দোয়া কুনুত (Dua kunut): দিনের শেষে এশার নামাজের মাধ্যমে দিনের নামাজ শেষ হয়। আর এই নামাজেই আমাদের পড়তে হয় ওয়াজিব নামাজ। হ্যাঁ, বিতরের ৩ রাকাত নামাজের কথাই বলছি। আর এই বিতর নামাজেই আমাদের পড়তে হয় একটি দোয়া। আর সবাই আমরা তার সাথে পরিচিত। আজকে দোয়া কুনুত সমন্ধে বিস্তারিত জানব-
বিতরের নামাজে দোয়া কুনুত পড়তেই হবে কি না?
বিতিরের নামাযে দোয়ায়ে কুনুত পড়ার বিধান হুবহু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত বাণিতে হওয়া কোনো ওয়াজিব নয়। বরং কোনো মুসল্লি চাইলে অন্য কোন দোয়াও করতে পারেন এবং হাদিসের শব্দের বাইরে কিছু বাড়তিও বলতে পারেন। এমনকি যদি কুরআনের যেসব আয়াতে দোয়া রয়েছে এমন কিছু আয়াতও পড়েন সেটাও জায়েয আছে।
ইমাম নববী বলেছেন,
‘ জেনে রাখুন অগ্রগণ্য মাযহাব মতে কুনুত এর জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই । তাই যে কোন দোয়া পড়লে এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কোরআনের আয়াত পড়লেও এর উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে । তবে হাদীসে যেটি এসেছে সেটা পড়া উত্তম’
(ইমাম নববীর ‘আল-আযকার, পৃষ্ঠা-৫০)
আপনি দোয়া কুনুত পড়তে চাইলে নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়বেন-
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
اَللَّمُمَّ اِنَّ نَسْتَعِيْنُكَ وَنَسْتَغْفِرُكَ وَنُؤْمِنُ بِكَ وَنَتَوَكَّلُ عَلَيْكَ وَنُثْنِىْ عَلَيْكَ الْخَيْرَ وَنَشْكُرُكَ وَلاَ نَكْفُرُكَ وَنَخْلَعُ وَنَتْرُكُ مَنْ يَّفْجُرُكَ-اَللَّهُمَّ اِيَّاكَ نَعْبُدُ وَلَكَ نُصَلِّىْ وَنَسْجُدُ وَاِلَيْكَ نَسْعَى وَنَحْفِدُ وَنَرْجُوْ رَحْمَتَكَ وَنَخْشَى عَذَابَكَ اِنَّ عَذَابَكَ بِالْكُفَّارِ مُلْحِقٌ
বাংলা উচ্চারণঃ
আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈ’নুকা, ওয়া নাস্তাগ্ফিরুকা, ওয়া নু’’মিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু ‘আলাইকা, ওয়া নুছনী আলাইকাল খাইর। ওয়া নাশ কুরুকা, ওয়ালা নাকফুরুকা, ওয়া নাখলাউ’, ওয়া নাতরুকু মাঁই ইয়াফজুরুকা। আল্লাহুম্মা ইয়্যাকা না’বুদু ওয়া লাকানুসল্লী, ওয়া নাসজুদু, ওয়া ইলাইকা নাস’আ, – ওয়া নাহফিদু, ওয়া নারজু রাহমাতাকা, ওয়া নাখশা – আযাবাকা, ইন্না আযাবাকা বিল কুফ্ফারি মুলহিক্ব।
বাংলা অর্থঃ
হে আল্লাহ! আমরা আপনারই সাহায্য চাই, আপনারই নিকট ক্ষমা চাই ,আপনারই প্রতি ঈমান রাখি, আপনারই উপর ভরসা করি এবং সকল মঙ্গল আপনার দিকে ন্যাস্ত করি । আমরা আপনার কৃতজ্ঞ হয়ে চলি, অকৃতজ্ঞ হই না। হে আল্লাহ! আমরা আপনারই দাসত্ব করি, আপনারই জন্য নামায পড়ি এবং আপনাকেই সিজদাহ করি। আমরা আপনারই দিকে দৌড়াই ও এগিয়ে চলি। আমরা আপনারই রহমত আশা করি এবং আপনার আযাবকে ভয় করি। আর আপনার আযাবতো কাফেরদের জন্যই র্নিধারিত।
দোয়া কুনুত কখন পড়তে হয়?
বিতর নামাজের তৃতীয় রাকাতে দোয়া কুনুত পড়তে হয়। এক্ষেত্রে তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরা বা কিছু আয়াত পাঠের পর হাত উঠিয়ে হাত বেধে দোয়া কুনুত পড়তে হয়।
আরো আছেঃ>> দোয়া মাসুরা
দোয়া কুনুত না পারলে বিতর নামাজে করণীয়ঃ
বিতর নামাযে দুআয়ে কুনুত পড়া অত্যন্ত জরুরি।
সুতরাং আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দুআ কুনূত মুখস্থ করে নিন। আর তার আগে অর্থাৎ দুআ কুনূত মুখস্থ করার আগ পর্যন্ত নিম্নোক্ত দুআটি পড়তে পারেন-
رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنْیَا حَسَنَةً وَّ فِی الْاٰخِرَةِ حَسَنَةً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ
অথবা কয়েকবার أَللّهُمَّ اغْفِرْ لَنَا বা أَسْتَغْفِرُ اللهَ পড়বেন।
(ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৭০; আলমুহীতুল বুরহানী ২/২৭০; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৩৪৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৪২-৪৩; রদ্দুল মুহতার ২/৭)
এর পরিবর্তে সূরা ইখলাছ তিনবার পড়া যাবে কি?
অনেকেই জিজ্ঞেস করেন যে দোয়া কুনুত এর পরিবর্তে সূরা ইখলাস পড়া যায় কি না। এক্ষেত্রে সোজা উত্তর হচ্ছে না। কারণ সূরা ইখলাস ও দোয়া কুনুত এক নয়। কুনুত অর্থ হচ্ছে দোয়া। আর সূরা ইখলাস দোয়া সমন্ধিত সূরা নয়। তাই তা পড়া যাবে না।
এক্ষেত্রে অন্য দোয়া পড়লেও তা জায়েজ হবে। যেমন ইমাম নববী বলেছেন যে,
‘ জেনে রাখুন অগ্রগণ্য মাযহাব মতে কুনুত এর জন্য সুনির্দিষ্ট কোন দোয়া নেই । তাই যে কোন দোয়া পড়লে এর দ্বারা কুনুত হয়ে যাবে এমনকি দোয়া সম্বলিত এক বা একাধিক কোরআনের আয়াত পড়লেও এর উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে যাবে । তবে হাদীসে যেটি এসেছে সেটা পড়া উত্তম।’
(ইমাম নববীর ‘আল-আযকার, পৃষ্ঠা-৫০)’
ভালো কিছু শিখতে পারলাম ।