সুইটি আক্তার ৮ম শ্রেণিতে পড়ে। বয়স ১৩ শেষ হয়ে চৌদ্দে পা রেখেছে। বাবা হাসমত খান বিদেশে গিয়েছে চার বছর হয়েছে। সুইটি তখন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। বাড়ির কাছেই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেই বিদ্যালয় নিয়মিত আশা যাওয়া করতো সুইটি। ইদানীং শহরের চেয়ে গ্রামের স্কুলগুলোতে পড়ালেখার মান ভালো। গ্রামের চেয়ে শহরের অধিকাংশ শিক্ষকরা প্রাইভেট পড়ানো আকর্ষণ থেকেই যায়। ফলে বিদ্যালয়ে তেমন ভালো করে পড়াতে চান না। বাড়তি আয়ের জন্য তারা সম্মানিত পেশাকে জবাই করে দেয়। বাবা চাচার মুখ থেকে শুনেছি। স্বাধীনতা যুদ্ধের কয়েক যুগ পর এতো কাছাকাছি বিদ্যালয় ছিল না। কয়েক গ্রাম বাদ দিয়ে একটি স্কুল। তিন থেকে চার মাইল পায়ে হেঁটে বিদ্যালয়ে আসতে হতো। হাইস্কুল ছিল ৭/৮মাইল দূরে ছিল। বাবা চাচা ফজরের নামাজ পড়ে বিদ্যালয় রওয়ান হতো। বাড়ি ফিরতো মাগরিবের নামাজের কিছু আগে। আজকাল প্রতি গ্রামে স্কুল আছে। প্রাইমারি স্কুলগুলোতে বেশির ভাগ এম.এ পাস শিক্ষক। তাও মেধাবী। শহরের স্কুলে যে মানের শিক্ষক, গ্রামের স্কুলগুলোতে সে মানের শিক্ষক। সুইটির বাবা বিদেশে যাওয়ার পাঁচ মাস পর গ্রাম থাকতে চান নি। শ্বশুর শাশুড়ির বারণ সত্ত্বেও নিজ ইচ্ছায় শহরে বাসা বাড়া করেন। কারণ দেখালেন ছেলে মেয়েদের শহরের স্কুলগুলোতে ভর্তি করাবেন। সেখানে পড়ালেখা ভালো হবে। এছাড়া বিভিন্ন অজুহাতে শহরে ভাসা ভাড়া করেন। সুইটি আক্তার ৪র্থ শ্রেণি থেকেই শহরের এক বিদ্যালয় ভর্তি হয়ে অদ্যাবধি পর্যন্ত পড়ালেখা করছে। এ বছর সে ৮ম শ্রেণিতে পড়ছে। সুইটি ভালো মেয়ে এবং পড়ালেখার প্রতি বেশ মনোযোগী। তবে ইদানীং কেমন জানি হয়ে গেছে। পড়ালেখায় অন্যমনস্ক হয়ে গেছে। ৬ মাস পূর্ব থেকে মার কাছে মোবাইলের আবদার। তার সহপাঠীদের কাছে মোবাইল দেখেছে। মোবাইলে নানা প্রোগ্রাম দেখে এবং মোবাইলে কথা হয় বান্ধবীদের সাথে। বন্ধুদের সাথেও কথা বলে। সঙ্গদোষ থেকেই ছুইটির মোবাইলের প্রতি ঝুঁকে পড়েছে। তাই তার মায়ের কাছে মোবাইল কিনে দেয়ার জন্য কানা ঝালাপালা করছে। অতিষ্ঠ হয়ে গেছে সুইটির মা। সুইটির বাবার কাছে ফোন করে বলে-তোমার মেয়ে মোবাইল কিনে দেয়ার জন্য আমাকে পাগল করে ছাড়ছে।
-আমার একমাত্র মেয়ে। ঠিক আছে আমি আগামীকাল টাকা পাঠাচ্ছি। তুমি ওকে মোবাইল কিনে দাও। সুইটি মা ছুইটিকে দামী মোবাইল কিনে দেয়। মোবাইলের নামটা এই মূহূর্তে উচ্চারণ করতে পারছি না। নামটি আগে শুনেনি। অপরিচিত নাম। তাই মোবাইলের নামটি স্মরণে আসছে না। তবে জানা গেছে এই মোবাইলে মেমোরী আছে, ভিডিও দেখা যায়। ছবিতো তোলা যায়। শুধু তা-ই নয়। যে কোনো স্থান থেকে যে মোবাইলে কথা বলবে তার চলমান ছবিও দেখা যাবে। এই মোবাইলটাকে একটি মিনিও কম্পিউটারও বলা যায়। কম্পিউটারে যেসকল প্রোগ্রাম আছে। এই মোবাইলেও তা আছে। এই জাতীয় মোবাইল ৮ম শ্রেণির ছাত্রী সুইটি হাতে শোভা পাচ্ছে। তিন চারদিন সুইটি তাঁর বান্ধবীর সাথে কথা বলেছে। পাঁচ দিনের মাথায় এক বন্ধু ফোন করে বসে। দুই তিন দিন কথা বলার পর তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কিছু দিন হলো স্কুল থেকে নির্দিষ্ট সময়ের আধা ঘণ্টার পর বাড়ি ফেরে। বাসা থেকে তার মার থেকে এটা ওটা ক্রয় করার কারণ দেখিয়ে বেশি টাকা নেয়। পড়ার টেবিলে বসতে দেখা যায় সুইটিকে। বই সামনে রাখে কিন্তু পড়ালেখা করতে দেখা যায় না। মাথা নিচু করে মোবাইল টিপে। ফেইস বুক চালায়, ইন্টারনেটে নিষিদ্ধ প্রোগ্রামগুলোতে প্রবেশ করে। এতে সুইটি মাথা ঘুরপাক খায়। অন্তরটার মধ্যে মাথার উঁকুনগুলো বসত করে কুটকুট করে কামড়ায়। সুইটি হা-হুতাশ করে। বন্ধুর কাছে মোবাইল করে বার বার। ভালোবাসার কথা বলে। সুইটি এতোটা নিচে চলে গেছে সুইটি মা আন্দাজ করতে পারে না। সব সময় ছুইটির মার মাথায় ধারণাবদ্ধ যে, আমার মেয়ে কচি মেয়ে, সরল মেয়ে, মোবাইলটা কিনে দেয়ার ফলে খুশিতে চঞ্চল হয়ে গেছে। মনে মনে নিজেকে ধন্যবাদ দেয়। সুইটি দাদা আগামীকাল সুইটির বাড়িতে আসবে শীতের পিঠা নিয়ে। তাই আগামীকাল সুইটি স্কুলে যাবে না। বাড়িতে থাকবে। এছাড়া ওর বন্ধু ওদের বাড়ির কাছে বান্ধবী রীনাদের বাড়িতে আসবে। সেখানে আম গাছের নিচে প্রেমালাপ করবে বলে মোবাইলে আগাম জানিয়ে দিয়েছে। সুইটি তার মাকে বলে মা, দাদা আসবে। তাই আজ স্কুলে যাব না। আমি রীনাদের বাড়িতে যাচ্ছি। সুইটি ভুলে মোবাইলটা রেখে গেছে। আজই তার এই ভুলটা হয়েছে। স্কুলে ব্যাগে করে মোবাইল নিয়ে যেতো। সুযোগ পেলে স্কুলের শিক্ষকদের চোখে ফাঁকি দিয়ে মোবাইল চালায়। স্কুল সময়কালীন মোবাইলের কলের শব্দ কমিয়ে রাখে। সকাল ১০ টার দিকেই সুইটি দাদা এসেছে। ছুইটির রুমে বসেছে দাদা। হঠাৎ উচ্চশব্দে মোবাইল ফোন বেজে ওঠে। ছুইটির দাদা বলছে, বৌমা মোবাইল ফোন রিসিভ করো। হয়তো সুইটির বাবা ফোন করেছে। সুইটি বাবা আমার মোবাইলে ফোন করে সুইটি মোবাইলে ফোন করে না। যাহোক যে-ই করেছে তুমি ধরো। সুইটির মা মোবাইল রিসিভ করে। সালাম কচি স্বরে বলছে, তুমি আমার প্রাণের প্রাণ, তুমি আমার মনের পাখি, তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। আনবো তোমার বিয়ে করে আমার ঘরে। তুমি আসছ না কেন। আমিতো এসে গেছি আম গাছটার নিচে। আজ তোমাকে বুকে জড়িয়ে ধরবো। সুইটি মা উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে বলে তুই কে? শালার পুত। মুহূর্তের মধ্যে মোবাইল ফোন বন্ধ হয়ে যায়। সুইটি দাদা বলে, কে ফোন করেছে? কাকে ধমকাচ্ছ? সুইটি মা বলে, আব্বাজান সুইটি আজ স্কুলে যাইনি। আপনি আসবেন তাই। ঘরে থাকার কথা। ওকে দেখছি না। আপনি কষ্ট করে রীনাদের বাড়ির আম গাছটার নিচে যানতো। সুইটি দাদা পৌছে যায় রীণাদের আম গাছটার নিচে। সে দেখতে পায় সুইটি এক বখাটে প্রকৃতির ছেলের সাথে। ফিরে যায় ছুইটির দাদা। ছুইটির মা বলে-আব্বাজান ছুইটিকে আনে নি সাথে করে। -আমি ওর কাছে যাইনি। ছুইটির সাথে একটি ছেলেকে দেখতে পেলাম। ওরা দু’জনে কোলাকুলি করছে। সুইটি মা রেগে বেগে চোখ লাল করে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের মতো হুংকার ছেড়ে বলল, কি! আমি ওখানে যাচ্ছি এখন।
Collected from: Facebook