মুজিবনগর সরকার রচনা
ভূমিকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে মুজিব নগর সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মূলত মুজিব নগর সরকার গঠিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্যে দেশ পরিচালনা যুদ্ধের বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন ও বিদেশি রাষ্ট্রের সমর্থন ও সহযোগিতা আদায়ের জন্য। ১০ এপ্রিল এই মুজিব নগর সরকার সরকার গঠিত হয ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণার পর।এবং মুজিব নগর সরকার শপথ গ্রহণ করে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তারিখ মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা গ্রামে। এই শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান করা হয়েছিল খুবই স্বল্প পরিসরে। এসময় উপস্থিত ছিলেন দেশি বিদেশি ১২৭ জন্য সাংবাদিক ও গণমাধ্যম কর্মী। মুজিব নগর সরকারের শপথ ব্যাক্য পাঠ করেছিলে অধ্যাপক ইউসুফ আলী। মূলত মুজিব নগর সরকার গঠনের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয় ২৫ মার্চ রাতে অপারেশন সার্চ লাইট সংগঠিত হওয়ার পর থেকেই। ২৫ মার্চ কালো রাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান নেতা তাজউদ্দীন আহমেদ আত্ম রক্ষার জন্য নিজের বাসা পরিত্যাগ করেন। এবং এর পড়েই তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক কারন ও দেশকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে অস্থায়ী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
মুজিব নগর সরকারের গঠন কাঠামো ও মন্ত্রী পরিষদ: মুজিব নগর সরকারের নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম অনুসারে। কারন শেখ মুজিবর রহমান ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি। এই সরকারের প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলে তাজ উদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়াও তিনি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, তথ্য ও বেতার এবং টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, অর্থনৈতিক বিষয়, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, সংস্থাপন ও প্রশাসন, শিক্ষা, স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন সরকার, স্বাস্থ্য, শ্রম ও সমাজ কল্যাণ সহ এ ছাড়াও যে সকল বিষয়ে মন্ত্রি পরিষদের দায়িত্ব অন্য কোন সদস্যকে দেওয়া হয়নি তার দায়িত্বে তিনি ছিলে। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তিনি এ সময়ে পাকিস্তানের কারা গারে বন্দী থাকার কারনে সৈয়দ নজরুল ইসলাম-কে উপ-রাষ্ট্রপতি করা হয়। তিনি রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবের অনুপস্থিতিতে দায়িত্ব পালন করেন। খন্দকার মোশতাক আহমেদ ছিলেন পররাষ্ট্র বিষয়ক এবং আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। অর্থ ও জাতীয় রাজস্ব মন্ত্রী, বাণিজ্য ও শিল্প এবং পরিবহন মন্ত্রী এম মনসুর আলী। এ এইচ এম কামরুজ্জামান স্বরাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন সরবরাহ এবং কৃষি মন্ত্রী নির্বাচিত হন। মুজিব নগর সরকার-কে মোট পনেরটি বিভাবে বা মন্ত্রণালয়ে ভাগ করা হয়।
মুজিব নগর সরকার গঠনের মূল উদ্দেশ্য ও সূচনা : ২৫ মার্চ অপারেশন সার্চ লাইটের রাতে যখন তাজউদ্দীন আহমেদ নিজ বাসভবন ত্যাগ করেন। এবং ৩০ মার্চ তারিখে তিনি পশ্চিম বঙ্গে পৌঁছান ফরিদপুর – কুষ্টিয়া পথে। এবং সেখান থেকে তিনি বিএসএফ এর কাছে মুক্তি যুদ্ধ এবং মুক্তি যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রের জন্য সাহায্য আবেদন করলে বিএসএফ প্রধান তাকে জানায় ভারত সরকারের অনুমতি ব্যাতিত কোন ভাবেই তাদের পক্ষে সাহায্য করা সম্ভব নয়। এ কারনে তিনি দিল্লি যান এবং ইন্দিরা গান্ধী ও তাজউদ্দীন আহমেদ – এর বৈঠক হয়। এক পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন দেশের সরকার গঠন না হলে কোন দেশ থেকেই তারা প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কোন সহযোগিতা-ই পাবেন না। এ কারনে তিনি একটি অস্থায়ী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যার নাম দেওয়া হয় মুজিব নগর সরকার। মূলত এর থেকে সুস্পষ্ট হয় যে, মুজিব নগর সরকার গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সহযোগীতা ও সমর্থন আদায় ও মুক্তিযুদ্ধ সঠিক ভাবে পরিচালনা ও নেতৃত্ব প্রদান।
যুদ্ধ কালিন সময়ে মুজিব নগর সরকারের ভূমিকা: মুক্তি যুদ্ধ চলাকালীন সময় মুজিব নগর সরকারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারা স্বাধীনতা সংগ্রামকে গতিশীল করতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এবং তাদের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় তাদের স্ব স্ব দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান কাজ ছিল বহির্বিশ্বের কাছে থেকে স্বীকৃতি আদায় করা। তবে আলাদা মন্ত্রণালয় হলেও প্রধান মন্ত্রী নিজেই সবচাইতে বড় ভূমিকা পালন করে এখানে। এরপরে তথ্য ও বেতার মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়। তারা মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন খবরাখবর নিয়মিত প্রচার সহ মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন ধরনের গান ও অনুষ্ঠান নিয়মিত প্রচার করতে থাকে। যার ফলে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র যার বর্তমান নাম বাংলাদেশ।
উপসংহার: দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা। তবে বিশ্বের অন্য কোন দেশ এতো কম সময় স্বাধীনতা অর্জন করতে পারে নাই। এর থেকে এই একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে যায় যে, সঠিক দিকনির্দেশনা ও পরিকল্পনা প্রনয়ণের মাধ্যমেই এত দ্রুত আমরা স্বাধীনতা লাভ করতে পেরেছি। যার কর্নধার ছিলো মুজিব নগর সরকার এবং শেখ মুজিবুর রহমানের অসামান্য নেতৃত্বের গুনাবলি।