ঘুঘু পাখি ক্রয় বিক্রয়

ঘুঘু পাখি ক্রয় বিক্রয় । বাংলাদেশের অতি পরিচিত পাখি হচ্ছে ঘুঘু। এদেশের বন জঙ্গলে বা লোকালয়ে ও প্রায়ই এই ঘুঘু পাখি দেখা যায়। এবং এরা অন্য পাখির মত এরা লোক চক্ষু এড়িয়ে চলে না। বিভিন্ন সময় ঘুঘু পাখি লোকালয়ে দেখা যায়। ঘুঘু এবং কবুতর সমগোত্রীয় পাখি। Streptopelia chinensis হচ্ছে ঘুঘুর বৈজ্ঞানিক নাম। এটি কলাম্বিডি গোত্রের বা পরিবারের এবং স্ট্রেপ্টোপেলিয়া গনের একটি পাখি। ঘুঘু এবং পায়রা দুটোই হচ্ছে সমগোত্রীয় এ কারনে এদের মধ্যে অনেক মিল লক্ষ করা যায়। তবে পার্থক্য হলো কবুতর বা পায়রা হাস মুরগির মতই পোষা যায় কিন্তু ঘুঘু (Dove) হচ্ছে বন্য পাখি।

ঘুঘু পাখি ক্রয় বিক্রয় :

ঘুঘু পাখি দেখতে খুবই সুন্দর নিঃসন্দেহে বলা যায়। সারা পৃথিবীতে মোট ছত্রিশ প্রজাতির ঘুঘু পাখি রয়েছে। এবং বাংলাদেশে ছয় প্রজাতির ঘুঘু পাখি দেখতে পাওয়া গেলেও সবচেয়ে বেশি যে প্রজাতি টি চোখে পড়ে সেটি হলো তিলা ঘুঘু। যার ইংরেজি নাম স্পটেড ডাভ (Spotted dove). এর রং ধূসর বর্নের এবং ঘাড়ের পিছন সাইডের নিচের দিকটা কালো সাদা তিলার মতো। এবং লেজ ও পাখা পিতাভ তিলা যুক্ত বাদামী রংয়ের।

আমাদের দেশে সবচাইতে বেশি দেখা যায় তিলা ঘুঘু এক সময় বনে বাদারে মাঠে ঘাটে প্রচুর পরিমাণ এই তিলা ঘুঘু পাখি দেখা গেলেও বর্তমানে আগেকার মত দেখা যায় না। এর প্রধান কারন কিছু বর্বর মানুষ। কারন এরা বিভিন্ন ভাবে এবং ফাঁদ পাতার মাধ্যমে এই সুন্দর পাখিটি নির্বিচারে হত্যা করছে। আমাদের দেশে পাখি নিধন রোধে আইন থাকলেও হরহামেশাই পাখি শিকার হয়ে থাকে। এবং অনেকেই এই প্রকৃতির সম্পদ পাখি শিকারের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এবং বিষয়টি দুঃখজনক হলেও একটি আশ্চর্য বিষয় হলো ঘুঘু পাখি দিয়েই ঘুঘু পাখি শিকার করতে দেখা যায় গ্রামাঞ্চলে। যা অন্য কোন পাখি শিকারের মাধ্যম হিসেবে দেখা যায় না।

ঘুঘুর বাসস্থান হলো বাশ বা গাছের ডালে। তবে এর কিছু প্রজাতি মাটিতেও বাসা তৈরি করে। ছোট ছোট ডাল ও পাতার মাধ্যমে তৈরি করে বাসা। এরা সুনিপুণ ভাবে বাসা নির্মাণ করে এবং সেই বাসায় ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। এপ্রিল-জুলাই হলো ঘুঘুর প্রজনন মৌসুম। একটি ঘুঘু এক থেকে দুইটি ডিম পারে। এবং ১৩ দিনে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। পুরুষ ও মহিলা ঘুঘু উভয়ই ডিমে তা দেয় বাচ্চা ফোটার জন্য। এই ঘুঘু পাখির ক্ষেত্রে সবচাইতে অবাক করা বিষয় হলো বাচ্চারা মা ঘুঘুর দুগ্ধ পান করে। যা অন্য কোন পাখির মধ্যে দেখা যায় না। আর এই বৈশিষ্ট্যের কারনেই এই পাখিটি আলাদা পরিচিতি লাভ করেছে। এই পাখির বাচ্চারা ৭-৮ দিন বয়স হলেই উড়তে শিখে যায় এবং একবার উড়তে শিখলে এরা বাসা পরিত্যাগ করে চলে যায়।

এই ঘুঘু পাখিরা মূলত বিভিন্ন ধরনের শস্য দানা খেয়ে থাকে। এ কারনে শস্য ক্ষেতে প্রায় সময় ঘুঘু পাখির আনা গোনা দেখা যায়। এরা ফসলের মাঠ ঘুরে ঘুরে খাদ্য সংগ্রহ করে। শস্য দানা এদের পছন্দের খাদ্য হলেও এরা বিভিন্ন ধরনের ফল মূল এবং পোকা মাকড় খেয়ে থাকে। এরা যখন ছায়া পড়ে রোদ থাকে না তখন খাদ্য সংগ্রহ করতে বের হয়। এ কারনেই বিকাল বেলা বেশি ঘুঘু পাখির দেখা মিলে। খাদ্য সংগ্রহ বাদে বাকি সময় এরা গাছের ডালে বসে সময় অতিবাহিত করে থাকে।

অনেকেই শখের বসে বাড়িতে খাঁচায় ঘুঘু পালন করে। এবং পালিত ঘুঘু খুব সহজে পোষ মানানো সম্ভব। কিন্তু পাখি সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী এই ঘুঘু পাখি গুলো খাঁচায় পালন করা দন্ডনীয় অপরাধ। কিন্ত আমাদের দেশে অনেকেই বিদেশি প্রজাতির ঘুঘু পাখি পালন করে থাকে। এবং এসকল প্রজাতির ঘুঘু পালন করায় কোন সরকারি নিষেধাজ্ঞা নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *