ঘুমানোর দোয়া : সারাদিনের ক্লান্তি শেষে ঘুম হলো এক প্রশান্তির নাম। তাই তো মহান আল্লাহ তায়াল সূরা আন-নাবার ৯ নাম্বার আয়াতে বলেন,
‘তোমাদের জন্য নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী।’
মস্তিষ্কের যতসব চিন্তা সব শেষে হয়ে যায় এক প্রশান্তির ঘুমের পর। একজন মুমিনের জন্য এই ঘুমও কিন্তু হতে পারে একপ্রকার ইবাদত। কিভাবে?
তার নির্দেশনা রাসুলে পাক(সঃ) তার হাদিসে বর্ণনা করে গিয়েছেন।
১. ঘুমাতে যাওয়ার আগে যে দোয়া পড়তে হয়ঃ
মানবতার মুক্তির দূত মুহাম্মদ(সঃ) বলে গিয়েছেন যা তার মর্মার্থ হলো,
১. শোয়ার আগে বিছানাটাকে ঝাড়া।
২. ডান কাধ হয়ে শোয়া।
৩. অতঃপর নিচের দোয়াটি পড়া,
আরো দেখুনঃ দোয়া মাসুরা
আল্লাহুম্মা আস্লামতু নাফ্সী ইলাইকা ওয়া ওয়াজ্জাহ্তু ওয়াজহী ইলাইকা ওয়া ফাউওয়ায্তু আমরী ইলাইকা ওয়ালজা’তু যাহরী ইলাইকা রাগ্বাতা ওয়া রাহবাতান ইলাইকা লা মালজা’আ মিনকা ওয়া লা মানজা’আ মিনকা ইল্লা ইলাইকা আ-মানতু বিকাতা-বিকা। আল্লাজি আনঝালতা ওয়া বি নাবিয়্যিকাল্লাযী আরসালাত।
বাংলা অর্থঃ
হে আল্লাহ! আমি নিজেকে আপনারর নিকট সমর্পণ করলাম, আপনার দিকেই মুখ ফিরালাম, আমার কাজ আপনার প্রতি ন্যস্ত করলাম এবং আপনার প্রতি ভয় ও আগ্রহ নিয়ে আপনার আশ্রয় গ্রহণ করলাম। আপনি ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল ও নাজাতের স্থান নেই। আপনার পাঠানো আল-কুরআনের প্রতি ঈমান আনলাম এবং আপনার প্রেরিত রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ঈমান আনায়ন করলাম। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরিফ)
হাদিসে এসেছে যে, রাসুল (সঃ) যখন রাতে ঘুমানোর জন্য বিছানায় যেতেন, তখন নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করতেন-
আরবিঃ اَللَّهُمَّ بِاسْمِكَ أَمُوتُ وَأَحْيَا
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমুতু ওয়া আহইয়া।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! তোমার নামেই মৃত্যুবরণ করছি এবং তোমার অনুগ্রহে জীবিত হব। ( সহীহ বুখারি শরিফ)
অপর এক হাদিসে এসেছে যে রাসুল(সঃ) শোয়ার সময় যখন ডান হাত গালের নিচে দেয়ার পর নিচের দোয়াটি পড়তেন-
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা ক্বিনী আ’যা-বাকা ইয়াওমা তাব’আছু ই’বা-দাকা।
বাংলা অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আপনার আজাব হতে আমাকে রক্ষা কর, যেদিন আপনি আপনার বান্দাদেরকে কবর হতে উত্থিত করবেন। ( তিরমিজি শরিফ)
২. ঘুমানোর দোয়া : ঘুম না আসলে যে দোয়া পড়তে হয়ঃ
মাঝে মাঝে এমন পরিলক্ষিত হয় যে ঘুম আসতে চায় না। এমতাবস্থায় অনেকে করণীয় ভুলে যান।
এক্ষেত্রে তাকাতে পারি রাসুল(সঃ) এর সেই হাদিস এর দিকে,
বুরায়দা (রা.) হতে বর্ণিত, একদা এক সাহাবী খালিদ ইবন ওয়ালিদ আল-মাখজুমি (রা.) রাসুল (সা.)-এর নিকটে এসে এই অভিযোগ করেন,
‘হে আল্লাহর রাসুল! অনিদ্রা রোগের কারণে আমি ঘুমাতে পারি না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, যখন তোমরা শয্যাগ্রহণ করবে তখন বলবে-
আল্লাহুম্মা রাব্বাস সামাওয়াতিস সাবয়ি ওয়া মা আজাল্লাত, ওয়া রাব্বাল আরদিনা ওয়া মা আকাল্লাত; ওয়া রাব্বাশ শায়াত্বিনি ওয়া মা আদাল্লাত; কুন লি জারাং-মিন শাররি খালক্বিকা কুল্লিহিম জামিআ। আইঁ ইয়াফরুত্বা আলাইয়্যা আহাদুম মিনহুম, আও আইঁ ইয়াবগিয়া আলাইয়্যা; আজ্জা ওয়া জাল্লা, ছানাউকা ওয়ালা ইলাহা গাইরুকা, ওয়ালা ইলাহা ইল্লা আংতা।
