এশার নামাজ কয় রাকাত ? আসুন জেনে নেয়া যাক । এশার নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের শেষ নামাজ। এই নামাজ নিয়মিতভাবে আদায় করলে নিদ্রায় পরিতৃপ্তি আসে। ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে এশার রাকাত সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এবং এই নামাজের রাকাতের সংখ্যা নিয়ে সাধারণ মুসল্লীদের মধ্যে গড়মিলও অনেক বেশি। আর এই সমস্যা দূর করার জন্য আজকের এই আর্টিকেলে এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা উল্লেখ করা হলো। এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে শেষ অব্দি পড়ুন।
এশার নামাজ কয় রাকাত :
এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন অভিমত লক্ষ্য করা যায়। নীচে ধারাবাহিকভাবে এশার নামাজের রাকাত সংখ্যাঃ
৪ রাকাত সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা বা যায়েদাঃ
এই ৪ রাকাত ফরজ নামাজের আগে পড়তে হয়। তবে এটার বাধ্যবাধকতা নেই। রাসূল (সাঃ) গাইরে মুয়াক্কাদা মাঝে মধ্যে পড়েছেন, আবার পড়েন নি। সুতরাং তাড়াহুড়ো থাকলে এই নামাজের অবকাশ রয়েছে। আপনি পড়লে সওয়াব পাবেন না পড়লে গুনাহগার হওয়ার ভয় নেই।
৪ রাকাত ফরজঃ এই ৪ রাকাত ফরজ পড়তেই হবে। না পড়লে মুসলিমের মুসলিমত্ব শেষ হয়ে যায়।
২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদাঃ ফরজ নামাজের পরে ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা পড়তে হয়। সুন্নতে মুয়াক্কাদা রাসূল (সাঃ) সর্বদাই আদায় করতেন। কোনো অবস্থাতেই ছেড়ে দিতেন না।
২ রাকাত নফলঃ নফল নামাজ নিয়েও এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হয়। নফল নামাজ হলো অতিরিক্ত নামাজ। আল্লাহকে খুশি করার জন্য এ-ই নামাজ পড়া হয়। এই নামাজ ফরজ নামাজের মতো আবশ্যকীয় নয়। আপনি যত পড়বেন তত সওয়াব পাবেন। যেমন; বাঙ্গালী একটা প্রবাদ আছে, যত গুড় দিবেন তত মিষ্টি হবে। সে হিসেবে আপনি নফল নামাজ ২ অথবা ৪ রাকাতও পড়তে পারেন।
১/৩/৫/৭ রাকাত বিতরঃ এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে সবচেয়ে বেশি ঝামেলাটা বাঁধে বিতরের নামাজ নিয়ে। আসলে বিতর শব্দের অর্থ বিজোড়। হাদীসে এসেছে আল্লাহ বিতর অর্থাৎ বিজোড়। তিনি বিজোড়কে ভালোবাসেন। তাই বিতরের নামাজ বিজোড় সংখ্যায় পড়তে হয়। বিতর নামাজ এশার নামাজের সাথে সম্পৃক্ত নয়। রাতের শেষ ভাগে তাহাজ্জুদের পরে বিতর নামাজ পড়া উত্তম।
বিতরের নামাজ নিয়ে মাজহাবের মাঝে বেশ ভালো মতানৈক্য আছে। হানাফী মাজহাবের মতে, বিতর নামাজ ৩ রাকাত। মুহাম্মাদী মাজহাবের মতে, বিতরের নামাজ ১ রাকাত।
তবে ১ থেকে ১১ এর মধ্যে বিজোড় সংখ্যায় বিতরের নামাজ পড়া যায়। রাসূল (সাঃ) ১ থেকে ১১ এর মাঝে বিজোড় সংখ্যায় বিতরের নামাজ পড়তেন তবে ১৩ রাকাতও পড়তেন কিন্তু এই হাদীসের সনদের তথা হাদীসের বর্ণনাকারীদের নামের স্তরের দূর্বলতা আছে। বিতরের নামাজের রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) বলেন,
“কেউ যদি ১ রাকাত বিতরের নামাজ পড়ার ইচ্ছে করে, পড়তে পারে। কেউ ৩ রাকাত পড়তে চাইলে, সে পড়তে পারে। আবার কেউ ৫ রাকাত পড়তে চাইলে, সে পড়তে পারে।” (আবু দাউদঃ১৪২২; নাসাঈঃ ১৭১২)
সুতরাং এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে বলা যায়, নফল ও বিতরের নামাজের মতামতের প্রেক্ষিতে এশার নামাজ ১৫ অথবা ১৭ রাকাত আবার কেউ কেউ ১৯ ও ২১ রাকাত পর্যন্তও পড়ে।
কয় রাকাত নামাজ পড়তেই হবেঃ
ফরজের পূর্বে ৪ রাকাত সুন্নতে গায়রে মুয়াক্কাদা হওয়ায় এই কয় রাকাত না পড়লেও হয় কিন্তু ৪ রাকাত ফরজ, ফরজের পরে ২ রাকাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা ও সবশেষে ইচ্ছে অনুযায়ী বিতরের ১/৩/৫/৭ রাকাত নামাজ পড়তে হবে। অর্থাৎ হানাফী হলে মোট ৯ রাকাত, মুহাম্মাদী হলে ৭ রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে।
আশা করছি এই আর্টিকেল পড়ার মাধ্যমে এশার নামাজের রাকাত সংখ্যা নিয়ে সমস্ত দ্বিধা দূর হয়ে গেছে। লেখাটা ভালো লাগলে আপনার প্রিয় বন্ধুদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে তাদেরও সংশয় দূর করুন।