দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে প্রোটো-ঐতিহাসিক যুগ

ঐতিহাসিক যুগের ঠিক পূর্ববর্তী যুগকে আদি ঐতিহাসিক বা প্রােটো (Proto) ঐতিহাসিক যুগ বলা হয়। সাধারণত বৈদিক যুগকে প্রােটো ঐতিহাসিক যুগ বলা হয়। এ যুগের বেদ, উপনিষদ প্রভৃতি শাস্ত্র প্রচারিত হয়। এ যুগে লিপি আবিষ্কার হলেও তা ব্যাপকভাবে প্রচলিত ছিল না। বেদ, উপনিষদ প্রভৃতি শাস্ত্র শ্রুতি আকারে রক্ষিত হতাে। ঐতিহাসিক বাসাম এর মতে, “বেদ, ব্রাহ্মণ ও উপনিষদের যুগ ভারত ইতিহাসের গৈতিহাসিক এবং ঐতিহাসিক যুগের মধ্যবর্তী যুগ।”

দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে মধ্যযুগ
Middle Age of the South Asian History

দক্ষিণ য়ার ইতিহাসে ঐতিহাসিক যুগের শেষ পর্যায় বলা যায় সিন্ধুসভ্যতার পতন কাল পর্যন্ত সময়কে। এরপর ঋকবৈদিক সময় থেকে প্রাচীন যুগ শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় হিন্দু সভ্যতার শেষ পরিণতির সময় কাল ধরা যেতে পারে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের ২য় যুদ্ধের সময় কালকে । ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতে কুতুব উদ্দীন আইবেক স্বাধীন সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর ভারতে মুসলিম রাজত্বের যুগ শুরু হয়। ১২০৬ থেকে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সুলতানি আমল এবং পরবর্তী মুঘল শাসনামলকে মধ্যযুগের অন্তর্ভুক্ত করা যায় । তবে মধ্যযুগের শেষ পর্যায় কোন সময়কে ধরা হবে তা নিয়ে মতপার্থক্য আছে। অনেকের মতে ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সময় কাল থেকে মধ্যযুগের শেষ হয়। আবার অনেকের মতে, ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধের পর হতে ভারতে ব্রিটিশ পুঁজি ও রাজনৈতিক শক্তি প্রভাব বিস্তার করে এবং ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ভারতে মধ্যযুগের শেষ অধ্যায় বলা যেতে পারে।

Read More  পদ্মা সেতু রচনা

দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে আধুনিক যুগ
Modern Period of the South Asian History

১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ইউরােপের ইতিহাসে আধুনিক যুগের সূচনা হলেও দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে ইউরােপের কাল বিভাজনের রীতি বা তার বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে কাল বিভাজন এবং উল্লিখিত সময় কালকে আধুনিক ইতিহাসের প্রারম্ভিক কাল হিসেবে বিবেচনা করা সমীচীন নয়। ধর্মীয় শিষ্ট্যের ভিত্তিতে অর্থাৎ সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধের সময় কালকে অথবা ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে কুতুবুদ্দীন আইবেক কর্তৃক ভারতে স্বাধীন সালতানাত প্রতিষ্ঠার সময় কালকে মধ্যযুগের |

প্রারম্ভিক কাল ধরলে, ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদদৌলার পরাজয় কিংবা ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিপাহি বিদ্রোহে ইংরেজদের ফলতাকে মধ্যযুগের শেষ। পরাজয় ধরলে এবং ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইংল্যান্ডের সরাসরি শাসনকালকে আধুনিক যুগের সূচনা কাল বিবেচনা করা যায়। তবে ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধের নবাব সিরাজউদদৌলার পরাজয়কে আধুনিক ভাবধারায় শাসন পদ্ধতি, ইউরােপীয় শিক্ষা বিশেষ করে উপযােগবাদী জীবনধারা ভারতে বিকাশ লাভ করার পথ উন্মুক্ত হয় । পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজের পতনের ফলে ভারতে ইংরেজদের রাজনৈতিক আদিপত্যের সূচনা হয়। ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি দেওয়ানি লাভ, ১৭৯৩ খ্রিস্টাব্দে চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের প্রবর্তনের ফলে জমিতে ব্যক্তিগত মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করে পুঁজিবাদী অর্থনীতির পটভূমি তৈরি করা হয়। এরপর ভারতে ইংরেজিকে অফিসিয়াল ভাষা এবং শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা ভারতের সমাজ কাঠামােতে যুগান্তকারী পরিবর্তন সূচনা হয়। ইংরেজি শিক্ষা ও পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রচারের ফলে হিন্দুধর্মের কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসে আঘাত হানে। ইয়ং বেঙ্গল গােষ্ঠী হিন্দুধর্মের কূপমন্ডুকতা ও পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তােলে । এর ফলে রামমােহন হিন্দুধর্মের সংস্কার আন্দোলন শুরু করে এবং ব্রাহ্ম ধর্মপ্রচার করে হিন্দুধর্মের এক ঈশ্বরবাদের প্রচার করেন। এরপর মহীষী দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, কেশবচন্দ্র সেন, আনন্দ মােহন বসু প্রমুখ আরাে অনেকে হিন্দুধর্মের সংস্কার করেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হিন্দু ধর্মে নারীর অধিকার, শিশুকন্যা বিবাহ নিষেধ এবং নারী শিক্ষার উন্নতির চেষ্টা করেন। এর ফলে হিন্দুসমাজে ধর্ম ও জীবনবােধের যুগান্তকারী সূচনা হয়। হিন্দুসমাজে আধুনিকতার উন্মেষ ঘটে। এ দিক থেকে বিবেচনা করলে অষ্টাদশ শতাব্দীর দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসকে আধুনিক যুগের প্রারম্ভিক কাল। বলা যেতে পারে এবং ১৭৫৭, ১৭৬৫ কিংবা ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে ভারতে ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের সময় কালকে আধুনিক যুগের সূচনা কাল বলা যেতে পারে।”

About the Author:

Habibur Rahman is an expert writer about Bangla poems, romantic stories, captions, status and quotes. He is writing about all romantic and motivational quotes, poems, captions, and status messages from the past 12 years. He has completed honors and master's degrees in literature from Dhaka University.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *