ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে । ক্যামেরা হলো ছবি তোলার একটি যন্ত্র। বিশেষ মুহুর্তের ছবি ধারন করে রাখা হয় ক্যামেরার মাধ্যমে সেই মূহুর্তকে স্বরণীয় করে রাখার জন্য। তবে এই ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে বা কিভাবে ছবি তোলে আপনাদের জানতে ইচ্ছে করে না? আচ্ছা ভাবুন তো সৃষ্টির শুরুতেই যদি ক্যামেরা থাকতো তাহলে কেমন হতো? বিষয়টি খুবই চমৎকার হতো কিন্তু সেটি তো আর সম্ভব নয়। কারন ক্যামেরা তৈরি হয়েছে বিজ্ঞানী-দের দ্বারা। এবং আজকের বিজ্ঞান প্রযুক্তি যতটা উন্নত আগে এমনটা ছিল না। ক্যামেরা আবিস্কারের ইতিহাস সুদীর্ঘ।
ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে :
ইরাকের একজন বিজ্ঞানী ইবন-আল-হাইতাম ১০২১ সালে আলোক বিজ্ঞানের ওপর সাত খণ্ডের একটি বই লিখেছিল। বইটি ছিল আরবি ভাষায়, এবং বইটির নাম ছিল কিতাব আল মানাজির। সেই বইয়ের থেকেই ক্যামেরা আবিষ্কারের প্রথম সূত্রপাত হয়। কিন্তু এর পরে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয় একটি পূর্নাঙ্গ ক্যামেরা আবিস্কার করতে। এবং বহু বিজ্ঞানী এটি নিয়ে কাজ করেন। তবে বানিজ্য উদ্দেশ্য নিয়ে জর্জ ইস্টম্যান ১৮৮৫ সালে তার প্রথম ক্যামেরা ‘কোডাক’-এর জন্য পেপার ফিল্ম উৎপাদন করে।
এর পরেও ক্যামেরায় আসে আমূল পরিবর্তন। বর্তমান সেই আগেকার এনালগ ক্যামেরা নেই। সবই ডিজিটাল ক্যামেরা। এবং কার্য পদ্ধতিতে ও এই ক্যামেরা ভিন্ন। আসুন এনালগ এবং ডিজিটাল ক্যামেরা কিভাবে কাজ করে জেনে নেই।
এনালগ ক্যামেরা- আমরা জানি এনালগ ক্যামেরাতে “ফ্লিম” ব্যাবহার হতো ছবি তোলার জন্য। এবং এই ফ্লিম থেকেই স্টুডিও-তে গিয়ে ছবি বের করতে হতো। ক্যামেরা তৈরি করা হয় এমন ভাবে যারা ভিতরে লেন্স দিয়ে বাদে কোন ভাবেই যেন আলো প্রবেশ করতে না পারে এভাবে। এবং ক্যামেরা লেন্সের ভিতর দিয়ে যখন আলো প্রবেশ করে তখন ক্যামেরার ভিতরে একটি উল্টো প্রতিবিম্ব তৈরি হয়।
এবং ঠিক সেখানে-ই থাকে ক্যামেরা “ফ্লিম” যা তৈরি হয় সেলুলয়েড বা প্লাস্টিকের দ্বারা। এবং এই প্লাস্টিকের ফিতার গায়ে সিলভার হ্যালাইডের আস্তরন দেওয়া থাকে। এই সিলভার হ্যালাইড হচ্ছে আলোর সঙ্গে বিক্রিয়া ঘটায়। এবং এই বিক্রিয়া আলোর পরিমানের উপর হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। আলো বেশি হলে বেশি বিক্রিয়া হয় এবং কম হলে কম বিক্রিয়া। এবং লেন্সের মাধ্যমে যেহেতু আলো উল্টো প্রতিবিম্ব তৈরি হয় তাই এই আলো খুব সুক্ষ্ম ভাবে ক্যামেরায় প্রবেশ করে। এবং যেহেতু বাইরে থেকেও আলো প্রবেশের কোন উপায় নেই তাই লেন্স দিয়ে প্রবেশ করা আলোই ক্যামেরার ভিতরে যায়।
