বিজয় দিবস রচনা

বিজয় দিবস রচনা

ভূমিকা: একটি দেশের স্বাধীনতা অর্জন হয় বিদেশি শত্রুর হাত থেকে বিজয় অর্জন করার মাধ্যমে। প্রতিটি দেশের স্বাধীনতা অর্জনের পিছনেই রয়েছে রক্তক্ষয়ী ইতিহাস। বহিরাগত শত্রুর অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার মাধ্যমে সুত্রপাত হয় বিজয় অর্জনের। এবং এই সংগ্রামে জয় লাভ করাই হচ্ছে বিজয় অর্জন। এবং বিজয় অর্জনের দিনটিকে সেই দেশের বিজয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই দিনটি ঐ দেশের মানুষের কাছে মহা আনন্দের দিন। এবং বহু উৎসব উদ্দীপনার মাধ্যমে দিনটিকে পালন করা হয়। অন্যান্য স্বাধীন দেশের মত আমাদের বাংলাদেশ ও একটি স্বাধীন রাষ্ট্র। পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির শোষণ এবং নিপীড়নের হাত থেকে মুক্তির মাধ্যমেই আমাদের বিজয় অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশ পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠির হাত থেকে বিজয় অর্জন করে ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসের ১৬ তারিখে। একারনে ১৬ ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই দিনটিকে বহু উৎসব আয়োজন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে পালিত হয়। দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হয়।

বাংলাদেশের বিজয় দিবস: বর্তমানে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এই বাংলাদেশ বহু সময় বহু বিদেশি শত্রুর আক্রমণের শিকার হয়ে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হয়েছে। একটি সময় এদেশ ছিল ব্রিটিশদের অধিনে। তবে ব্রিটিশরা একসময় এ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় এবং এর পরবর্তী কালে হিন্দু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগ হয়ে ভারত এবং পাকিস্তান নামক দুইটি দেশের সৃষ্টি হয় ১৯৪৭ সালে। তবে সমস্যা এখানেই শেষ নয়। পাকিস্তান সৃষ্টি হয় দুইটি আলাদা আলাদা ভূখণ্ডে যার নাম দেওয়া হয় পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান। তবে পূর্ব পাকিস্তান সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ার পড়েও তার নায্য অধিকার হতে বঞ্চিত ছিল বহু বছর। পূর্ব পাকিস্তানের সকল উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের এবং এদেশের অর্থ দিয়ে উন্নয়ন হতো পশ্চিম পাকিস্তানের। যা বাঙ্গালী জাতি কোন ভাবেই মেনে নিতে পারে নাই। কারন তারা সকল সময় সকল সুযোগ সুবিধা হতে বঞ্চিত ছিল। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের পরে ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ডাক দেওয়া হয় স্বাধীনতা আন্দোলনের। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পড়ে স্বাধীন হয় পূর্ব পাকিস্তান। এবং স্বাধীনতা পরে পূর্ব পাকিস্তান নাম বদলে নতুন নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ। ৭ কোটি মানুষের সংগ্রাম এবং ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর তারিখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরাজয় স্বীকার করতে বাধ্য হয়। এ কারনে ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

বিজয় দিবসের ঐতিহাসিক পটভূমি: বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূচনা হয়েছিল ৫২ ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। কারন ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই বাঙ্গালি জাতি স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহন করতে শিখেছিল এবং শত্রুর অস্ত্রের মুখে জিবন বিপন্ন করে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা পেয়েছিল। তবে বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পিছনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা অগ্রগন্য। শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষনের মাধ্যমেই সর্বস্তরের মানুষের ভিতরে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্রতি হয়েছিল। বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণ কৃষক- শ্রমিক, নারী পুরুষ, বৃদ্ধ যুবক সকলেই জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। ৩০ লক্ষ মানুষের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় বিজয়। ১৬ ডিসেম্বর তারিখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হার শিকার করতে বাধ্য হয়। এবং এই দিনে বাংলাদেশের মুক্তি বাহিনী এবং মিত্র বাহিনীর প্রবল সংগ্রামের কাছে শেষমেশ নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

বিজয় দিবস উদযাপন: প্রতি বছর ডিসেম্বর মাসের ১৫ তারিখ রাত ১২ টা ১ মিনিট হতেই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধে শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জাননো এবং বিভিন্ন আনন্দ উৎসব পালন করার মাধ্যমে প্রতি বছর এই দিনটি পালিত হয়। দিনটি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে পালন করা হয়। দিনটিতে স্কুল, কলেজ, অফিস, আদালত সকল কিছুই বন্ধ থাকে। দেশের সকল টিভি চ্যানেল গুলোতে প্রচারিত হয় বিভিন্ন ধরনের দেশাত্মবোধক অনুষ্ঠান এবং বিভিন্ন মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রচারিত হয়।

বিজয় দিবসের তাৎপর্য: বিজয় অর্জনের মাধ্যমে একটি জাতি শুধুমাত্র স্বাধীনতা-ই অর্জন করে না। এর পাশাপাশি বিশ্ব দরবারে জন্ম নেয় একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। এর মাধ্যমে একটি দেশ পায় নতুন পরিচয় এবং নতুন একটি পতাকা। পরাধীনতার শিকল থেকে বেড়িয়ে মুক্তির স্বাদ গ্রহন করে সমগ্র জাতি। সেই সাথে নতুন সম্ভবনাময় যাত্রার দুয়ার উন্মোচিত হয়। রচিত হয় নতুন সংবিধান যার মাধ্যমে জাতি উন্নতির পথে অগ্রসর হয়।

উপসংহার: বিজয় দিবস একদিকে যেমন বাঙ্গালি জাতির জন্য আনন্দের গৌরবের সেই একই সাথে দুঃখের বেদনার। কারন এই দিনে একদিকে যেমন আমরা স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছিলাম তেমনি অনেকেই হারিয়েছে তাদের স্বজন পরিজন। ৩০ লক্ষ শহীদের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল। ইজ্জত হারিয়েছিল লাখো মা বোন। তবে প্রতিটি বিজয় দিবস আমাদের মনে করিয়ে দেয় আমাদের শহীদের কথা। যারা তাদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে দিয়েছিল স্বাধীনতার স্বাদ। এবং নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পৌঁছে দেওয়ার বিশেষ দিন এটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *