ছোট গল্প পড়তে অকেনেই ভালোবাসেন । আপনিও তাই, ভালোবাসেন বলেই এখানে এসেছেন । তাই আমরা এখানে ৫ টি সেরা ছোট গল্প নিয়ে এলাম শুধু মাত্র আপনাদের জন্য । যাই হোক তো চলুন দেখে নেয়া যাক সেই সেরা ছোট গল্প গুলো । গল্প গুলি লিখেছেন প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আনিসুল হক । তার বই থেকে নেয়া হয়েছে । গল্প গুলো অনেক শিক্ষণীয় ।
৫ টি সেরা ছোট গল্প :
১. আধা গেলাস পানির গল্প
আধা গেলাস পানি। আশাবাদীরা বলবেন, গেলাসটার অর্ধেক ভরা । হতাশাবাদীরা বলবেন, এর অর্ধেক খালি। আর পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক বলবেন, পুরােটাই ভরা। অর্ধেকটায় আছে পানি, অর্ধেকটায় বাতাস । এক মনােচিকিৎসক ক্লাসরুমে আধা গেলাস পানি নিয়ে দাঁড়ালেন। ছাত্ররা উসখুস করছে, এই বুঝি আশা আর নিরাশার গল্পটা শুনতে হবে। চিকিৎসক বললেন, এই গেলাসটা যদি আমি পাঁচ মিনিট ধরে রাখি, তেমন কষ্ট হবে । কিন্তু এটাকে যদি ছয় ঘণ্টা ধরে রাখতে হয়, আমার হাত ব্যথা করবে । কাজেই তােমাদের মনের ভার তােমরা বেশিক্ষণ ধরে রাখবে না। জীবনে দুঃখ থাকবে, ব্যর্থতা থাকবে, সেটাকে সরিয়ে মনের সেই জায়গাটা ভরে তুলতে হবে সাফল্যের স্মৃতি দিয়ে, আনন্দ দিয়ে । আরেক শিক্ষক কী করেছিলেন, জানাে! প্রথমে গেলাসটা ভরলেন ছােট ছােট নুড়িপাথর দিয়ে। ভরেছে?’ ‘হ্যা। তারপর ভেতরে ঢাললেন বালু । ভরেছে?’ ‘হ্যা। এবার ভেতরে ঢাললেন পানি। তিনি বললেন, এ গেলাসটা আমাদের চব্বিশ ঘণ্টা। নুড়িপাথরগুলাে আমাদের কাজ, চাকরি বা পড়া। বালু হলাে পরিবার, সম্পর্ক, বাবা-মায়ের খোঁজ নেওয়া, প্রিয়জনের যত্ন নেওয়া। পানিটা হলাে আমাদের স্বাস্থ্য ঠিক রাখার চেষ্টা, নিয়মিত খেলাধুলা করা, শরীরের যত্ন নেওয়া ইত্যাদি। সবই করতে হবে, একটা দিনে, চব্বিশ ঘণ্টায় । যেকোনাে একটা নিয়ে চব্বিশ ঘণ্টা ব্যতিব্যস্ত থাকলে চলবে না। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা ।
২. তুমিও হতে পারাে সুপারহিরাে
সুপারহিরাে মানুষের কল্পনার সৃষ্টি। মানুষ যা করতে পারে না, চায়, যা হতে পারে না, কিন্তু হতে চায়, সুপারহিরােদের আমরা সেসব। করতে দেখি। কেউবা মাকড়সার মতাে দেয়াল বেয়ে উঠতে পারে, কেউবা। বাদুড়ের মতাে পাখা মেলে উড়তে পারে। গল্প, সিনেমা, কার্টুন, কমিকসে। এসব দেখতে ভালােই লাগে। তাই তাে আমাদের এবারের সংখ্যা সুপারহিরাে। অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। তুমি যা হতে চাও, তা-ই হতে পারবে। আমেরিকা থেকে একটা বই বেরিয়েছে, জিনিয়াস ইন অল অব আস, লেখকের নাম ডেভিড শেঙ্ক। লেখক বহু। বৈজ্ঞানিক গবেষণা আর কেস হিস্ট্রি বিশ্লেষণ করে বলেছেন, প্রতিভা। আসলে কোনাে কাজ খুব ভালাে করে করার চেষ্টা বা সাধনা। ভিনসেন্ট ভ্যান গগ নামের বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ছােটবেলায় ভালাে করে ছবি আঁকতে পারতেন না। তিনি একটা ছবি পঞ্চাশবারও এঁকেছেন ছােটবেলায়। এভাবে চেষ্টা করতে করতে তাঁর ছবি আঁকার প্রতিভা বিকাশ লাভ করেছে। লেখক বলেছেন, আমাদের সবার মধ্যেই আইনস্টাইন আছেন, রবীন্দ্রনাথ আছেন, শচীন টেন্ডুলকার আছেন। কেউ চেষ্টা করে, কেউ করে না, যে চেষ্টা করে না, তার প্রতিভা বিকশিত হয় না । আমরা কেউই সুপারহিরাে হতে পারব না। কিন্তু জীবনে অনেক বড় অনেকেই হতে পারব। যার যা করতে ভালাে লাগে, সেটা খুব মন দিয়ে, খুব সাধনা করে করতে হবে। তাহলে আমরাও হতে পারব একেকজন সফল মানুষ।
৩. টিটোর স্বাধীনতা
ডিসেম্বর মাস বাংলাদেশের বিজয়ের মাস। মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ। নিয়েছিলেন, তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন তরুণ। এমনকি অনেক কিশােরও যােগ দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। আমরা সবাই শহীদ রুমীর নাম জানি, জাহানারা ইমামের বড় ছেলে। তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যােগ দিয়েছিলেন, অংশ নিয়েছিলেন ঢাকার বিভিন্ন গেরিলা অপারেশনে। তিনি কিন্তু ওই সময় কেবল উচ্চমাধ্যমিক পাস করে দেশে এবং দেশের বাইরে প্রকৌশল শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়েছিলেন। এই রকম কিশাের-তরুণ শিক্ষার্থীরাই দলে দলে যােগ দিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধে। এক কিশাের মুক্তিযােদ্ধার নাম টিটো। কিশাের টিটোকে নিয়ে মুক্তিযােদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ লিখেছেন একটা চমৎকার বই ‘ টিটোর স্বাধীনতা’। টিটো যুদ্ধের ময়দানে শহীদ হয়েছিল । আমরা যেন কখনাে না ভুলি, এই দেশটা আমাদের এনে দিয়েছেন এই বীর মুক্তিযােদ্ধারা, শহীদেরা, রক্তের দামে। তাঁদের কাছে আমাদের অনেক ঋণ। সেই ঋণ আমরা শােধ করতে পারি দেশকে ভালােবেসে, দেশের জন্য ভালাে কাজ করার মাধ্যমে। আমাদের আগের প্রজন্ম নিজেদের উৎসর্গ করে আমাদের দিয়ে গেছেন স্বাধীন দেশ। আমাদের কাজ হলাে নিজেকে সুন্দর করে গড়ে তােলা, তাহলেই গড়ে উঠবে একটা সুন্দর দেশ, সুন্দর মানুষের সুন্দর দেশ।
৪. ফলে পরিচয়
আতা ফুলের খুব মিষ্টি গন্ধ হয়, তােমরা জানাে? আমাদের রংপুর শহরের খালের ধারে জঙ্গলের মধ্যে আতাগাছে আতা ফুল ফুটত। আর তার গন্ধে আমরা পাগল হয়ে যেতাম। কারণ, গন্ধটা ছিল পাকা কলার গন্ধের মতাে। জঙ্গল থেকে আতা তুলে এনে চালের বস্তায় ঢুকিয়ে রাখতাম, পাকলে মজা করে খেতাম। আর পাকা কলা? আমাদের ছােটবেলায় শেখানাে হতাে, কেউ যদি বলে কলা খাবি? তার পেছন পেছন যাবে না, ও আসলে ছেলেধরা। মানে পাকা কলার লােভ দেখালে আমরা যে কারও হাত ধরে। চলে যেতে প্রস্তুত ছিলাম। বলতে চাইছি, আমাদের ছােটবেলায় ফল খুব প্রিয় জিনিস ছিল। আমরা গাছ থেকে কাঁচা আম পেড়ে নুন-মরিচ দিয়ে মেখে খেতাম। আমি তাে একটা জামগাছে উঠে সারা দুপুর ডাল ধরে শুয়ে থাকতাম। জাম্বুরা বা বাতাবি লেবু খাওয়াও চলত, তা দিয়ে ফুটবল খেলাও চলত। পাড়ার বরইগাছে আমরা ঢিল ছুড়তাম। আর ছিল পানিয়াল ফল। একটা ছড়া বলে পানিয়াল হাতের তালুতে ডলতে হতাে। ছড়াটা ছিল: আম পাকে জাম পাকে, হাতেতে পানিয়াল পাকে। আজকালকার ছেলেমেয়েরা নাকি ফল খেতে চায় না। তােমরা নিশ্চয়ই তেমন নও। ফল আর সবজি, দুটোই খেতে হবে। ঠিক আছে? আম্মা বলতেন, বৃক্ষ তােমার নাম কী? ফলে পরিচয়। এটা বলতেন, পরীক্ষার ফল ভালাে দেখতে চান বলে। আর আমি বলছি, তােমরা স্বাস্থ্যকর খাবার খাও কি না, তার পরীক্ষা হলাে তােমরা ফল পছন্দ করাে কি না। যদি তােমরা ফল খাও, তাহলেই বলব, তােমাদের ফল ভালাে।
