মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল কিডনি । যা মানবদেহের ফিল্টার হিসেবে কাজ করে থাকে। অর্থাৎ মানব দেহের দূষিত পদার্থ ছেকে ফেলে এমন একটি অঙ্গ যা রক্ত ফিল্টার করে মুত্রের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে দেহে পানির ভারসাম্য রক্ষা করে ।তাই সুস্থ স্বাভাবিক জীবন রক্ষার জন্য কিডনি সুস্থতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না কিভাবে কিডনি সুস্থ ও স্বাভাবিক রাখা যায় এবং কিভাবে যত্ন নিলে কিডনি ভালো থাকবে।
তাই কিডনি সুস্থ রাখার সেরা প্রাকৃতিক উপায় সমূহ নিয়ে আলোচনা করা যাক।
নিজের প্রতি সচেতন থাকুন:
দৈনন্দিন জীবনে কাজকর্ম, খেলাধুলা ,হাঁটাচলা ,এক্সারসাইজ হল শরীরকে ভালো রাখে। যা শরীরে প্রেসার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। কারণ কিডনি রোগের প্রধান লক্ষণ হল উচ্চ রক্তচাপ ও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস যা নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।তাই অবশ্যই নিজের প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন:
কিডনি ভালো রাখার অন্যতম উপাদান হলো পর্যাপ্ত পানি পান করা ।কারণ শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করে বের করার জন্য কিডনির পানির প্রয়োজন হয় ।সেক্ষেত্রে অবশ্যই দিনে তিন থেকে চার লিটার পানি খাওয়া উচিত ।তবে যাদের ঘাম বেশি হয় তারা আরো বেশি পানি পান করবে ।কিন্তু আবার অতিরিক্ত পানি পান করলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে সে ক্ষেত্রে আপনার শরীরে কতটুকু পানি প্রয়োজন তা চিকিৎসকের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে।
মাত্রাতিরিক্ত লবণ ত্যাগ করুন:
খাবারে অতিরিক্ত লবণ দেয়া বা খাওয়ার সময় আলাদা করে লবণ খাওয়া যা কিডনির এবং স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর ।তাই অবশ্যই মাত্রাতিরিক্ত লবণ পরিহার করে চলুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
ডায়াবেটিস থাকলে কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে ।কারণ ডায়াবেটিস রোগীর কিডনি ফেইলিয়ার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে সে ক্ষেত্রে অবশ্যই ডায়াবেটিস রোগীর রক্তের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরী।
প্রেসার স্বাভাবিক রাখুন :
উচ্চ রক্তচাপ কিডনি সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ। উচ্চ রক্তচাপ 130/80 এর ওপর থাকলে কিডনি সমস্যা দেখা দিতে পারে সে ক্ষেত্রে ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণ রাখা দরকার।
ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে সাবধান:
ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন শরীরের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই সেসকল অভ্যাস পরিহার করতে হবে কারণ পেইন কিলার জাতীয় ঔষধ কিডনির জন্য ক্ষতিকর। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন করা উচিত নয়।
ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করুন:
ধূমপান ও মদ্যপান কিডনির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা হ্রাস করে ফলে রক্ত চলাচল কমে যায়। তাই ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করে চলা উচিত।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন:
অতিরিক্ত ওজন কিডনি সমস্যা বৃদ্ধি করে। সে ক্ষেত্রে বয়স অনুযায়ী এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
প্রস্রাব চেপে না রাখা:
প্রসাব আটকে রাখা যা কিডনির জন্য খুব খারাপ প্রভাব ফেলে। কারণ প্রস্রাব আটকে রাখলে কিডনির স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা কমতে থাকে তাই এ কাজটি করা ঠিক না।
ভিটামিন ডি এর অভাব পূরণ করা :
শরীরে ভিটামিন ডি এর অভাব থাকলে কিডনির অসুখে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় ।তাই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ডায়েট মেনে চলা উচিত।
কম ঘুম:
দৈনন্দিন জীবনে আমাদের প্রতিদিন অন্তত 7/8 ঘন্টা ঘুমানো উচিত ।সে ক্ষেত্রে যদি কেউ কম ঘুমানোর সময় হয় সে ক্ষেত্রে কিডনির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই আমাদের সকলকে সচেতন হওয়া উচিত।
পুষ্টিকর খাবার খাওয়া:
আমাদের প্রতিদিন খাবারের তালিকায় অবশ্যই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া উচিত। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফল সবজি প্রোটিন খাবার আমাদের বেশি করে খেতে হবে আর প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে
কোমল পানীয় পরিহার করা:
আমরা অনেক সময় তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পানি পান না করে কোমল পানীয় পান করি। কিন্তু এসব পানীয়র মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন মেশানো থাকে। যা শরীরে প্রবেশের ফলে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয়। আর উচ্চ রক্তচাপ কিডনির ওপর ঋণাত্মক প্রভাব ফেলে।
অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন খাবার থেকে দূরে থাকুন :
গরুর মাংস খাসির মাংস বাহিরের প্রক্রিয়াজাতকরণ খাবার খেলে কিডনির ওপর চাপ পড়ে। এছাড়া অনেক সময় চিপস ফাস্টফুড ভাজা বাদাম ইত্যাদি কিডনির জন্য খুবই ক্ষতিকর। খাবারের মেনুতে অতিরিক্ত প্রোটিন সংযুক্ত থাকলে তা কিডনির ওপর চাপ পড়ে। ফলে কিডনি দুর্বল ও কোষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই সব সময় অতিরিক্ত প্রাণীজ প্রোটিন পরিহার করে মাছ মুরগির মাংস শাকসবজি ডাল জাতীয় প্রোটিন খাবার খেতে হবে।