দুর্নীতি ও তার প্রতিকার রচনা

দুর্নীতি ও তার প্রতিকার রচনা

ভূমিকা: বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজের সর্বগ্রাসী আকার ধারণ করেছে এই দুর্নীতি। দুর্নীতি আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজ করছে। যা আমাদের সমাজ এবং দেশকে ধ্বংসের দিকে অগ্রসর করে নিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সময়ে এমন কোন কাজ নেই যেখানে দুর্নীতির কালো থাবা পড়েনি। শিক্ষা এবং চিকিৎসার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ও দুর্নীতি এর কালো থাবা পরিলক্ষিত হয়। সমাজের একদম উঁচু শ্রেণী থেকে  নিচু শ্রেণি পর্যন্ত দুর্নীতির প্রভাব দেখা যায়। রাজনৈতিক সামাজিক সকল খাতেই দুর্নীতি রয়েছে। একটি দেশ পরিচালনা করে থাকে সেই দেশের সরকার । সেই সরকার যদি দুর্নীতি গ্রস্ত হয়ে থাকে তাহলে একটি দেশের উন্নতি কিভাবে সম্ভব? এছাড়াও আইনি খাতে দুর্নীতির প্রভাব ব্যাপকভাবে দেখা যায়। তাহলে মানুষের ন্যায় বিচার কিভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়। দুর্নীতি বর্তমান সমাজে নীতির আরেক নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Read more: দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও তার প্রতিকার রচনা

দুর্নীতির সর্বগ্রাসী কালো থাবা: আমাদের দেশ এবং সমাজের বর্তমান সময়ে দুর্নীতি সর্বগ্রাসী আকার ধারণ করেছে। আমাদের দেশের প্রতিটি ছোট বড় সকল খাতেই দুর্নীতি এবং অনিয়মের বিশাল দৃষ্টান্ত দেখা যায়। যেমন সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করা, অবৈধভাবে জমি দখল, সরকারি সম্পদ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার, সরকারি অর্থ লোপাট ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন ছোট পর্যায়ে দুর্নীতি রয়েছে। বলতে দ্বিধা হলেও সত্য এটাই দুর্যোগ আক্রান্ত জনগণের প্রাপ্য সাধারণ ত্রাণ ও এই দুর্নীতির হাত থেকে রেহাই পায়না। সামান্য দুর্যোগ গ্রস্থ দের জন্য ত্রাণ দান করা হয় এর চাল গম ইত্যাদি এর উপর ও দুর্নীতির প্রভাব পড়েছে। এই সামান্য ত্রাণ ও জনগণের নিকট সঠিক ভাবে পৌঁছায় না। এবং পৌঁছানোর আগেই চুরি হয়ে যায়। বর্তমান সময়ে আরও বড় দুর্নীতির দৃষ্টান্ত রয়েছে সরকারি চাকরি প্রদানের উপর। এখন আর কোনো যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি হলে ও সরকারি চাকরি পাওয়া সম্ভব নয়। কারণ বর্তমান সময়ে সরকারি চাকরি প্রদান করা হয় কে কত বেশি ঘুষ দিতে পারল তার উপরে। আপনি যদি যোগ্যতাসম্পন্ন ও প্রচুর মেধাবী এবং কর্মঠ ব্যক্তি হয়ে থাকেন তবুও আপনি চাকরি পাবেননা। যদি আপনি ঘুষ প্রদান করতে ব্যর্থ হন। তারা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আপনাকে চাকরি পাওয়ার জন্য ব্যর্থ প্রমাণ করবে। এবং একজন অযোগ্য ব্যক্তি কে তার নিকট থেকে অর্থ গ্রহণ করার মাধ্যমে চাকরি প্রদান করবে। সেই ব্যক্তি ভবিষ্যতে দুর্নীতির খাতকে আরো বড় করে তুলবে। এটাই সমাজের মূল চিত্র। এর পরে আসি আইনি খাতে বর্তমান সময়ে আইনি সেক্টরে ও ব্যাপক দুর্নীতি দেখা যায়। শুধুমাত্র টাকার জোরে বড় বড় আসামিরা অন্যায় করে পার পেয়ে যাচ্ছে। ফেঁসে যাচ্ছে নিরপরাধ মানুষ গুলো। এখানে আইন তাদের ন্যায্য বিচার পাওয়ার জন্য কাজ করবে সেখানে এরা অর্থের বিনিময়ে জনগণকে বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত করছে।

Read More >>  বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থান রচনা

শিক্ষাক্ষেত্রে দুর্নীতি: শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড কথাটি আমরা সবাই জানি।  যদি শিক্ষাখাত দুর্নীতি গ্রস্থ হয়ে পড়ে তাহলে একটি সুষ্ঠু এবং শিক্ষিত জাতি গঠন কিভাবে সম্ভব। বর্তমান সময়ে আমাদের শিক্ষা খাতে দুর্নীতির কালো থাবা থেকে রেহাই পায়নি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা খুললেই আমরা দেখতে পাই শিক্ষা খাতের দুর্নীতির কথা। যা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক এবং ভবিষ্যতেও শিক্ষিত প্রজন্ম গঠনে অন্তরায়। আমরা বিভিন্ন পরীক্ষার সময় দেখতে পাই প্রশ্ন পত্র ফাঁস হওয়ার সংবাদ। এখানে সামান্য অর্থের বিনিময় পরীক্ষার প্রশ্ন পরীক্ষার আগেই হাতে পাওয়া যায়। এর ফলে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীদের থেকে দুর্নীতিবাজ শিক্ষার্থীরা এগিয়ে থাকে। এবং একজন মেধাবী শিক্ষার্থী তার লেখাপড়ার উপর মনোযোগ হারিয়ে ফেলে। যার ফলে জাতি হারায় একজন মেধাবী ছাত্র কে। যে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের কর্ণধার হতে পারত। অপরদিকে একজন দুর্নীতিবাজ এবং সাধারণ শিক্ষার্থী মেধাবীর খেতাবে ভূষিত হয়। এবং তার এই দুর্নীতি শুরু হয়ে গেল শিক্ষাজীবন থেকেই। ভবিষ্যৎ জীবনে প্রতিটি কাজে সে জড়িত থাকবে দুর্নীতির সাথে এটাইতো চিরাচরিত নিয়ম।

