ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো । ঢাকা ইউনিভার্সিটি সেন্ট্রাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন – ডাকসু (Dhaka University Central Student’s Union – DUCSU) হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সংক্ষিপ্ত নাম। এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৩ – ১৯২৪ শিক্ষাবর্ষে। এবং পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করা হয় এবং এর গঠনতন্ত্র সংশোধনের মাধ্যমে এর নাম করন করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ১৯৫৩ সালে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসু বাংলাদেশের বিভিন্ন সংগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৫২ এর ভাষা আন্দোলনের থেকে শুরু করে ৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রতক্ষ্য ভাবে গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে ডাকসু। এছাড়াও বাংলাদেশের গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে স্বৈরাচার ও সামরিকতন্ত্রের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
ডাকসু নির্বাচন
এর পরিচালনা পরিষদ গঠিত হয় নির্বাচনের মাধ্যমে। ডাকসুর নির্বাচন হওয়ার নিয়ম প্রতি শিক্ষাবর্ষের পর পর হওয়ার কথা রয়েছে এবং এই নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন পরিচালনা পরিষদ গঠিত হয়। এর সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৯ সালে। এবং ২০১৯ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছি দীর্ঘ ২৮ বছর পড়ে এর আগে বহু বছর নির্বাচিত স্থগিত রয়েছিল। ১৯৯০ সালে ডাকসুর নির্বাচন স্থগিত করে দেওয়া হয়। স্থগিত করার প্রধান কারন হলো ক্ষমতাসীন দলের অনিচ্ছা এবং বিভিন্ন অযুহাত। এবং এই অনিচ্ছা বা অজুহাত সৃষ্টির কারন হলো তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল নির্বাচনে জয় লাভ করার ক্ষেত্রে আশাবাদী ছিল না। তারা মনে করেছিল যদি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাহলে ক্ষমতা বিরোধী দলের সমর্থকদের হাতে চলে যাবে। এবং তারা তাদের করায়ত্ত ক্ষমতা ছাড়বেনা বলেই এতো বছর নিবার্চন অনুষ্ঠিত হয় নাই।
তবে ১৯৯০ সালে ডাকসু নির্বাচন স্থগিত করার পূর্বে মোট ৩৬ বার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের। প্রথম বার ডাকসুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯২৪-২৫ সালে। এই নিবার্চনে সম্পাদকের পদ পেয়ে ছিলেন যোগেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত এবং এর পরের বছর নির্বাচিত হন অবনীভূষণ রুদ্র। আতাউর রহমান খান ১৯২৯-৩০ সালে সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন।
২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ প্যানেলের থেকে ভিপি (সহ সভাপতি) নির্বাচিত হন নুরুল হক নূর তিনি এগারো হাজার বাষট্টি ভোট পেয়ে জয়লাভ করেন। এছাড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী জিএস পদ লাভ করে। তিনি মোট দশ হাজার ৪৮৪ ভোটে বিজয়ী হয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও সম্মিলিত শিক্ষার্থী সংসদ মনোনীত প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন এজিএস পদে নির্বাচিত হয়। তার প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৩০১। যা ছিল ডাকসুর ইতিহাসের সর্বোচ্চ প্রাপ্ত ভোট। এর আগে কেউ এতো বিপুল পরিমাণ ভোটে বিজয়ী হয় নাই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর প্রধান কাজ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করা হলে এর পাশাপাশি দেশের সর্বস্তরের জনগণের অধিকার আদায় করার জন্যও তারা সমান ভাবে তৎপর। এছাড়াও দেশে যোগ্য নেতৃত্ব তৈরিতে এর ভূমিকা অনবদ্য। সর্বোপরি গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে এবং তা অক্ষুণ্ণ রাখতে ডাকসু সকল সময় সাহসিকতার সাথে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
সকল রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ গন মনে করেন ডাকসু নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারন ডাকসুর নির্বাচনের মাধ্যমেই আমাদের দেশের সকল প্রান্ত হতে মেধাবী রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব তৈরি হতে পারে। এবং এই নির্বাচন স্থগিত করার অপর নাম হলো দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন কে হুমকির মুখে ফেলা৷ এ কারনে দেশে মেধাবী রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্ব তৈরি করতে হলে অবশ্যই নিয়ম তান্ত্রিক ভাবে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।