অর্থ: হে আল্লাহ! সাত আসমান এবং যা কিছুর উপর তা ছায়া দিয়ে আছে সে সব কিছুর রব! জমিনগুলো এবং যা কিছু তা বহন করে চলেছে সে সবের প্রতিপালক! শয়তান ও যাদের সে গুমরাহ করে তাদের প্রতিপালক! আপনার সকল সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আপনি আমার আশ্রয় হোন, এদের কেউ যেন আমার উপর কর্তৃত্ব চালাতে বা বিরুদ্ধাচরণ করতে না পারে। হে সম্মানিত, তোমার আশ্রয়প্রার্থী, মহামান্বিত আপনার প্রশংসা, আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, আপনি ব্যাতীত কোনো ইলাহ নেই। (আল-কালিমুত তাইয়্যিব : ৪৭/৩৩; মিশকাত, হাদিস : ২৪১১, তিরমিজি, হাদিস : ৩৫২৩)
৩. ঘুমানোর জন্য দরকারী অন্যান্য দোয়া ও দরূদঃ
এছাড়াও হাদিস শরিফে আরও কিছু সুন্নত পাওয়া যায়। তার মধ্যে রয়েছে,
রাসুল (সঃ) বলেছেন,
যে ব্যক্তি ঘুমানোর সময় সূরা বাকারার সর্বশেষ দুটো আয়াত তিলাওয়াত করবে, তাই তার জন্য যথেষ্ট হবে। ( সহীহ বুখারি)
এছাড়াও যে ব্যক্তি আয়াতুল কুরসি পাঠ করে ঘুমায় আল্লাহ তার জন্য একজন পাহারাদার নিযুক্ত করে দেয়। ফলে শয়তান তার নিকট আসতে পারে না। ( সহিহ বুখারী)
সূরা নাস, সূরা ফালাক পড়ার জন্য রাসুল(সঃ) তার উম্মতদেরকে উৎসাহীত করে গিয়েছেন।
একটি হাদিস বর্ণিত আছে এমন যে, একদা হযরত ফাতিমা(রা.) এর হাতে কাজ করতে করতে ফোসকা পড়ে যায়। তারপর তিনি রাসুল(সাঃ) এর নিকটে গিয়ে দাসী প্রাপ্তির আশা করলে রাসুল(সঃ) তাকে ফিরিয়ে দেন। আলী(র.) এর ক্ষেত্রেও এমনটি হয়। এরপর রাসুল(সঃ) তাদের বাড়িতে এসে বলেন, ‘ আমি কি তোমাদের এমন কিছু শিখিয়ে দিব যা দাসী এর চেয়েও উত্তম।’
তারা উত্তরে বললেন, ‘ জি শিখিয়ে দিন।’
অতঃপর রাসুল(সাঃ) বললেন, তোমরা যদি রাতে ৩৩ বার সুবাহানাল্লাহ, ৩৩ আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ আল্লাহু আকবর পাঠ করো তাহলে কোনো দাসী প্রয়োজন হবে না।
এতে করে বুঝা যায় উক্ত জিনিসগুলো পাঠ করলে মানুষের মাঝে এক শক্তি চলে আসে। এতে করে কাজ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়।
৪. ঘুম থেকে উঠে যে দোয়া পড়তে হয়ঃ
ঘুম থেকে উঠার পরে নিম্নোক্ত দোয়া পড়া উচিতঃ
রাসুল(সঃ) শুধু যে ঘুমানোর সময়ই দোয়া পড়তেন এমনটা নয়। তিনি ঘুম থেকে উঠেও দোয়া পড়তে ভুলতেন না। হাদিসেভেসেছে রাসুল(সঃ) ঘুম থেকে উঠে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে বলেছেন।
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَمَا أَمَاتَنَا ، وَإِلَيْهِ النُّشُورُ
উচ্চারণ : আলহামদু লিল্লা-হিল্লাযী আহ্ইয়া-না- বা‘দা মা- আমা-তানা- ওয়া ইলাইহিন্ নুশূর।
অর্থ: প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি (নিদ্রারূপ) মৃত্যুর পর আমাদেরকে জীবিত করলেন, আর তারই নিকট সকলের পুনরুত্থান। ( সাহিহ মুসলিমঃ ২৭১১)
পরিশেষে একটি জিনিস স্মরণ করিয়ে দিতে চাই তা হলো একজন মুমিন এর দিন শুরু কিন্তু রাত থেকেই হয়। কেননা রাতে যদি সে প্রস্তুতি না নিতে পারে তবে দিনে কিছু করার সামর্থ্য অর্জন করতে পারবে না। এছাড়াও রাতই হলো হাজারো কজের শেষে প্রশান্তির জায়গা।