পদ্মা সেতু রচনা

পদ্মা সেতু রচনা

ভূমিকা: পদ্মা সেতু বাংলাদেশের মানুষের একটি বহুদিনের আকাঙ্ক্ষার বিষয়। দেশের সর্বস্তরের মানুষের একটাই দাবি ছিল পদ্মা সেতু। কারন এটির ফলে আমাদের বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার মান আরো উন্নত হবে। যা আমাদের অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আর এই কারণেই পদ্মা সেতুর প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। বর্তমানে বহু বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় শেষের দিকে। এবং এই পর্যন্ত সকল কিছু সফলতার সাথে হয়ে এসেছে। তবে পদ্মা পৃথিবীর মধ্যে উত্তাল নদীর তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। এদিক থেকে পদ্মার বুকে সেতু করা কোনভাবেই সহজ কাজ নয়। বরঞ্চ এটি একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। প্রতি সেকেন্ডে পদ্মা নদীতে ১ লক্ষ ৪০ হাজার কিউবিক মিটার পানি প্রবাহিত হয়ে থাকে । কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ এটিকে সফল হতে বাধ্য করেছে। কিন্তু এটি শুনলে অবাক হবেন আমাদের দেশের মতো দরিদ্র দেশ এই পদ্মা সেতুর সম্পূর্ণ অর্থায়নের দায়িত্ব নিয়েছে। এই পদ্মা সেতু নির্মাণে বিদেশি কোন সংস্থার সহায়তা গ্রহণ করবেনা বাংলাদেশ সরকার। যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এবং এটি হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার লম্বা যা বাংলাদেশের ভিতরে সবচেয়ে বড় সেতু হিসেবে স্থান দখল করে নেবে। এছাড়াও এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের সাথে উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করবে।

Read more: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট রচনা

পদ্মা সেতুর সূচনা: পদ্মা সেতু নির্মাণের সূত্রপাত হয় ২০০৭ সালের ২৮ শে আগস্ট। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। একাউন্ট পদ্মা সেতুর জন্য ১০১৬১ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয় এবং এটি সংসদে পাস হয় কিন্তু পরবর্তী কালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে পদ্মা সেতুর পরিকল্পনা পরিবর্তন করেন এবং পদ্মা সেতুর সাথে রেলপথ সংযুক্ত করেন এর ফলে পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং বাজেট সংশোধন করে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। এবং পরবর্তীতে আরো বৃদ্ধি করে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পরবর্তী সময়ে পদ্মা সেতুর সাথে সংশ্লিষ্ট কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এবং তাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়। এবং অবশেষে দুর্নীতির কথা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। কিন্তু এর ফলে বিশ্ব ব্যাংক এবং বিভিন্ন দাতা সংস্থার আর্থিক সহযোগিতা করতে পিছিয়ে যায় এবং পরবর্তিতে বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ দেশীয় অর্থায়নে তৈরি করা হবে। যা ছিল একটি দুঃসাধ্য এবং প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। তবে পদ্মা সেতু তৈরির কাজ শুরু হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালে এবং সেতু নির্মাণের কাজ ২০১৩ সালে শেষ হবে এবং এর যাবতীয় সকল কাজ ও জনসাধারণের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার সময় ২০১৫ সাল। কিন্তু বিভিন্ন বাধাবিপত্তির কারণে সঠিক সময়ে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হতে পারেনি। তারপরে একটা নতুন নির্মাণের কাজ চলছে। এবং নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর। এবং নির্মাণের যাবতীয় সকল কাজ হবে ২০২১ সালে এবং এই সময় পদ্মা সেতু ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

Read More  দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে কাল বিভাজন

পদ্মা সেতুর বর্ণনা: পদ্মা সেতুর নির্মাণ করা হবে বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু হিসেবে। এবং পদ্মা সেতুর উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক থাকবে। এবং নিচের স্তরে রেললাইন সেতু থাকবে। এবং পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬.১৫ কিলো মিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার। পদ্মা সেতুর উপরে মোট ৪০ টি স্পান বসবে। তার প্রতিটির দৈর্ঘ্য হবে ১৫০ মিটার। এবং পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রধান কাঁচামাল হচ্ছে কংক্রিট এবং স্টিল। এটি নির্মাণের কাজ পেয়েছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড।

পদ্মা সেতু বাংলার গর্ব: পদ্মা সেতু মূলত বাঙালি জাতির জন্য একটি গর্বের বিষয় এবং এটি আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করা সত্যিই একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয়। এটা পৃথিবীর কাকে আবার বাঙালি জাতির নাম কে উজ্জল করেছে। এবং বিশ্ব দরবারে এটি প্রমাণ করে দিয়েছে বাঙালি জাতি এখন আর পিছিয়ে নেই। এবং পদ্মা সেতুর মতো বিভিন্ন প্রকল্প নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার মতো ক্ষমতা রাখে বাংলাদেশ। মিথ্যা দুর্নীতি মামলায় বিশ্বব্যাংকের এবং অন্যান্য আর্থিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সরে যাওয়ার সঠিক জবাব হয়েছে এটি।

Read More  A Postman Paragraph

সম্ভাবনা: পদ্মা সেতু বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল এবং উত্তর পূর্বাঞ্চলের সংযোগ ঘটিয়েছে। যা সমগ্র দেশব্যাপী জামায়াতের নতুন সম্ভাবনার দুয়ার উন্মোচন করেছে। এবং যা আমাদের অর্থনীতিতে বিশাল প্রভাব বিস্তার করবে বলে আশা করেন বিশেষজ্ঞরা। এবং তারা মনে করেন পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমৃদ্ধি আরো বৃদ্ধি পাবে।কারন এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের উত্তর পূর্ব অঞ্চল এবং দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের মাঝে যোগাযোগ ব্যাবস্থার বড় বাধা সৃষ্টি করে পদ্মা নদী। যা ফলে এদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি হলেও উত্তর পূর্বাঞ্চলে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। এর কারন হলো যোগাযোগ ব্যাবস্থা।শুধুমাত্র পদ্মা নদীর কারনে যোগাযোগ ব্যাবস্থা খুবই দুর্বিষহ রয়ে গিয়েছে।

পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিল : পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংকের বিশ্বের আরও বিভিন্ন দেশ ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। এবং বিশ্ব ব্যাংক মোট ১২০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে বাংলাদেশকে। এর পাশাপাশি আরও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ঋণ প্রদানের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়। এরমধ্যে জাপান ১৪ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের জন্য আশ্বাস দিয়েছিল। এবং এডিবি ৬১ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের আশ্বাস দেয়। যে টাকা ব্যয় হবে পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য। কিন্তু দুর্ভাগ্য ঋণ প্রকল্পে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের সাথে জড়িত কিছু কর্মকর্তার দুর্নীতির প্রমাণ। বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে সরাসরি জানিয়ে দেয় পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তাদের কাছে এবং এ সকল দুর্নীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য এবং প্রমাণিত বলে দাবি করে তারা। এর ফলে দুর্নীতির অভিযোগের কারণে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ঋণ প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। এর ফলে বিশ্বব্যাংকের সরে আসা দেখে অন্যান্য ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান সরে আসে পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণ প্রদান থেকে। এবং বিশ্ব ব্যাংক ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বিশেষ কতগুলো শর্ত জুড়ে দেয়। যে সকল শর্ত উল্লেখ করা হয়েছিল তা হল যে সকল কর্মকর্তা এই দুর্নীতির সাথে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং বিশেষ তদন্ত কমিটি তৈরি করা। যার মাধ্যমে তাদের দুর্নীতি বিষয়ে সঠিক প্রমাণ জোগাড় করতে পারবে সরকার। এবং বিশ্বব্যাংকের একটি পরিষদ গঠিত হবে যারা এই তদন্তের ফলাফল পর্যালোচনা করবে।কিন্তু এসকল দুর্নীতি মিথ্যা প্রমানিত হলেও ঋন দেওয়া হয়নি বিভিন্ন কারনে।

Read More  পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট প্রধানমন্ত্রী কে ?

পদ্মা সেতু নিয়ে গুজব: পদ্মা সেতু নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন চক্রান্ত তৈরি হয়েছে। কারণ অভ্যান্তরীণ অনেক সরকার বিরোধী এবং দেশদ্রোহী এসে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ ব্যাহত করতে। এ কারণে প্রথমদিকে দুর্নীতি মামলা এবং পরবর্তীকালে পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে এরকম গুজব ছড়ানো হয়েছে। এবং সাম্প্রতিক সময়ে পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে গুজব প্রবল আকার ধারণ করে এবং এর ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে। এবং গলাকাটা এবং পাচারকারী সন্দেহে বিভিন্ন মানুষকে হয়রানির শিকার করা হয়েছে এছাড়াও সন্দেহের বশে বিভিন্ন মানুষকে মারধর এবং হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। বহু লোককে মাধ্যমের পরে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। এবং এসকল গুজব বাংলাদেশ এবং বাঙালির জাতির জন্য সত্যি লজ্জাজনক।

উপসংহার : পদ্মা সেতু একদিকে যেমন আদের দেশের সমৃদ্ধি বয়ে আনবে।ঠিক তেমনি এটি আমাদের দেশের জন্য গর্বের বিষয়। কারন পদ্মা নদীর মত বড় এবং উত্তাল নদীর উপর দিয়ে সেতু নির্মাণ সত্যিকার অর্থে চ্যালেঞ্জিং একটি বিষয়। এবং তা আমাদের দেশের মত উন্নয়নশীল দেশের জন্য তা এক কথায় বলতে গেলে অসম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের দৃড় প্রত্যয় তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব করে তুলছে। যা সত্যিকার অর্থে প্রশংসনীয় বিষয়। একটি দেশকে ডিজিটাল করতে হলে তার যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর পদ্মা সেতু আমাদের দেশের যোগাযোগ ব্যাবস্থা উন্নত করে তুলেছে। এ কারনে পদ্মা সেতুকে ডিজিটাল বাংলাদেশের অন্যতম একটি উপাদান হিসেবে গন্য করা হয়।

About the Author:

Habibur Rahman is an expert writer about Bangla poems, romantic stories, captions, status and quotes. He is writing about all romantic and motivational quotes, poems, captions, and status messages from the past 12 years. He has completed honors and master's degrees in literature from Dhaka University.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *