রচনা ৭ মার্চের ভাষণ

রচনা ৭ মার্চের ভাষণ

ভূমিকাঃ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতার এক মহা- নায়ক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেে জন্ম না হলে হয়ত আজো আমরা পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ থাকতাম। তিনি না জন্মগ্রহণ করলে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহন করতে পারতো না। মূলত বাঙ্গালির স্বাধীনতার বীজ বপন করা হয় বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলনের হাত ধরে। এরই ধারাবাহিকতায় ৭১ সালে সংঘটিত হয় মুক্তিযুদ্ধ। এবং এই মুক্তিযুদ্ধে অগ্রনী ভূমিকা রাখে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের মাধ্যমে বাঙালি স্বাধীনতা শব্দের মর্মার্থ বুঝতে পারে। তার এই ১৮ মিনিটের অলিখিত ভাষনের মাধ্যমে পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠীর শোষণ নিপীড়ন ও বাঙালির অধিকার আদায়ে কথা তুলে ধরেন। এবং পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের জন্য বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেন। Read more: আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রচনা

৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনের পটভূমি – ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পশ্চিম পাকিস্তানের সরকার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সরকার আওয়ামিলীগ সরকারের কাছে অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিপুল ভোটে হেরে যাওয়ার পরেও ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চেয়েছিল না। এ কারনে জেনারেল ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের ডাক দেন। কিন্তু ১ মার্চ অধিবেশন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয়। যার ফলে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ ক্ষোভে ফেটে পড়তে শুরু করে। এ কারনে ২ ও ৩ মার্চ হরতালের ডাক দেয় আওয়ামী লীগের কর্নধার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এবং ৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। এরই ধারাবাহিকতায় ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে লক্ষ লক্ষ মানুষ উপস্থিত হয় এবং জাতির পিতা দেশের মানুষের উদ্দেশ্যে তার ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষন দেন।

Read More  Nakshi Kantha Paragraph

৭ই মার্চেের ভাষনের গুরুত্ব – বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটি মূলত স্বাধীনতার ডাক ছিল। তিনি তার এই ছোট্ট একটি ভাষনের মাধ্যমেই সমগ্র বাঙালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তুলেন। তার এই ভাষনের মাধ্যমে বাঙ্গালির অধিকার ও পাকিস্তানিদে শাসন ও শোষণের চিত্র তুলে ধরে। তিনি ৭ই মার্চের বিকাল ২.৪৫ মিনিট হতে ৩.০৩ মিনিট পর্যন্ত এই ১৮ মিনিটে তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তানের সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন। এবং বর্ণনা করেন পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকা। এর পাশাপাশি সামরিক আইন প্রত্যাহারের দাবি জানান। এবং পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য সর্বস্তরের বাঙ্গালীকে আহ্বান জানান। এবং এই আন্দোলন দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান সহ বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেন।
এছাড়াও “আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি তোমরা সবাই প্রস্তুত থাকো তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে” এই কথার মাধ্যমে সমগ্র বাঙালীকে স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মানসিক ভাবে প্রস্তুত করেন।

স্বীকৃতি : জাতির পিতার এই ঐতিহাসিক ভাষনটি ছিল বাঙ্গালী জাতির জন্য বড় পাওয়া। কারন বঙ্গবন্ধুর এই ভাষন একদিকে যেমন দেশকে স্বাধীন করার প্রেরনা যুগিয়েছে তেমনি বিশ্ব দরবারে বাঙ্গালীর মাথা উঁচু করেছে। এর মাধ্যমে বাঙ্গালী পেয়েছে বীরের খেতাব। ইউনেস্কো সমগ্র বিশ্বের গুরুত্বপুর্ণ দলিল গুলো সংরক্ষিত করে থাকে। তাদের এই উদ্যোগ এর নাম ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে (এমওডব্লিউ)। ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই ভাষনটি বিশ্ব প্রামাণ্য দলিল বা “ডকুমেন্টারি হেরিটেজ” হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণটি। সর্বপ্রথম ইংরেজি ভাষার পাশাপাশি জাপানি ভাষায় অনুবাদ করা হয়।

Read More  বিদ্যা অমূল্য ধন ভাবসম্প্রসারণ

উপসংহার : বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা অনস্বীকার্য। তার এই ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষন বাঙ্গালির অন্তরে স্ফুলিঙ্গের মত ছড়িয়ে পড়ে। বাঙ্গালী স্বাধীনতার জন্য প্রানের মায়া ত্যাগ করে হাসিমুখে মৃত্যু বরন করতেও পিছপা হয়নি তার এই ভাষনের কারনে। তার এই ভাষন আমাদের স্বাধীনতার ঘোষণা হিসেবে যেমন কাজ করেছিল ঠিক তেমনি আজও এই ঐতিহাসিক ভাষনটি বিশ্বের প্রতিটি কোনায় কোনায় বাঙ্গালী জাতিকে পরিচয় করিয়ে দেয়। এনে দেয় সম্মান!

About the Author:

Habibur Rahman is an expert writer about Bangla poems, romantic stories, captions, status and quotes. He is writing about all romantic and motivational quotes, poems, captions, and status messages from the past 12 years. He has completed honors and master's degrees in literature from Dhaka University.

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *