আদার উপকারিতা ও গুণাবলী: আদা রান্নার কাজে ব্যাবহৃত একটি অন্যতম মসলা জাতীয় উপাদান। রান্নার কাজে বহুল ব্যাবহৃত এই আদা শুধু মাত্র স্বাদ বর্ধক হিসেবেই কাজ করে না।বরংচ আদার পুষ্টি গুণ ও উপকারিতাও কম নেই।এর রয়েছে ভেষজ ঔষধি গুন।প্রাচিন কাল থেকেই আদা বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যাবহার হচ্ছে। জ্বর সর্দি কাশির ঘরোয়া চিকিৎসার জন্য আদার রসের উপকারিতা প্রশংসিত। তবে আদা কাঁচা অবস্থায় বেশি উপকারী।আসুন জেনে নেই আদায় কোন কোন পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ গুলো বিদ্যমান।এবং এর উপকারিতা গুলো বর্ণনা করা হলো।
আদার পুষ্টি উপাদান গুলো হলো:
প্রতি পরিমাণ ১০০ গ্রাম আদায় রয়েছে ৭৯ কিলো ক্যালরি (kcal)। এছাড়াও রয়েছে লিপিড ০.৮ গ্রাম, সোডিয়াম ১৩ মাইক্রো গ্রাম, পটাশিয়াম ৪১৫ মাইক্রোগ্রাম, শর্করা ১৮ গ্রাম, তন্তু ২ গ্রাম, চিনি ১.৭ গ্রাম, প্রোটিন ১.৮ গ্রাম, ভিটামিন সি ৫ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৬ মাইক্রো গ্রাম, লোহা ০.৬ মাইক্রো গ্রাম, পাইরিডক্সিন ০.২ মাইক্রো গ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ৪৩ মাইক্রো গ্রাম, এবং কোলেস্টেরলের পরিমান শুন্য।
আদার উপকারিতা ও ঔষধি গুন গুলো:
জ্বর সর্দি কমাতে আদা- আদায় আছে এন্টি- ব্যাকটেরিয়াল উপাদান।যা আমাদের শরিরের ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব দুর করে।জ্বর ও সর্দি জাতীয় সমস্যার হাত থেকে রক্ষা পেতে নিয়মিত আদা চা পান করুন। এছাড়াও আদার রস ও মধু একত্রে খেলে জ্বর সর্দি সেরে যাবে।
কাশির চিকিৎসায় আদা:
ঋতু পরিবর্তন হওয়ার প্রভাব আমাদের দেহের উপরও পড়ে।এসময় জ্বর, সর্দি, কাশির মত সমস্যা হবে এটাই স্বাভাবিক।তবে এসময় কাশি খুবই যন্ত্রণা দিয়ে থাকে। এর থেকে উপশম পেতে আদার রয়েছে চমৎকার গুন।কাশির হাত থেকে রক্ষা পেতে আদা বিভিন্ন উপায় ব্যাবহার করতে পারেন। যেমন সামান্য পরিমান আদা কুচি করে নিতে হবে। এর পর এই আদার কুচি গুলো এক কাপ পরিমান পানির সাথে মিশিয়ে সিদ্ধ করে নিন।এর পরে এ পানি দিনে ৩-৪ বার পান করুন।খুব দ্রুত কাশি সেরে যাবে।এছাড়া এক চা চামচ পরিমাণ আদার রস এবং সমপরিমাণ মধু মিশিয়ে দিনে ৩ বেলা খান। এছাড়া আদা,লেবু এবং মধু সমপরিমাণ মিশিয়ে খেতে পারেন কাশিতে উপশম পাওয়ার জন্য।
ওজন কমাতে আদা:
অতিরিক্ত ওজন কমাতে আমরা কত কিছুই না করি! কারন ওজন বৃদ্ধি পেলে একদিকে যেমন আমাদের দৈহিক সৌন্দর্য নষ্ট হয়। তেমনি অতিরিক্ত ওজনের ফলে আমাদের দেহে বাসা বাধতে শুরু করে বিভিন্ন রোগ।যেমন উচ্চ রক্তচাপ, ডায়বেটিস সহ বিভিন্ন জটিল স্বাস্থ্য ঝুঁকি। যা সত্যিকার অর্থে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করে। এ কারনেই আমাদের প্রয়োজন পড়ে এই অতিরিক্ত ওজন কমানো। এর জন্য আমরা বিভিন্ন ধরনের উপায় অবলম্বন করে থাকি।যেমন ডায়েট কন্ট্রোল, নিয়মিত ব্যায়াম, না খেয়ে থাকা আরো কতকি! তবে আমরা খুব সহজেই শরিরের অতিরিক্ত ওজন আদা পানি পানের মাধ্যমে কমানো সম্ভব। এর জন্য প্রতিদিন সকালে কয়েক টুকরো আদা, এক চা চামচ পরিমাণ লেবুর রস, ও এক চামচ মধু এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে একসাথে কিছুক্ষণ জ্বালাতে হবে।এবং খালি পেটে সকাল বেলা নিয়মিত পান করলে শরিরের অতিরিক্ত চর্বি ও ওজন কমতে বাধ্য।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করবে আদা:
আমাদের মাঝে অনেকেরই বদহজম ও পেট ফাঁপা হওয়ার সমস্যা রয়েছে। তবে এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিবে আদা।এর জন্য প্রতিদিন সকালে এক কাপ আদা চা খেতে পারেন। এটি পেট ফাঁপা এবং বদহজমের মত সমস্যা দুর করবে।
আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় আদা:
আর্থ্রাইটিসের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা সারা দিনের খাবারে সাথে সামান্য পরিমাণে আদা রাখার চেষ্টা করবেন। এছাড়াও সমস্যার থেকে মুক্তি পেতে আদা দিয়ে চা তৈরি করে খেতে পারেন, সালাদের সাথে আদার কুচি মেশাতে পারেন।নিয়মিত আদা খেলে ব্যথার সমস্যা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। ব্যথানাশক ওষুধ খাওয়ার পরিবর্তে আদা খেয়ে দেখতে পারেন।এছাড়াও আর্থ্রাইটিসের ব্যথা কমাতে জিঞ্জার অয়েলের রয়েছে অনেক উপকারী দিক।
এছাড়াও আদার রস বসন্ত রোগে ভিষণ উপকারী।আদার রস আমাদের শরীর শীতল করে। হৃদ পিন্ডের জন্য উপকারী এবং হাঁপানির জন্য আদার রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে বেশ উপশম হয়।