জাতীয় উন্নতির অন্তরায় দুর্নীতি: একটি দুর্নীতিবাজ জাতি কখনই সফলতা অর্জন করতে পারে না। তারা দেশকে অধঃপতনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। এটা কখনোই দেশের উন্নতির কথা ভাবে না। এরা শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য যেকোনো ধরনের কাজ করতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে। দুর্নীতি এদের নীতি হয়ে দাঁড়ায়। এবং তাদের মধ্যে কোন ভালো-মন্দের ভেদাভেদ থাকে না। এসকল দুর্নীতিবাজ লোকদের জন্য দেশ কখনোই প্রকৃত উন্নয়নের ছোঁয়া পায় না। তারা দেশের উন্নয়নের জন্য কাজের নামে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি তে মত্ত থাকে।এরা দেশের সম্পদ পাচার এবং অর্থ লোপাটের সাথে জড়িত। এবং সমাজের বিভিন্ন ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড এই সকল ব্যক্তির দ্বারা সংঘটিত হয়ে থাকে। এর ফলে সাধারণ জনগণ কখনোই উন্নতির বা উন্নয়নের মুখ দেখতে পারে না। এবং সৃষ্টি হয় দেশে ধনী-গরিবের ভিতরে বিশাল বৈষম্য। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে এক নম্বর দুর্নীতিবাজ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে শুধুমাত্র এদের কারণে।

Read More >>  একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ

দুর্নীতির কালো থাবা দূর করন: দুর্নীতির কালো থাবা থেকে রেহাই পেতে হলে আমাদের অবশ্যই সকলকে সচেতন হতে হবে। একদিকে যেমন আমরা দুর্নীতির সাথে যুক্ত হবো না । ঠিক তেমনি অন্য কাউকে দুর্নীতি করতে দেখলে তাতে বাধা প্রদান করব। একটি দেশের সরকার চাইলে এবং সরকারের সদিচ্ছা থাকলে অবশ্যই দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন করা সম্ভব। কারণ একটু দেশের সকল শক্তির মূলে রয়েছে দেশের সরকার। এ কারণে আমাদের দেশের সরকারকে সোচ্চার হতে হবে এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। যদি এখন এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা সম্ভব না হয় তাহলে কোন ভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া সম্ভব হবে না। আমাদের দেশের সরকার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে বর্তমানে অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এবং বড় বড় দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু দেশকে সম্পূর্ন দূর্নীতিমুক্ত করতে হলে শুধুমাত্র এ সকল ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনলে চলবে না। বরং ছোট বড় সকল দুর্নীতিবাজকে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে অবশ্যই সরকারের পাশে জনগণকে থাকতে হবে।

দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের করণীয়: দুর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের দেশের সরকারের পাশাপাশি সাধারণ জনগণকে সোচ্চার হতে হবে। তাহলেই আমাদের দেশ থেকে দুর্নীতি কে সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব হবে। কারণ শুধুমাত্র সরকারের একার পক্ষে একদিকে যেমন দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়। ঠিক একইভাবে শুধুমাত্র জনগণ কখন দুর্নীতি প্রতিরোধ করতে পারবে না। তাই জনগণ এবং সরকারের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে। এখানে আমাদের সবাইকে অঙ্গীকারবদ্ধ করতে হবে আমরা নিজেরাও দুর্নীতি করব না। এবং অন্যকেও দুর্নীতি করতে দেব না। আমরা যারা এ সকল দুর্নীতির শিকার হয়ে থাকি তাড়া যদি সোচ্চার হই তাহলে আর এসকল দুর্নীতি হবে না। যেমন আমরা কোন  কাজ চাকরির জন্য ঘুষ প্রদান করব না। এবং যদি কেউ এর জন্য ঘুষ দাবি করে তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা করব।

Read More >>  বিজ্ঞান মেলা রচনা

দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা তৈরি: শুধুমাত্র আপনার ব্যক্তিগত ভাবে দুর্নীতিমুক্ত থাকলেই কাজ শেষ হবে না। বরঞ্চ আমাদের অন্যকেও দুর্নীতির থেকে দূরে থাকার জন্য আহবান করতে হবে। এর বিরুদ্ধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। এবং বিভিন্ন ধরনের প্রচার প্রচারণা চালানো উচিত। এছাড়াও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা আরোপ করা উচিত যার ফলে তারাও দুর্নীতি করতে ভয় পায়।

উপসংহার: দুর্নীতি আমাদের দেশকে যেভাবে গ্রাস করছে যদি শীঘ্রই এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হয় তাহলে আমাদের দেশের অধঃপতন নিশ্চিত। আমাদের এখানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। মানুষকে দুর্নীতির ক্ষতিকর দিকগুলো জানাতে হবে এবং যুব সমাজকে সচেতন করতে হবে দুর্নীতির বিষয়ে। তাদের দুর্নীতি প্রতিরোধে এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার সম্ভব হবে এবং সত্যিই আমাদের দেশ সোনার দেশে পরিণত হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *