সময়ের মূল্য রচনা
ভূমিকা: মাত্র তিনটি অক্ষরের মাধ্যমে সৃষ্ট একটি শব্দ ‘সময়’। আভিধানিক বিশ্লেষণে এর ইংরেজি হলাে Time। যার অর্থ ব্যাপৃতি (duration),আয়ুষ্কাল, সংঘটনকাল ইত্যাদি। তবে প্রকৃত অর্থে সময় অনাদি, অনন্ত, অদৃশ্য, নিরাকার অথচ চিরনিত্য। সময়ই মানবের জীবনাকাশে উন্নতির সূর্যোদয় ঘটায়, আবার সময়ই মানবজীবনে এনে দেয় অবনতির অমানিশা। সত্যিই সময় পৃথিবীর সাক্ষী। অথচ আমরা সময়ের কোনাে মূল্য দিতে রাজি নই। ফলে আমাদের সফলতার পাল্লা ক্রমশই হালকা হচ্ছে। কথায় আছে, “Time and tide wait for none.” তাই আমাদের মনে রাখতে হবে-জীবনকে ভালােবাসলে সময়ের অপচয় অনুচিত। কেননা জীবন বাস্তব অর্থে সময়ের যােগফল। Read more: নৌকা ভ্রমন রচনা
সময়ের মূল্য : এ পৃথিবীতে স্রষ্টা সময় না দিয়ে মানুষের ওপর কিছুই চাপিয়ে দেননি। অর্থাৎ প্রতিটি কর্মের জন্য প্রয়ােজনীয় সময় তিনি ঠিকই আমাদের দিয়েছেন। কিন্তু আমরা তার সদ্ব্যবহার করি না। আর তাইতাে চেস্টার ফিল্ড-এর দৃপ্ত উচ্চারণ- “সময়ের মূল্য তােমরা জান। সুতরাং যেমন করে পার সময় ছিনিয়ে নাও, অবরােধ কর এবং তার প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগাও অর্থাৎ সদ্ব্যবহার কর।” আমাদের সমাজের দিকেই তাকানাে যাক। আমরা সবচেয়ে বেশি অপচয় করি সময়। এ সময়ের মূল্য/সদ্ব্যবহার’ রচনাটি আয়ত্ত করার মতাে সময়ই আমাদের মতাে ছাত্ররা আজ পায় না। বেহুদা সময় নষ্ট করার পর তাদের উত্তর একটাই; এটি আয়ত্ত করার সময়ই পাইনি। অথচ আমরা কেউ বুঝতে চাই না আজকের এ অল্প সময়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে জীবনের পূর্ণতা। কারণ গতকাল তাে অতীত। আগামীকাল অনাগত। কিন্তু আজ যদি ভালােভাবে বাঁচা যায়, তাহলে গত দিনগুলাে সুখের স্মৃতি হয়ে দেখা দেবে আর আগামী দিনগুলাে আশায় ভরে উঠবে। সময় কেবল মূল্যবানই নয়, অমূল্য। Smiles বলেছেন, “Lost property can be gained by hard labour, lost health can be gained by medicine, but time, once lost is lost forever.” সময় বয়ে চলে অজান্তে। Milton-এর সনেটে আছে—”Time is the subtle thief.”
সময়ের সদ্ব্যবহার : মানবজীবন সংক্ষিপ্ত । কার হাতে কতটুকু সময় আছে তা কারাে জানা নেই। তাই প্রতিটি মুহূর্তের সদ্ব্যবহার জরুরি। এ কথা ভুললে চলবে না যে, মানুষ বাঁচে তার কর্মের মাঝে । সময়ের সদ্ব্যবহার করতে হলে আমাদের ত্যাগ করা দরকার-আলস্য, বিলাসিতা ও অবাস্তব কল্পনা।ছাত্রজীবনে সময়ের সদ্ব্যবহার তার যাত্রাকে করে আলােকিত। এ সময়ে সময়ের সদ্ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতা তাদের পঠন-পাঠন থেকে শুরু করে চরিত্র গঠনের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রাখে । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, জনৈক বন্ধু মাইকেল মধুসূদনকে খেলার জন্য চিঠি লিখলে প্রত্যুত্তরে এ মহাকবির বক্তব্য ছিল, “I am not only a school boy, here is my routine”. রুটিনে বন্ধুকে তিনি জানিয়েছিলেন—নিত্যদিনের স্কুল পাঠের পাশাপাশি তার হিন্দি, উর্দু, সংস্কৃত, ইংরেজি, তামিল, ল্যাটিন, হিব্রসহ মােট ১২টি ভাষা শিক্ষাও পাঠ্যসূচিভুক্ত। পৃথিবীর যত বিখ্যাত মনীষীদের জীবন বৃত্তান্ত লক্ষ করা যায় তার প্রতিটিতেই সময়ের সদ্ব্যবহারের দিক সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়। তাই এ সম্পর্কে এখন থেকেই আমাদের সচেতন হতে হবে।সময়ের মূল্য অনুধাবনেই জীবন তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। সময়ের সদ্ব্যবহারই জীবন আর অপচয়ই মৃত্যু। তাই স্বভাবতই আমাদের ওপর কিছু কর্তব্য বর্তেছে যার মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব ও সম্মান অর্জনে আমরা সক্ষম হব। আর সে লক্ষ্যেই সময়ের সদ্ব্যবহার জরুরি।
সময়ের সফল ব্যক্তি ও জাতির উদাহরণ : জগতের প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিদের ইতিহাস পর্যালােচনা করলে দেখা যায় যে, তারা কেউই সময়ের মূল্য সম্পর্কে উদাসীন ছিলেন না। কোনাে রকমের অলসতা এবং জড়তা তাদেরকে আচ্ছন্ন করতে পারেনি। আব্রাহাম লিংকন শ্রমিক থেকে হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের কৃতী প্রেসিডেন্ট। এরিস্টটল একজন গৃহ শিক্ষক থেকে হয়েছিলেন জগদ্বিখ্যাত দার্শনিক। এছাড়াও নজরুল, নিউটন, আইনস্টাইন, এডিসন, রবীন্দ্রনাথ প্রমুখের নামও এক্ষেত্রে বেশ জোরের সাথেই বলা যায়। অন্যদিকে সময়নিষ্ঠ জাতির মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলাে- ইংরেজ, আমেরিকান, জাপানি,ভিয়েতনামি, কোরিয়ান, জার্মান। এসব দেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলাে সময়ের সদ্ব্যবহার। এ প্রসঙ্গে নেপােলিয়নের একটি উক্তি তুলে ধরছি। তিনি বলেছেন, “আমি অস্ট্রিয়ানদের পরাজিত করেছি। তার কারণ হলাে, তারা পাঁচ মিনিট সময়ের মূল্য অনুধাবন করতে পারে নি।”
উপসংহার : পরিশেষে রাসকিনের ভাষায় বলতে হয়, “ জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত শত কর্ম সম্ভাবনার আশায় স্পন্দমান- তার এক মুহূর্ত গত হলে সেই ক্ষণের নিরুপিত কর্ম আর হবে না। মনে রাখবে, ঠাণ্ডা লােহার ওপর অসময়ের হাতুড়ির ঘা পড়লে কোনাে লাভ নেই ।”