ফেনীর অপরূপ সৌন্দর্য্যের এক লিলা ভূমি ও আকর্ষণীয় স্থান বিজয় সিংহ দিঘী। এই দীঘি ফেনী শহরের প্রায় দুই কিলোমিটার পশ্চিমে বিজয় সিংহ গ্রামে ফেনী সার্কিট হাউসের সামনে অবস্থিত। বাংলার বিখ্যাত সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা বিজয় সেনের অমর কীর্তি এ বিজয় সিংহ দিঘী। এ দিঘীর আয়তন ৩৭.৫৭ একর। এ দিঘীর অনেক ইতিহাস রয়েছে। এ ইতিহাসকে কেউ রূপকথার গল্প বলে, কেউ কাল্পনিক গল্প বলে কেউবা আবার বলে অলৌকিক গল্প।
যাইহোক, ছোট বেলায় যখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি তখন আমার বাংলা শিক্ষক বললেন, অনেক অনেক বছর আগে এ দিঘীর পানির নিছে নাকি স্বর্ণের একটি নৌকা ছিল। সে নৌকাতে স্বর্ণের হাড়ি, পাতিল, থালা, বাটি, চামচ, গহনা ইত্যাদি সবই ছিল। মোটকথা একটি বিয়েতে যা যা লাগে সবই ছিল এই নৌকাতে। কোন গরিব বাবার মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে বিয়ের যাবতীয় জিনিসপত্র বিজয় সিংহ দিঘীর নৌকা বহন করত। অর্থাৎ কোনো গরিব মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে, তার বাবা দিঘীর সামনে গিয়ে যদি বলে, আমার কন্যার বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু আমার কোন কিছুই ব্যবস্থা করার সামর্থ্য নেই তখনই নৌকা পানি থেকে অদৃশ্য হয়ে উপরে উঠে সে সব স্বর্ণের হাড়ি-পাতিল গহনা দেয়।
তবে শর্ত থাকে এই যে, বিয়ে শেষে সব কিছু ফিরিয়ে দিতে হবে নৌকায়। এভাবে কোন গরীব কন্যার বিয়ে ঠিক হলে তার বাবা বিয়ের আগের দিন সকল জিনিসপত্র নৌকা থেকে নিয়ে যেত এবং বিয়ে শেষ করেই জিনিসপত্র আবার নৌকাতে ফেরত দিত। এ শর্ত অনুযায়ী চলতে লাগলো অনেক বছর। হঠাৎ একটা বিয়ে থেকে জিনিসপত্র ফেরত এনে নৌকাতে জমা দেওয়ার পরও নৌকাটি ডুবে না। অনেকবার ডুবানোর চেষ্টা করা হলেও নৌকাটি ডুবে যায় না। তখন পুনরায় জিনিসপত্রগুলো গুনে দেখা হয়।
অবাক কান্ড, সেই জিনিস গুলোর মধ্যে একটা চামচ ও একটা থালা কম ছিল। পরে জানা যায় এক মহিলা চামচ ও থালা চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল। সেদিনের পর থেকে আর কোন দিন বিজয় শিংহ দিঘীর নৌকা স্বর্ণের জিনিসপত্র নিয়ে পানির উপরে ভেসে উঠে নি।এভাবে অনেক বছর কেটে গেল কিন্তু নৌকা আর পানির উপরে উঠে এলো না।তারও এক যুগ পরে শুমতে পেলাম, এক নববধূ পালকি থেকে নেমে দিঘীর কিনারে পানি পান করতে লাঘলে হঠাৎ দিঘী থেকে একটি বড় ঢেউ এসে নববধূকে পানির নিছে তলিয়ে নিয়ে যায়। এরপর নববধূকে আর কখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাতে কি হয়েছে? বিজয় সিংহ দিঘীর সেই রূপকথার গল্প গুলো আজ হয়তো আর খুঁজে পাওয়া যায় না,কিন্তু এখনো খুঁজে পাওয়া যায় মন, প্রাণ শীতল সেই দখিনা হাওয়া, চোখ জুরানো সবুজের সমারোহ প্রভৃতি।