দুর্নীতি প্রতিরোধ রচনা
ভূমিকা : দূর্নীতি শব্দটা থেকেই আমরা বুঝতে পারি আসলে যেসকল কাজ মানুষের নীতি বহির্ভূত, তাকেই দূর্নীতি বলা হয়ে থাকে। এসকল কাজ আমাদের ব্যাক্তি, সমাজ, দেশ তথ্য ও সমগ্র বিশ্ববাসীর ক্ষতি সাধন করে। আমাদের বাংলাদেশের এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে দূর্নীতি ও অনিয়ম পরিলক্ষিত হয় না। সমাজের উর্ধতন ব্যক্তিবর্গ হতে শুরু করে সাধারণ মানুষ পর্যন্ত দূর্নীতি গ্রস্ত। এবং সবচাইতে দুঃখের বিষয় হলো এই যে যেসকল খাতে দূর্নীতি থাকা একান্তই কাম্য নয় সেখানেও দূর্নীতির করাল গ্রাস পড়েছে। যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা, থেকে শুরু করে মানুষের খাদ্যেও অধিক মুনাফার লোভে ভেজাল দেওয়া হচ্ছে। আমরা সকলেই জানি শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। আর এই মেরুদণ্ড ব্যাতিত কোন জাতিই বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারে না। কিন্তু এই শিক্ষা খাত ও বাদ যায়নি দুর্নীতি থেকে। বর্তমান সময় পরিক্ষার আগেই ফাঁস হয়ে যায় প্রশ্নপত্র এর ফলে প্রকৃত মেধাবী শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ে দূর্নীতিবাজ শিক্ষার্থীদের থেকে। আবার একসময় দেখা যায় এই দূর্নীতির মাধ্যমে তারা রাষ্ট্রের উচু পদে অধিষ্ঠিত হয়। এবং তারা দূর্নীতির সাথে লিপ্ত হয়ে যায়। চিকিৎসা মানুষের মৌলিক অধিকার এবং জীবন বাঁচানোর একমাত্র অবলম্বন। এখানে দূর্নীতির ফলে মানুষ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা হতে বঞ্চিত হচ্ছে। এ কারনেই এখনই সময় দেশের সকল খাতের দূর্নীতি রুখে দাঁড়ানোর। এবং দূর্নীতি প্রতিরোধে সকলের সোচ্চার হবার। দূর্নীতি ছোট হোক বা বড় তাকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলেই এবং দূর্নীতির কুফল সম্পর্কে সকলকে জানানো গেলেই প্রকৃত স্বার্থ সিদ্ধী হবে।
দূর্নীতি প্রতিরোধে আমাদের করনীয়: আমরা সকলেই জানি দূর্নীতি আমাদের কি কি ক্ষতি সাধন করে থাকে। এ কারনেই আমাদের সকলের উচিত দূর্নীতি প্রতিরোধে সকলের সোচ্চার হওয়া। আমরা অনেকেই আছি যারা দূর্নীতির কুফল সম্পর্কে ভাল ভাবে জানলেও এই দূর্নীতি প্রতিরোধে কোন সোচ্চার ভূমিকা পালন করা থেকে দূরে সরে যাই। এবং অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে নিজে পরিস্কার থাকার চেষ্টা করি। এই ধরনের চিন্তা ধারা পরিবর্তনই পারে একটি দূর্নীতি মুক্ত সমাজ তথা দেশ আমাদের উপহার দিতে। আমাদের সকলের উচিত আমাদের সামনে কোন দূর্নীতি হলে তা রুখে দাড়ানো এবং তার প্রতিবাদ করা। তাহলে সমাজ থেকে দূর্নীতি অনেকাংশে কমে আসবে।
দূর্নীতি প্রতিরোধ সরকারের ভূমিকা: একটি দেশকে সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করা হচ্ছে সরকারের দায়িত্ব। এবং এই দায়িত্বের মধ্যে দূর্নীতি দমন ও একটি মূখ্য বিষয়। আর এ কারনেই দূর্নীতি প্রতিরোধে রয়েছে দূর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এই দুদকের কাজ হলো দেশে সংগঠিত হওয়া বিভিন্ন দূর্নীতি নিয়ে তল্লাশি করা এবং এর বিরুদ্ধে সুষ্ঠু বিচার ব্যাবস্থা গড়ে তোলা। এবং আমাদের দেশে দুদক তাদের দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছে। তবুও দূর্নীতি ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না কেন? এই প্রশ্নের উত্তর একথায় দিলে গেলে বাংলায় একটি প্রবাদ আছে, “শর্ষের ভিতর ভূত” এটিই হবে সঠিক উত্তর। তবে কখনোই এই দোষারোপ সবার উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। কারন খারাপের ভিড়ে ভালোর সংখ্যা আজও বেশি। কিন্তু হয়তো তা আমাদের চোখের আড়ালেই পড়ে যায়। এ ছাড়াও দূর্নীতি প্রতিরোধ রয়েছে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যারা নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাচ্ছে তাদের দায়িত্ব। তবে এরা যদি সঠিক ভাবে কাজ করে যায় তবে অবশ্যই দূর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।
দূর্নীতি প্রতিরোধে সামাজিক আন্দোলন গড়ো তোলা: সমাজের প্রতি শিরা উপশিরায় দূর্নীতি ঢুকে পড়েছে। রাজনৈতিক পর্যায়ের থেকে শুরু করে ছোট বড় সকল খাতে দূর্নীতির কালো থাবা ছেয়ে গেছে। তাই এই দূর্নীতির হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ অবিলম্বে গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে এর মাত্র আরো অধিক পরিমাণে বেড়ে যাবে। যা এক সময় আমাদের সকলের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। প্রতিটি ব্যাক্তি পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে পারলেই সমাজ কে দূর্নীতি মুক্ত করা সম্ভব।
দূর্নীতির কুফল: দূর্নীতি হচ্ছে মানব জাতির উন্নয়নের অন্তরায়। একটি দূর্নীতি গ্রস্ত জাতি কখনোই উন্নতি সাধন করতে পারে না। ধীরে ধীরে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। শিক্ষা ক্ষেত্রে দূর্নীতির ফলে যেমন জাতি প্রকৃত শিক্ষা গ্রহন হতে বঞ্চিত হয় তেমনি চিকিৎসা ক্ষেত্রে দূর্নীতির ফলে মানুষ তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। আর এ কারনেই দূর্নীতি দমন করা অতিব গুরুত্বপূর্ন।
উপসংহার: রাতের অন্ধকার পেরিয়ে যেমন সকাল বেলা সূর্যের উদয় ঘটে ঠিক তেমনি খারাপ সময় কাটিয়েও সুদিন আসবে। তবে তা কখনোই আপনা আপনি আসবে না। তাই এই জাতিকে দূর্নীতি মুক্ত করার জন্য আমাদের পরিশ্রম করতে হবে। সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টাই পারে একটি দূর্নীতি মুক্ত সমাজ আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে উপহার দিতে!