এখন যে স্থানে আলো বেশি পড়ে সেখানে বেশি বিক্রিয়া এবং কম স্থানে কম বিক্রিয়া। এই সূত্র ধরেই ফ্লিমে একটি হুবহু ছবি তৈরি করে ক্যামেরা। তবে এখানেই এনালগ ক্যামেরার কাজ শেষ নয়। এই ফ্লিম হাইপো দ্রবনে ধুয়ে নিতে হয়। ক্যামেরায় যেখানে বিক্রিয়া ঘটেছিল সেখানের ‘সিলভার হ্যালাইড’ হাইপো দ্রবনে উঠে যায়। এবং নেগেটিভ পাওয়া যায়। যা থেকে পরবর্তীতে আবার ছবি তৈরি করা হয়। রঙ্গিন ছবির ক্ষেত্রে এই বিক্রিয়া আরো জটিল ভাবে সম্পন্ন হয়।
এরপরে ছবি তৈরির জন্য এই নেগেটিভের মধ্যে দিয়ে আলো প্রবেশ করানো হয়। যার ফলে বিক্রিয়া ঘটা স্থান দিয়ে আলো প্রবেশ করে এবং বিশেষ প্রক্রিয়ায় সেটি ছবি প্রিন্ট করা হয়।
ডিজিটাল ক্যামেরা- আমরা বর্তমান সময় আর এনালগ ক্যামেরা ব্যাবহার করি না। এখন সকল ক্যামেরাই ডিজিটাল। এবং এতে কোন ফ্লিমের দরকার পড়ে না। এই ক্যামেরা লেন্সে ফ্লিমের পরিবর্তে ডট মেট্রিক্স পদ্ধতিতে বানানো বিশেষ ধরনের সোলার সিস্টেম দেওয়া থাকে। এবং এই সোলার সিস্টেম সাধারন সোলার সিস্টেমের মত নয়। এর উপর আলো পড়লে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়।
এই বিদ্যুত হচ্ছে কম্পনমান সম্পন্ন বিদ্যুৎ। তখন কাউন্টার নামের আইসি বিদ্যুত এর কম্পন মানকে বিশ্লেষণ বা গননা করে এনকোডারে প্রেরন করে। এবং এনকোডার একে বাইনারি মানে সাজিয়ে ফেলে এবং এপ্লিফাই করে র্যামে সংরক্ষণ করে। পরে ফটো ফরম্যাট সিস্টেম এই বাইনারি করে jpg,png,jpeg ফরম্যাটে। এবং পরবর্তীতে এই প্যাকেজ গুলো ওপেন করলে আমাদের সামনে হুবহু ছবিতে রুপান্তর হয়ে যায়।
এবং প্রিন্টারের সাহায্য নিয়ে এই ইমেজ প্যাকেজ গুলো প্রিন্ট করে ছবি প্রিন্ট করা হয়। এবং এনালগ ও ডিজিটাল ক্যামেরার সূত্র এক হলেও কার্যপ্রণালী সম্পুর্ন আলাদা। বর্তমানে আর এনালগ ক্যামেরা ব্যাবহার করা হয় না। কারন এনালগ ক্যামেরা দিয়ে যেমন ছবি তোলা কষ্টকর ও খরচ এবং সময় সাপেক্ষ। এবং নেগেটিভ নষ্ট হয়ে গেলে আর ছবিটি নতুন পাওয়ার কোন সম্ভবনা থাকে না।
অপরদিকে ডিজিটাল ক্যামেরার ছবি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক এবং বিভিন্ন মেমোরি ড্রাইভে সংরক্ষণ করা যায়। ইচ্ছে অনুযায়ী একাধিক কপি তৈরি করা যায়। চইলেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন মানুষের কাছে পাঠানো সম্ভব। কিন্তু এনালগ ক্যামেরাতে এটি সম্ভব নয়।