অর্থ বা টাকা হচ্ছে লেনদেনের বাহক। কোন কিছু কিনতে হলে বা সেবা গ্রহণ করতে হলে অবশ্যই আপনার কাছে অর্থ থাকতে হবে। নাহলে আপনি সেবা বা পন্য পাবেন না। আর এই কারনে আমাদের সাথে সবসময় টাকা রাখার প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে এই নগদ অর্থ পরিবহন করাটা বেশ ঝুকিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। এই টাকার জন্য আপনি পরতে পারেন যে কোন বিড়ম্বনাতে। এমনকি টাকা হারিয়ে যেতে পারে, চুরি হতে পারে, বা ছিনতাইকারী বা ডাকাতদের হাতে পরে অর্থ হারানোর সাথে সাথে অনেক সময় প্রান হারানোর মত ঘটনাও আমরা প্রায় সময় দেখে থাকি। আর এ কারনে টাকাকে নিরাপদে এবং সহজে পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে ডেবিট কার্ডে, ক্রেডিট কার্ড, মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড ইত্যাদি ব্যাবহার করা হয়। আমরা অনেকেই এ সম্পর্কে জানলেও এগুলোর সঠিক ব্যাবহার ও নামকরনের কারন ও পার্থক্য গুলো সম্পর্কে বেশ তেমন কিছু জানি না।
ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড
আমরা জানি ডেবিট কার্ড বা ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে এমন একটি উপায় যার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লেনদেন করা সম্ভব। এবং মাস্টার কার্ডের মাধ্যমে আপনি বিশ্বের যে কোন প্রান্তের যে কোন ব্যাংকে লেনদেন করতে পারবেন। এই কার্ড গুলো মঞ্জুর করে থাকে ব্যাংক। আপনি আমি যে কেউ চাইলেই ব্যাংকে একটি একাউন্ট করে একটি কার্ড গ্রহন করতে পারি। কিন্তু একাউন্ট ভেদে কার্ডের নাম এবং সেবার ভিন্নতা আমাদের চোখে পড়ে। আজ আমরা এই ডেবিট কার্ড এবং ক্রেডিট কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো। এবং জানবো এই কার্ডের মাধ্যমে কি কি কাজ করা যায় এবং এদের ভিন্নতা সম্পর্কে।
ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কি কি করা যায়- ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে আমরা দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে সরাসরি টাকা ছাড়াই ব্যাংকে জমা টাকার মাধ্যমে লেনদেন সম্পন্ন করতে পারি। এগুলো একটি ডিজিটাল চেকের মত কাজ করে। এটির মাধ্যমে একজনের ব্যাংক একাউন্ট থেকে নেলদেনের ভিত্তিতে অন্য কারো একাউন্টে অর্থ আদান প্রদান করা সম্ভব। এবং এটিএম বুথের মাধ্যমে যেকোন যায়গা থেকে টাকা উত্তোলন করা সম্ভব। তবে এতো কিছু সুবিধা থাকলেও রয়েছে কিছু পার্থক্য।
ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের পার্থক্য কি কি-
১: ডেবিট কার্ড আপনি চাইলেই আপনার যদি একটি ব্যাংক একাউন্ট থাকে আপনার যে ব্যাংকে একাউন্ট সেখান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। এতে কোন অতিরিক্ত ঝামেলা আপনাকে পোহাতে হচ্ছে না। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড গ্রহন করতে হলে আপনার ব্যাংক একাউন্ট থাকা যেমন বাধ্যতা মূলক তেমনি আরো কিছু শর্ত আপনাকে পূরন করতে হবে। এবং বিভিন্ন ডকুমেন্টস ব্যাংকে জমা দিতে হবে।
২: ডেবিট কার্ড দিয়ে লেনদেনের ক্ষেত্রে আপনার লিংক করা ব্যাংক একাউন্ট যত টাকা আছে আপনি শুধু সেই পরিমান টাকাই ব্যাবহার করতে পারবেন। কখনোই এর অতিরিক্ত পরিমান টাকা আপনার লেনদেন করার সুযোগ থাকছে না। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড হচ্ছে এমন একটি উপায় যেখানে আপনার ব্যাংকে টাকা না থাকলেও একটি নির্দিষ্ট পরিমান পর্যন্ত লেনদেন করতে পারবেন। তবে সে টাকা নির্দিষ্ট সময় পরিশোধ করতে হবে আপনাকে।
৩: ব্যাবহারগত এবং বৈশিষ্ট্যগত ভিন্নতার উপর ভিত্তি করে ডেবিট কার্ড কে নগদ কার্ড বা ক্যাশ কার্ড বলা হয়। এবং ক্রেডিট কার্ডকে বলা হয়ে থাকে লোন কার্ড। কারন এটির মাধ্যমে ব্যাবহারকারী লোন নিয়ে লেনদেন করতে পারবেন।
৪: ডেবিট কার্ডে যেহেতু ব্যাংকে টাকা থাকলেই ব্যাবহার করা সম্ভব। টাকা না থাকলে বা যে পরিমার টাকা আছে তার এক পয়সাও বেশি খরচ করার সুযোগ থাকছে না। ক্রেডিট কার্ডে ব্যাংক হতে দেওয়া লিমিটের উপর নির্ভর করে লেনদেন করতে পারে একাউন্টে টাকা না থাকলেও। এবং এই টাকা কখনোই সাথে সাথে আবার ব্যাংকে ফেরত দিতে হবে এমন কোন বাধ্যতা নেই। বরং নির্দিষ্ট সময় তারা বেধে দেয় তার ভিতর পরিশোধ করতে হবে।
৫: ক্রেডিট কার্ডে একোয়াটেড মান্থলি ইনস্টলমেন্ট (EMI) সুবিধা পাওয়া গেলেও ডেবিট কার্ডে ইএমআই সুবিধা পাওয়া যায় না।
৬: একজন ক্রেডিট কার্ড গ্রাহককে জয়নিং, প্রসেসিং ফি, লেট পেমেন্ট ফি, বার্ষিক ফি প্রদান করতে হলেও ডেবিট কার্ড গ্রাহককে কোন প্রসেসিং ফি প্রদান করতে হবে না।
৭: ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের ইনসুরেন্স সুবিধা প্রদান করা হয়। কিন্তু ডেবিট কার্ড গ্রাহক কে কোন ইন্সুইরেন্স সুবিধা প্রদান করা হয় না।
৮: যারা ডেবিট কার্ড ব্যাবহার করেন তাদের কোন ফি বা অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা না লাগলেও ক্রেডিট কার্ড গ্রাহকদের ব্যাবহৃত অর্থের সুদ প্রদান এবং লেইট ফি প্রদান করতে হয় যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে না পারে।
৯: যে কোন ব্যাংকে আপনার একটি সঞ্চয়ী হিসাব বা সেভিংস একাউন্ট থাকলেই আপনি একটি ডেবিট কার্ড পেতে পারেন। তবে ক্রেডিট কার্ড পেতে সেভিংস একাউন্ট থাকা বাধ্যতা মূলক নয়।
১০: ডেবিট কার্ডের জন্য সঞ্চিত টাকার উপর অনেক ব্যাংক সুদ বা মুনাফা প্রদান করে। অপর দিকে ক্রেডিট কার্ড হতে ব্যাবহৃত অর্থের উপর সুদ প্রদান করতে হয় বা নির্দিষ্ট পরিমান ফি প্রদান করতে হয়।
উপরোক্ত আলোচনা হতে ডেবিট কার্ড ও ক্রেডিট কার্ডের সকল পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়। এবং আপনাদের মাঝেরও এই কার্ড সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা পাল্টে গেল।