু চাঁদ থেকে জোৎস্না চেয়ে নিয়ে গায়ে মাখছি৷ একটু একটু হাওয়াও বইছে, বেশ ঠান্ডা হাওয়া। আচ্ছা, এটা বাংলা কি মাস? আশ্বিন? না কার্তিক? না অগ্রহায়ণ চলে এসেছে? ঠিক মনে করতে পারি না। কিন্তু মাসের নাম আমার জানা দরকার৷ কেউ যদি বলে ” আপনার বিয়ে বাংলা কোন মাসে? ” তখন আমি কি করবো? এই প্রশ্নের উত্তরে “জানি না ” বললে কি খুবই খারাপ শোনায়? হয়তো শোনায়। কেউ কেউ বিয়ের বাংলা, ইংরেজি, আরবি তিন রকম মাস, তারিখ মনে রাখে। আমার সেই ক্ষমতা নেই৷ আজ জানলেও নিশ্চিতভাবে কয়েকদিনের মধ্যে ভুলে যাবো৷ আচ্ছা, তারিখ ভুলে গেলে কি তৃণা খুব রাগ করবে?
তৃণার ঘুম মনে হয় এতোক্ষণে আরো গভীর হয়ে গেছে। আমি ঘরে ঢুকে দেখেছিলাম খাটের কোনায় মাথা এলিয়ে দিয়ে ঘুমোচ্ছে। গা ভর্তি ভারী গহনা, বেনারশী শাড়িটার ভারও কম না। মাথায় একটা বিশাল ওড়নার ঘোমটা। আমি আর ঘরে ঢুকিনি। দরজাটা ভেজিয়ে দিয়ে চিলেকোঠার ঘরটাতে এসে বসলাম। তৃণা ঘুমাক৷ আমি চাঁদ দেখি। বাতাস খাই আশ্বিন, কার্তিক কিংবা অগ্রহায়ণ মাসের।
আরো আছেঃ>>> স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প
দুহাতে বাতাসটা আড়াল করে একটা সিগারেট ধরিয়ে কয়েকটা ধোঁয়ার রিং ছাড়লাম। ঠিক তখনই নুপুরের আওয়াজ টা কানে এলো। তৃণা ছাদে উঠে এসেছে। এভাবে চারটা শব্দে যত সহজে বললাম, একজন নতুন বউ এর বাসর রাতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে ছাদে চলে আসাটা ঠিক ততটাই কঠিন। যদিও বাড়ির সবাই এখন ঘুমে। তাও যদি কেউ দেখে ফেলে তা খুব একটা শোভনীয় ব্যাপার হবে না।
আমি বিষ্ময় যথাসম্ভব লুকিয়ে বললাম, ” আপনি এখানে! ঘুম ভেঙে গেলো? ”
” হুম, ঘরটা বড্ড গুমোট, এতো গরম লাগছিলো, তাই একটু… ” তৃণা অযুহাত দেয়ার চেষ্টা করে। অথচ সে যে ঘরের কথা বলছে সে ঘরে আমি আমার জীবনের প্রায় ২৫ বছর কাটিয়েছি। যথেষ্ট খোলামেলা আমার ঘর। জানালা খুলে দিলে প্রচুর বাতাস আসে। ফ্যানের কোনো সমস্যা নেই। বিয়ের কিছুদিন আগে মায়ের জোরাজুরিতে এসিও লাগিয়েছি। তাই তৃণার এ কথায় আমি কিছু বললাম না, শুধু মুচকি হাসলাম।
তৃণা বলল, ” আপনি ছাদে কেন এসেছিলেন? ঘরে কি কোনো অসুবিধা…”
” আরে না। অসুবিধা কি! এমনি একটু এসেছিলাম। এসে দেখি বিশাল এক চাঁদ উঠেছে আকাশে। সুকান্তর ঝলসানো রুটির মতো। হা হা হা। আসুন, ওখানে বসি৷”
ছাদের একটা জায়গায় একটা বেঞ্চের মতো করা। আমি সেখানে গিয়ে বসলাম। তৃণাও আমার পাশে গিয়ে বসলো। আমাদের পারিবারিক বিয়ে, চেনা পরিচয় খুব বেশি হয় নি। আমেরিকা থেকে দেশে ফেরার পর মা খুব জোরাজোরি শুরু করলেন বিয়ের জন্য। নানাভাবে নানা উপায়ে বিয়ের কথা বলতে লাগলেন। শেষমেশ বাধ্য হয়েই রাজি হতে হলো। অনুরোধে ঢেঁকি গেলা বলতে যাকে বোঝায় ঠিক তাই। তৃণার সাথে একদিন রেস্টুরেন্টে দেখা করেছিলাম, সেও মায়ের চাপাচাপি তেই।
তৃণা আমার পাশে বসে চুপ করে রইলো৷ আমিও আর নিজে থেকে কিছু বললাম না৷ আকাশের দিকে মুখ ফেরালাম। হাজার হাজার তারার মধ্যে একটা তারাকে খুব বেশি উজ্জ্বল বলে মনে হয়। আমেরিকাতে থাকতে রাতের বেলাতে ওটার দিকেই তাকিয়ে থাকিয়ে ভাবতাম ওটাই নীরা। নীরার সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো চার বছরের। আমেরিকাতে ডক্টরেট করতে যাওয়ার আগেই আমাদের বিয়ে ঠিক হয়েছিলো। আমি দেশে ফিরলেই বিয়ে। কিন্তু নীরাকে বোধহয় আমার চেয়ে সৃষ্টিকর্তার বেশি প্রয়োজন ছিলো। হঠাৎ এক রোড অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেলো। আমি চৌদ্দ হাজার মাইল দূর থেকে শুধু চোখের পানি ফেললাম। এছাড়া আর কি ই বা করার ছিলো আমার!
বাতাসে আরো জোরে বইছে। এখন একটু শীতের মতো লাগছে। তৃণার আবারও ঘুমিয়ে পড়েছে। অচেতনে কিংবা হয়তো সচেতনেই মাথা রেখেছে আমার কাঁধে। আমি একটু ক্ষীণ স্বরে বললাম, ” তৃণা, এটা বাংলা কি মাস জানেন? ”
তৃণা বোধ হয় একবারেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো না। আমার প্রশ্ন শুনতে পেলো। বললো, ” না তো। ”
” তাহলে কেউ যদি জিজ্ঞেস করে আপনার বিয়ে বাংলা কোন মাসে হয়েছিলো, কি বলবেন? ”
” জানি না! ”
© শুভাশীষ রায়