Are you searching for valobashar golpo to read or share ? That we say valobashar golpo in bengali language. Here i am talking about valobashar golpo in bangla not love story in english. So i have given the title of this post is “Valobashar romantic Golpo“. If you want to read valobashar golpo in fully bangla language, than please click below link to get full golpo. Bangla love story
Bangla valobashar golpo:
রেললাইনের পাশে মেয়েটার একটা হাত ধরে হাঁটছি।অন্য হাতে একগুচ্ছ গোলাপ ফুল।মেয়েটা অঝরে কেঁদে যাচ্ছে।হাঁটা থামিয়ে একটা বেঞ্চে বসলাম।মেয়েটার মাথায় হাত রেখে বললাম, “কি হয়েছিলো,বলবিনা?”।
মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে মুখ সরিয়ে নিল। জিজ্ঞেস করলাম,”নাম কি?”
“রাহেলা”,ক্ষীণ কণ্ঠে জবাব দিলো মেয়েটা।
আর কিছু বললাম না আমি।চুপ করে বসে রইলাম।
আসরের ওয়াক্ত হয়ে গেছে,মসজিদে আজান দিচ্ছে।মেয়েটা এখন আর কাঁদছে না। সামনে একটা বাদামওয়ালা বাদাম বিক্রি করছে।
জিজ্ঞেস করলাম,”আমাকে বাদাম খাওয়াবি?”
মেয়েটা সম্ভবত আমার প্রশ্ন বুঝেনি। জিজ্ঞেস করলো ,”কি?”
আবার বললাম, “বাদাম খাওয়াবি আমাকে?”
মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। শেষে নিজের ছেঁড়া ফ্রকের কোনায় বাঁধা গিট্টু খুলার চেষ্টা করতে লাগলো। অনেক চেষ্টা করার পর গিট্টুটা খোলার পর গিট্টুর ভেতর থেকে একটা দুমড়ানো পাঁচ টাকার নোট,আর একটা বিশ টাকার নোট বের হলো। আমার দিকে তাকিয়ে কাচুমাচু করে মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো, “পাঁচ টাকায় হইবোনা?”
আমি উত্তর দিলাম ,”না। আমার তিরিশ টাকার বাদাম লাগবে। খিদা পেয়েছে।”
“আমার কাছে তো পঁচিশ টেকা আছে খালি।”,মেয়েটা ভয়ে ভয়ে উত্তর দিলো।
আমি কিচ্ছুক্ষন নীরব হয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইলাম। জিজ্ঞেস করলাম,’ বাদাম খাবি?’
মেয়েটা হা করে তাকিয়ে রয়েছে।
হয়তো ভাবছে কোন পাগলের খপ্পরে পড়লাম। একবার বলে খাওয়াবি,আরেকবার খাবি।
আমি উঠে গিয়ে বাদাম আনতে গেলাম।গুনে গুনে ৫০ টাকার বাদাম নিলাম।বাদাম কেনা শেষ করে পিছনে তাকিয়ে দেখি মেয়েটা নেই।
চুপচাপ বেঞ্চে গিয়ে বসলাম। একটা একটা করে বাদাম ছিলছি আর মুখে ঢুকাচ্ছি।
মেয়েটা একটু পরেই ফেরত আসবে। তার ফুলগুলো এখনো আমার হাতে।এগুলো ছাড়া সে বাঁচতে পারবেনা। বেঁচে থাকার জন্য তার এই ফুলগুলো দরকার।
মেয়েটাকে আমি পেয়েছি একঘন্টা আগে। রাস্তা দিয়ে আসছিলাম। দেখি রীতিমত গুন্ডার মতো একটা ছেলে টং দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে মেয়েটাকে শাসাচ্ছে। পাশে তার ছেলে বন্ধুগুলো সিগারেট টানছে আর মজা নিচ্ছে। কাছে গিয়ে শুনলাম মেয়েটাকে ছেলেটা বলছে, “ফাইজলামি করো, না? ধান্দাবাজি? আমাদের এলাকায় ডাবল দামে ফুল বেচস?পাঁচ টাকার ফুল পনেরো টাকা চাস?”
কাছে গিয়ে বললাম, “কিরে ভাই? সমস্যা কোনো? আমার বোনকে কি বলেন?কিরে বকুল, কি হইসে?”
কথার ধাঁচ শুনে এমন গুন্ডার সাইজ ছেলেও কেমন জানি হকচকিয়ে গেল। আমি কিছু না বলে হাত ধরে মেয়েটাকে নিয়ে চলে আসলাম।
এরপর থেকেই মেয়েটা আমার কাছে বন্দি। ভয় পেয়েছে প্রচুর। আমাকেও ভয় পাচ্ছে।অবশ্য ভয় পাবারই কথা। কত আর হবে বয়স, দশ কি বারো? আমি তার উপকার করেছি বলে আমাকে ছেড়ে যেতেও পারছেনা।
দশ মিনিট পর মেয়েটা ফেরত আসলো। সাথে তার থেকেও পিচ্চি একটা ছেলে।সাহস জোগাতে এনেছে সম্ভবত। ছেলেটাও ভয় পাচ্ছে।
মেয়েটা ভয়ে ভয়ে বললো, ভাই আমার ফুলগুলো দিবেননা?
আমি বললাম,”কত নিবি?”
ফুল নেয়ার কথায় মেয়েটার চোখ চিকচিক করতে লাগলো।
-“১০ টেকা পিচ,স্যার”
-” এক্ষুনি তো ভাই ডাকছিলি। এখুনি আবার স্যার?”
-অভ্যাস হইয়া গেছে ।
– ওই সময় কত চেয়েছিলি? গুন্ডা গুলোর কাছে?
-১৫ টেকা।
-৫টাকা বেশি চাইলি কেন?
– সারাদিন ফুল বিক্রি হয়নাই। টেকা না নিলে খালায় বকব। তাই বাড়ায় কইছিলাম।
আমি পকেট থেকে কয়েকটা ১০০ টাকার নোট বের করলাম। দুশো টাকা দিয়ে বিশটা ফুল কিনে বললাম, “কখনো কাস্টমার ঠকাবিনা। দরকার হলে না খেয়ে থাকবি।”
পাশে ছেলেটার দিকে ইঙ্গিত করে বললাম,”কে?”
-” ছোডো ভাই আমার”।
একটা ১০০টাকার নোট ছেলেটাকে দিলাম।
বললাম,” বাসায় যা।”
বাচ্চা দুটো দৌড়ে এসে সালাম করলো। তাদের মাথায় দুটো টোকা দিয়ে উঠে এলাম।
মাগরিবের আজানের আধা ঘন্টা বা তারও একটু আগের সময় বিকেলটা কেমন যেন শুভ্র থাকে।একটা রিকশা ঠিক করলাম গুলিস্তানের কবরস্থান পর্যন্ত।
রিকশাতে চড়তে আমার ভালোই লাগে।তাও এই সময়। আকাশে হালকা হালকা মেঘ জমছে। বিজলিও চমকাচ্ছে। রিকশাওয়ালা গান গাইতে গাইতে রিকশা টানছে।আমার হাতে বিশটা গোলাপ।
পৌঁছানোর পর রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম,ভাই কি আবার ফেরত যাবেন?
রিকশাওয়ালা বেশ বিনয়ী।বললো, “হ ভাই।আমি দাঁড়ামু?”
বললাম,”দশটা মিনিট অপেক্ষা করেন।”
কবরস্থানে ঢুকে একদম কোনার দিকে চলে গেলাম। শেষ মাথায় প্রিয় কবরটার পাশে একটা জবা গাছ লালে লাল হয়ে আছে। ফুলগুলো কবরটার উপর রাখলাম। কবর জিয়ারত শেষ করতে করতেই বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। দৌড়ে রিকশার কাছে এসে দাঁড়ালাম।রিকশাওয়ালা কথা রেখেছে।এখনো দাঁড়িয়ে আছে।রিকশায় উঠার আগেই মাগরিবের আজান পড়লো।পাশেই মসজিদ। আসরের নামাজটাও পড়া হয়নি। রিকশাওয়ালাকে বললাম, “ভাই আপনি চলে যান।নামাজ আছে।”
রিকশাওয়ালা উত্তর দিলো, “সমস্যা নাই ভাই ।আমিও নামাজ পরমু আপনের লগে।”
হাসি দিয়ে বললাম,”চলেন।”
মসজিদ থেকে বের হয়ে দেখলাম আকাশ ফকফকে। রিকশায় উঠলাম।ঠান্ডা হাওয়া বইছে।
“ভাই এখানে কার কবর ছিল আপনের? কওয়া যাইবো?’,রিকশাওয়ালা রিকশা টানটা টানতে বললো।
