গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান এবং মুক্তি পাওয়ার উপায় ।
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে যে সকল শারীরিক সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম হলো গ্যাস্ট্রিক। এবং এই সমস্যা প্রায় সকল বয়সের মানুষের মধ্যেই দেখা যায়। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা অন্যান্য রোগের মত জটিল না হলেও এটি আমাদের দেহে বিভিন্ন ভাবে সমস্যা সৃষ্টি করে। এ কারনে আমাদের সকলের জানা উচিত গ্যাস্ট্রিক কেন হয়, এটি আমাদের দেহে কি কি সমস্যা সৃষ্টি করে এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান বা এর থেকে সুস্থ থাকার উপায়।
গ্যাস্ট্রিক কি এবং কেন হয়– অনেক সময় দেখা যায় ঠেকুর ওঠে এবং বুক জ্বালা পোড়া করে। বা কখনো পেটে ব্যাথা হয় আবার নাভির কাছেও ব্যাথা হয়ে থাকে। এ সকল লক্ষন থেকে আমরা বুঝি গ্যাস্ট্রিক হয়েছে। এটিকে আমরা রোগ বললেও চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটিকে কোন রোগ হিসেবে ধরা হয় না। মূলত আমরা যে খাবার খাই তা হজম করতে আমাদের দেহ থেকে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক এডিস নিসৃত হয়। যা খাদ্য হজমে সাহায্য করে। যখন পাকস্থলীতে এই এসিডের মাত্রাধিক্য দেখা যায় তখনই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি হয়। এবং এই এসিড হতে গ্যাস উৎপন্ন হয় যারা ফলে গলা বুক জ্বালা পোড়া করে। অনেক সময় নাভির কাছে ব্যাথা করে।
তবে এই এসিড আমাদের পাকস্থলীর কোন সমস্যা করতে পারে না। কারন পাকস্থলীতে একটি মিউকাস বা শ্লেষা জাতীয় স্তর থাকে। যা পাকস্থলীর এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিডের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় আমারা দীর্ঘক্ষন খাবার খাই না। তখন আমাদের এই মিউকাস স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং সরাসরি এসিড পাকস্থলীতে লাগে। যার ফলে পেটে ব্যাথা হয়। দীর্ঘদিন একনাগাড়ে খাদ্য গ্রহণে অনিয়ম করলে পাকস্থলীতে ঘা এর সৃষ্টি হয় যা আলসার নামে পরিচিত।
গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান বা সুস্থ থাকার উপায়
কতগুলো নিয়ম কানুন ফলো করলে আমরা এই সমস্যা থেকে মুক্ত থাকতে পারি আসুন জেনে নেই। কারন সমস্যা প্রতিকার হতে প্রতিরোধ-ই উত্তম ।
১: নিয়ম মাফিক খাদ্য গ্রহন– আমাদের মাঝে অনেকেই আছেন যারা সকালে নাস্তা করেন না। একবারে দুপুরে খাবার খান। তখন আমাদের পাকস্থলী রাতের খাবার এবং দুপুরের খাবারের মধ্যে একটি দীর্ঘ সময় পেট খালি থাকে। কিন্তু খাদ্য হজমের জন্য আমাদের দেহ একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঠিকই এসিড নিঃসৃত করতে থাকে এই এসিড খালি পাকস্থলীতে থাকার কারনে গ্যাস্ট্রিক সৃষ্টি হয়। তাই আমাদের সকলের উচিত নির্দিষ্ট সময় খাদ্য গ্রহণ করা।
সকালের খাবার সকাল ৮ টার ভিতর সেরে ফেলতে হবে। এবং দুপুরের খাবার ১-২ টার ভিতরে সম্পন্ন করতে হবে। রাতের বেলায় রাত ১০ টার ভিতর খাবার খান। এর ফলে একদিন যেমন আপনি গ্যাস্ট্রিক সময় সৃষ্টি হওয়ার হাত থেকে রেহাই পাবেন তেমনি অন্যান্য শারীরিক সমস্যা ও দূরে থাকবে এবং আপনি সুস্থ সুন্দর ভাবে থাকতে পারবেন।
২: গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সমাধানে হলুদ– হলুদ আমাদের অতি পরিচিত একটি ভেষজ উপাদান। এটি বিভিন্ন ধরনের জিবানু ধ্বংস করতে খুবই কার্যকর। এবং অনেক সময় ভাইরাসের কারনেও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা সৃষ্টি হয়। এক গ্লাস পানি নেন। এবং একটি পাত্রে নিন এরপরে এর ভিতর এক টুকরো হলুদ দিয়ে ভালো ভাবে জ্বালানোর পরে ঠান্ডা করে পান করুন এবং দেখুন কেমন যাদুর মতো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূরীভূত হয়।
৩: গ্যাস্ট্রিকে আদা– আমাদের মাঝে অনেকরই রাতের বেলায় গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা যায়। যাদের এই সমস্যা আছে তারা এক টুকরা আদা সামান্য লবন মাখিয়ে চিবিয়ে খান এবং খাওয়ার কিছু সময় পরে এক কাপ কুসুম গরম পানি পান করুন। তাহলে আর এই সমস্যা থাকবে না।
৪: খেতে পারেন শশা– মেদ কমাতে শষা একটি উৎকৃষ্ট উপাদান। এছাড়াও রয়েছে বহুবিধ উপকারীতা। একই সাথে এটি আমাদের গ্যাস্ট্রিক সমস্যা ও সমাধান করে। কারন এতে আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি ও ফ্লেভানয়েড যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়াও খেতে পারেন পেঁপে কারন পেঁপে হজম শক্তি বৃদ্ধি করে। এবং একই সাথে কলা এবং কমলা লেবু খান কারন এই দুইটি উপাদান আমাদের পাকস্থলীর সোডিয়ামের মাত্রা অনেক কমিয়ে আনে।
৫: এক কোয়া রসুন– অতিরিক্ত গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তির উপায় হিসেবে এক কোয়া রসুন খান। কারন রসুন পাকস্থলীর অতিরিক্ত এসিড নিঃসৃত হওয়াকে বাধাপ্রাপ্ত করে। নিয়মিত এটি খেলে অবশ্যই এই সমস্যা হতে মুক্তি পাবেন।
উপরে উল্লেখিত উপায় গুলো হলো গ্যাস্ট্রিক নিয়ন্ত্রণের এবং নিরাময়ের প্রাকৃতিক উপায় যার কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। তাই এসকল উপায় অবলম্বন করলে ঔষধের উপর নির্ভরযোগ্যতা অনেকাংশে কমে যাবে এবং সুস্থ থাকতে পারবেন। কারন ঔষধ সেবন কখনোই ভালো নয় যদি প্রাকৃতিক সমাধান থাকে।