একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ নিয়ে এখানে আলোচনা করা হলো । আশাকরি লিখা টা অনেক কাজে আসবে । তাই মনযোগ দিয়ে পড়ার অন্যরোধ রইলো ।
দেশপ্রেম কিঃ
সংস্কৃতে একটি কথা আছে- ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরীয়সী’,অর্থাৎ মা এবং দেশ স্বর্গের থেকেও গৌরবময় এবং মূল্যবান। ভালবাসা বা প্রেম হলো মন থেকে কিছু চাওয়া,যাকে বা যা কিছুকে মানুষ ভালবাসে সর্বদা তার মঙ্গল কামনা করা। আর দেশের প্রতি এই ভালবাসাময় অনুভূতিই হলো দেশপ্রেম। এককথায় দেশের প্রতি নিজের সমস্ত উজাড় করে দিয়ে অনুরাগময় ভালবাসার নামই দেশপ্রেম। পৃথিবীতে যবে থেকেই ভূখন্ডের হিসাব শুরু হয়েছে প্রতিটি মানুষই তবে থেকে কোনো না কোনো দেশের নাগরিক বা বাসিন্দা। মানুষ সাধারণত যে ভূখন্ডে জন্মগ্রহণ করে এবং আলো-বাতাসে বেড়ে উঠে তাকেই তার দেশ বা স্বদেশ হিসেবে গণ্য করা হয়। স্বদেশের আলো বাতাস,মানুষ তথা প্রত্যেকটি উপাদানকে অন্তর থেকে প্রেম করা, উন্নয়নে কাজ করা এবং মানুষের জন্য কাজ করা, দেশের সকল বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশের মঙ্গলে কাজ করাকেই দেশপ্রেম বলে। বলা যেতেই পারে,নিজের সমস্ত ব্যক্তিস্বার্থ ভুলে গিয়ে নিজের দেশের স্বার্থকে সবার ঊর্দ্ধে রেখে সেই স্বার্থ রক্ষার্থে কাজ করাই হলো প্রকৃত দেশপ্রেম।
যুগে যুগে বাংলাদেশের মানুষের দেশপ্রেম আমাদের দেশকে মহিমান্বিত করেছে সমস্ত ক্ষেত্রে,গৌরব অর্জন করেছে আমাদের সোনার বাংলা। সাহিত্য,রাজনীতি সর্বক্ষেত্রেই বাংলার মানুষের দেশপ্রেমের নিদর্শন ফুটে উঠেছে যুগে যুগে। তাইতো কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন,
‘স্বদেশের উপকারে নাই যার মন, কে বলে মানুষ তারে পশু সেই জন ।’
একজন দেশপ্রেমিকের দশটি গুণ :
দেশপ্রেমের যেমন কোনো নির্দিষ্ট ধরণ নেই তেমনই দেশপ্রেমিকের নেই ধরাবাধা কোনো গুণ।প্রতিটা নাগরিকই তার নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজের মতো করে দেশের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ করে থাকেন। তবুও কিছু গুণ সমস্ত দেশপ্রেমিকের মধ্যেই বিদ্যমান থেকে থাকে।যা নিম্নরুপঃ
১. একজন দেশপ্রেমিক সর্বদা নিজের এবং দেশের সমস্ত নাগরিক তথা দেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে সচেষ্ট হয়ে থাকে এবং অন্যের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করেন না।
২. নিজের ফায়দা লুটার জন্যে দেশের কারো কোনো ক্ষতি করেন না।
৩. দেশের সমস্ত আইন-কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন এবং তা মেনে চলেন।
৪. কখনো রাষ্ট্রিয় কোনো সম্পদের অপচয় এবং অযতা ব্যবহার ও ক্ষতি সাধন করেন না।
৫. নিজেকে সুশিক্ষিত এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে সর্বদা সচেষ্ট থাকেন এবং নিজের দায়িত্ব পালনে পিছপা হন না।
৬. রাষ্ট্রের সব নাগরিকের প্রতি সাম্যের দৃষ্টি বজায় রাখেন এবং কখনো পক্ষপাতিত্ব হতে দেন না।
৭. ঘুষ,দূর্ণীতি,নারীদের অসম্মান এসব কাজে বিরত থাকেন এবং সর্বদা এসবের বিরুদ্ধে সচেষ্ট থাকেন।
৮. নিজের দেশের প্রতি সম্মান দেখাতে গিয়ে অন্য দেশের প্রতি ঘৃণা পোষণ করেন না বরং অন্য দেশকে সম্মানের চোখে দেখেন।
৯. দেশের সংকঠ মুহূর্তে সবার আগে এগিয়ে আসেন।
১০. বহির্বিশ্বে নিজের দেশের ভাবমূর্তি উজ্জলের ব্যাপারে সর্বদা সচেষ্ট থাকেন এবং ভাবমূর্তি বজায় রাখতে আপোষহীন ভাবে কাজ করে যান।
প্রকৃত দেশপ্রেমিক কারাঃ
দেশপ্রেম পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা মহৎ গুণের মধ্যে একটি। একটি মানুষ যে পরিবেশে বাস করে,যে দেশের আলো-বাতাসে বেড়ে উঠে নিজের মায়ের মতো সে দেশকেও ভালবাসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সবাই কি আর তা হয়! সবাই দেশের প্রতি ভালবাসা পোষণ করে না। যে মানুষগুলো নিজের থেকে দেশের স্বার্থকে বেশি গুরত্ত্ব দেয় তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক। ঘুষ খায়না,দূর্ণীতি করে না, অযথা দেশের যেকোনো মানুষের সাথে খারাপ আচরণ করে না তথা দেশের সাথে,দেশের মানুষের সাথে বেঈমানী করে না, দেশের কোনো ক্ষতি হয় এমন সমস্ত কাজ থেকেই বিরত থাকেন তারাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক।
শেষ কথাঃ
কথায় আছে ,যার মধ্যে দেশপ্রেম নেই ,সে পশুর চেয়েও অধম। একটি মানুষের কাছে তার দেশ,তার মায়ের ভাষা এবং মা সবথেকে প্রিয়। নবী করিম (সা.) জনগণের উদ্দেশে বলেছেন, ‘প্রত্যেক মানুষের উচিত দেশকে ভালোবাসা। যে লোক দেশকে ভালোবাসে না, সে প্রকৃত ইমানদার নয়।’ তাই আমরা দেশকে ভালবাসবো,দেশের উন্নয়নে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো সোনার বাংলাদেশ হিসেবে।