ফজরের নামাজের সময় নিয়ত নিয়ম এবং ফযিলত নিয়ে সম্পূর্ণ আলোচনা করা হলো এখানে ।
ইসলামের ৫ টি স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নামাজ । নামাজের মধ্যেই মুমিনরা খুঁজে পায় মুক্তির পথ এবং শান্তি । আল্লাহ প্রত্যেক মুসলমানের জন্য দৈনিক ৫ ওয়াক্ত নামায ফরয করেছেন । প্রত্যেক ওয়াক্ত নামাজের সমান গুরুত্ব থাকলেও ফজর এবং মাগরিবের নামাযের আলাদা তাৎপর্য রয়েছে । এই টপিকসে আমরা জানবো ফজরের নামাজের সময় , নিয়ত , নিয়ম এবং ফযীলত ।
ফজরের নামাজের সময় :
সব নামাজেরই একটি নির্দিষ্ট ওয়াক্ত ( অর্থাৎ নামাজের সময় ) থাকে । এই নির্দিষ্ট ওয়াক্তের মধ্যেই নামাজ আদায় করতে হয় । নাহয় নামায কাযা হয়ে যায় । ফজরের নামাজের ওয়াক্ত হচ্ছে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত । সূর্যোদয়ের আগে আকাশে সূর্যোদয়ের লাল আভা দেখা যায় । এই লাল আভা দেখা যাওয়ার সময়টিকেই সুবহে সাদিক বলে । ফজরের নামাজের সময় খুবই অল্প । আনুমানিক পঁয়তাল্লিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টা যাবত ফজরের ওয়াক্ত স্থায়ী হয় ।
ফজরের নামাজের নিয়ত :
ফজরের সালাত চার রাকাত । এর মধ্যে দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ ।
যদি আপনি নিয়ত সম্পর্কে সঠিক নির্দেশনা দিতে চান তাহলে আপনার এটা জানা প্রয়োজন আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজের জন্য কোন নির্দিষ্ট নিয়ত বলে যাননি । তবে বর্তমানে বেশ কিছু আলেম-ওলামাগণ সবাইকে নিয়োগ করার সুবিধার্থে কিছু বাক্য শিখিয়ে দেন। তবে সবথেকে উত্তম হচ্ছে নিজের মনের মধ্যে আল্লাহকে খুশি করার উদ্দেশ্যে রেখে নামাজ আদায় করা।
ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত: নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজজিহান্ ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত: নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকয়াতাই সালাতিল ফাজরি, সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআলা মুতাওয়াজজিহান্ ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
ফজরের নামাজের নিয়ম:
ফজরের নামাজে প্রথমে দুই রাকাত সুন্নত নামায আদায় করতে হয় । এবং তার পর দুই রাকাত ফরজ নামাজ পড়তে হয় ।
ফজরের দুই হাত সুন্নত নামাজের নিয়ম:
ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ম
ফজরের নামাজ সাধারণ দুই রাকাত নামাজ এর মতই ।
প্রথমে ফজরের সুন্নত নামাজের জন্য নিয়ত করে নিতে হবে ।
এরপর তাকবীরে তাহরীমা অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করতে হবে ।
• নামাজের শুরুতে ছানা পড়তে হয় ।
• তারপর সূরা ফাতিহা কেরাত করতে হয় ।
• এরপর সূরা ফাতিহার সাথে আরো সূরা পড়তে হয় তবে যেকোনো সূরা পাঠ করা যাবে অর্থাৎ কোনো নির্দিষ্ট সূরা পড়তে হবে এমন নিয়ম নেই ।
• তারপর রুকু করতে হয় ।
• রুকুতে তিনবার সুবাহানাল্লাহ রাব্বিয়াল আজিম পড়তে হবে ।
• এরপর সিজদায় যেতে হবে , সিজদায় সুবহানা রাব্বিয়াল আলা পড়তে হবে বিজোড় সংখ্যকবার । অর্থাৎ তিনবার, পাঁচবার এবং সাতবার পড়া যাবে ।
• এবং দুই সিজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ হয় ।
• এরপর দ্বিতীয় রাকাতের নিয়মও প্রথম রাকাতের মতোই । তবে এই রাকাতের শুরুতে ছানা পড়তে হবে না ।
•দ্বিতীয় রাকাতের শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দোয়া মাসুরা ও দরুদ শরীফ পাঠ করতে হবে । তারপর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে ।
ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ম:
ফজরের দুই রাকাত ফরজ নামাজ এর নিয়ম দুই রাকাত সুন্নত নামাজের মতোই । তবে নামাজের নিয়তি ভিন্নতা আসবে ।
তবে বিস্তারিত নিয়ম ও সঠিক সালাত শিক্ষা অর্জনের জন্য আলেমদের কাছ থেকে জানা উচিত ।
ফজরের সালাতের ফজিলত:
ফজরের নামাজের সবথেকে বড় ফযীলত হচ্ছে এটি মুনাফিক এবং মুমিনদের মধ্যে পার্থক্য গড়ে দেয় । অর্থাৎ মুনাফিকদের জন্য ফজরের সালাত আদায় করা কষ্টদায়ক ।
তাছাড়া আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন , ফজরের সালাত আদায়কারী ব্যক্তি সারাদিন আল্লাহর দায়িত্বে থাকে ।
রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, ফজরের সালাত আদায় কারী ব্যক্তির জন্য ফেরেশতারা আল্লাহর নিকট ভালো মানুষ হিসেবে সাক্ষী দিবে।
তাছাড়া ফজরের সালাত জামাতের সঙ্গে আদায় করলে সারারাত দাঁড়িয়ে নফল নামাজ আদায় করার সওয়াব পাওয়া যায় ।
হাদীসে আরো আছে যে , ফজরের সালাত আদায়কারী ব্যক্তি কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না অর্থাৎ বোঝায় যাচ্ছে ফজরের সালাতের গুরুত্ব কতটুকু ।