আমি হাসি দিয়ে বললাম,”ছোটবোনের। দুই বছর আগে মারা গেছে।”
রিকশাওয়ালা আর কথা বললোনা।চুপচাপ রিকশা টানতে থাকলো।
আমার বোনটার নাম ছিল বকুল।বকুলকে আমি দেখতে পারতামনা।মার আশেপাশে সারাক্ষন ঘুরতো।মা ওর সাথে হাসতেন,খেলতেন। মা যদিও দুজনকেই আদর করতেন ।তবে আপন সন্তান বলে আলাদা আদর পাইনি।বকুল ছিল রাস্তায় পাওয়া। বকুল থ থ আওয়াজ বের করে হামাগুড়ি দিয়ে এসে আমাকে কামড় দিত।আমি সাথে সাথে ভে করে চিল্লানো শুরু করতাম। আমার চিল্লানো দেখে বকুলও কাদা শুরু করতো। প্রথম প্রথম মা দৌড়ে আসতো। পরে দিয়ে আর পাত্তা দিত না।দুই ভাইবোন শুধু শুধু চিল্লাতাম
,মা কানেও নিতেন না।চিল্লাচিল্লির এক পর্যায়ে বকুল মজা পাওয়া শুরু করতো।এটাকে একটা খেলা ভেবে খিক খিক করে দাঁত বের করে হাসি দিত।
হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পর প্রত্যেকদিন কথা থেকে যেন ফুল নিয়ে আসত মেয়েটা। বলতো,”ভাইয়া আমার বিয়েতে গোলাপ দিয়ে স্টেজ সাজাবি। ভীষণ ভাল্লাগে।”
আমি ভেংচি কেটে বলতাম,” তোকে কে বিয়ে করবে শুনি?”
-“কেন, পারুল আপুর ভাই?”
আমি চুপ হয়ে যেতাম। বেয়াদপটা জানত যে আমি পারুলকে পছন্দ করি।
মা আমাদের খুনসুটি দেখে হাসতেন।আমার গা জলত।
সেদিন ছিল পহেলা ফাল্গুনের আগের দিন।
বাসায় এসে বকুল আমার কাছে বায়না ধরলো, “ভাইয়া আমাকে ফুল এনে দেনা।কালকে ফুল দিয়ে সাজবো।”
“যা তো,দিন দিন ফাজিল হচ্ছে। এত সাজ কিসের? বয়স কত তোর?”,বলে জোরে একটা ধমক দিলাম।
মেয়েটা কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে চলে গেল।
নির্ঘাত কাঁদবে এখন দরজা বন্ধ করে।
কাঁদুক।ইচড়ে পাকা কোথাকার।
অথচ সেদিন সকালেই আমি পারুলকে গাদা ফুলের মালা কিনে দিয়েছিলাম।মনে মনে তাকে পরদিন হলুদ পরির সাজে দেখার কল্পনা করছিলাম।
পহেলা ফাল্গুনে পারুলের সাথে বের হলাম।
ঘুরাঘুরি শেষে ফুলের দোকান থেকে বকুলের জন্য একটা মালা কিনলাম।মেয়েটার জন্য খারাপ লাগছিলো।ফুলই তো চেয়েছে শখ করে।
ফুল কিনে খুশিমনে বাসার গলির মুখে দোকানের সামনে পৌঁছাতেই দোকানদার বললো, “তাড়াতাড়ি বাসায় যান।বকুলের একসিডেন্ট হইছে।খারাপ খবর।”
দুনিয়াটা অন্ধকার হয়ে গেলো।দৌড়ে বাসায় গেলাম।বাসার সামনে জটলা।দেখলাম একটা খাটিয়ায় বকুল শুয়ে আছে।
আমার ফুল কিনতে ভীষণ দেরি হয়ে গিয়েছিল।ভীষণ।
“ভাই যাইবেন কই?”,রিকশাওয়ালার ডাকে ধ্যান ভাঙলো।
বললাম ,”সামনে ডানে রেখে দেন।”
রিকশাওয়ালা ভাড়া নিলোনা।কেন কে জানে।
আমি হাঁটছি।
কোন দোকানে যেন গান বাজছে,
“বকুল ফুল ,বকুল ফুল..
সোনা দিয়া হাত কেন বাঁধাইলি..”
#বকুল_কথা
লেখিকা: ফারিয়া তমা