৫. ভুল থেকে শেখা ( ছোট গল্প )
টমাস আলভা এডিসন গবেষণা করছেন, তিনি বৈদ্যুতিক বাতি উদ্ভাবন করার চেষ্টায় রত। বালবের ভেতরের তারটা কিসের হবে, তিনি সেটা নিয়ে মত্ত। একটার পর একটা ধাতু, যৌগ, সংকর দিয়ে তিনি ফিলামেন্ট বানাতে লাগলেন। দুই হাজার রকমের তার বানানাে হলাে। একটাও কাজে লাগল । তাঁর সহকারী বলল, আমাদের এত দিনের চেষ্টা পুরােটাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়ে গেল। আমরা কিছুই শিখতে পারলাম না। এডিসন বললেন, আমরা অনেক কিছু শিখেছি। শিখেছি যে দুই হাজার রকমের তার দিয়ে ভালাে বৈদ্যুতিক বাতি হয় না। জীবন কী? একজন শিক্ষক তার ক্লাসরুমে পড়াচ্ছেন। তিনি একটা খালি বয়াম টেবিলের ওপরে রাখলেন। তারপর তার ভেতরে ঢােকালেন কতগুলাে বড় পাথরের টুকরা। বয়ামটা ভরে গেল। তিনি বললেন, ‘ছাত্ররা, দেখাে তাে, আর কোনাে পাথরখণ্ড ঢুকবে কি না?’ ‘না, স্যার। তাহলে বয়ামটা ভরে গেছে, কী বললা?’ ‘জি, স্যার।’ এবার শিক্ষক কতগুলাে ছােট নুড়ি বয়ামটাতে ঢালতে লাগলেন। নুড়িগুলাে পাথরের ফাকে ফাকে ঢুকে গেল। তিনি বললেন, ‘এবার ভরেছে। কী বলাে?’ ‘জি, স্যার।’ তিনি এবার বালু ঢালতে লাগলেন। পাথর আর নুড়ির ফাঁকে ফাঁকে বালু ঢুকতে লাগল এবং বয়ামটাকে পূর্ণ করে তুলল। শিক্ষক বললেন, ‘আচ্ছা, এবার আমরা পুরাে ব্যাপারটাকে উল্টো করে করি। প্রথমেই আমরা যদি বালু দিয়ে বয়ামটা পূর্ণ করে ফেলি, তাহলে কী হবে?’ তিনি বালু দিয়ে পাত্রটা পূর্ণ করলেন। তারপর আর নুড়ি কিংবা পাথর ঢােকানাের জায়গা রইল না। তিনি বললেন, এ থেকে আমরা খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু জিনিস শিখব। এই যে পাত্রটা দেখছ, এটা হলাে আমাদের জীবন। এই যে বড় বড় পাথরখণ্ড, এগুলাে হলাে আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। আমাদের পরিবার, বাবা-
মা, ভাইবােন, স্বামী-স্ত্রী, সন্তান, আমাদের স্বাস্থ্য, আমাদের শিক্ষা। আর নুড়িগুলাে হলাে আমাদের বিষয়সম্পত্তি, আমাদের গাড়ি-বাড়ি, আমাদের টেলিভিশন, আমাদের টেলিফোন, আমাদের বাগান। আর বালু হলাে বাকি সবকিছু, আমাদের জীবনে আর যা যা করতে হয় । প্রথমেই যদি আমরা ছােট ছােট জিনিস দিয়ে জীবনটাকে ভরে ফেলি, তাহলে বড় কাজগুলাে করা হবে না। কাজেই সব সময় পরিবারকে সময় দেবে, বাবা-মায়ের যত্ন নেবে, নিজের স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখবে, লেখাপড়া করবে। তারপর গাড়ি-বাড়ি, কম্পিউটার-টেলিফোন এসবের দিকে নজর দেবে।” এক ছেলে দাঁড়িয়ে বলল, “স্যার, বয়ামটা এখনাে ভরেনি। আপনি যদি এর মধ্যে পানি ঢালেন, পানি ভরবে। ঠিক তাই। তিনি পাথরখণ্ড, নুড়ি আর বালুভরা পাত্রটিতে এক কাপ কফি ঢাললেন। কফিটা পাত্রে ঢুকে গেল। ‘এই কফিটা হলাে আনন্দ। মানুষের জন্য কিছু করা । সেবার ব্রত। তুমি যা- ই করাে না কেন, জীবন আনন্দময়। মানুষের জন্য, মানবতার জন্য সর্বদাই কিছু না কিছু করার সময় তুমি বের করতে পারবে । মানুষের উপকারে আসতে পারবে। তাতেও তুমি অনেক আনন্দ পাবে। জীবনটাকে যত আঁটোসাঁটো মনে হােক না কেন, যতই তুমি ব্যস্ত থাকে না কেন, জীবনকে উপভােগ করাে। আর যেন সবচেয়ে ভালােভাবে জীবনটাকে আনন্দপূর্ণ করে তােলা যায়, অপরের মুখে হাসি ফোটানাের মাধ্যমে।