ওজন কমানোর সহজ উপায় নিয়ে আলোচনা করছি । আশা করি কাজে আসবে । বর্তমান সময় অতিরিক্ত ওজনের সমস্যা বেশিরভাগ মানুষের ভিতর দেখা যায়। এর অন্যতম কারন হলো অনিয়মিত জীবনযাপন এবং শ্রমের প্রতি অনিহা। দিন দিন আমাদের যান্ত্রিক জিবনের কারনে আমরা শ্রমবিমুখ হয়ে পড়ছি। অতিরিক্ত ওজন একদিকে যেমন আমাদের দৈহিক সৌন্দর্য নষ্ট করে।তেমনি আমাদের বিভিন্ন রোগের দিকে ঠেলে দেয়। এর ফলে ডায়বেটিস সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ আমাদের শরীরে দ্রুত বাসা বাঁধে। আর একারনে দ্রুত ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে আমাদের সকলেরই ধারনা থাকা দরকার। ওজন কমানোর উপায়কে আমরা যদি দুইটি ভাগে ভাগ করি যেমন প্রাকৃতিক উপায় এবং ঔষধের মাধ্যমে। বাজারে অনেক ধরনের দ্রুত ওজন কমানোর ঔষধ পাওয়া যায়। যেগুলো আমাদের ওজন খুব দ্রুত কমিয়ে দেয় ঠিকই।কিন্তু আমরা কি কখনো চিন্তা করি এর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া গুলো কি হতে পারে।অনেক ঔষধ আমাদের ওজন কমানোর পরিবর্তে বিভিন্ন রোগের দিকে ঠেলে দেয়। তাই আমাদের সকলেরই উচিত প্রাকৃতিক উপায়ের উপর আস্তা রাখা।আসুন তাহলে চটজলদি দ্রুত ওজন কমানোর কয়েকটি প্রকৃতি ও অব্যার্থ উপায় সম্পর্কে জানি-
ওজন কমানোর সহজ উপায়
১:দৈনন্দিন জীবনযাপন ও খাদ্য অভ্যাসের পরিবর্তন-অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু মানুষ স্লীম ফিগারের অধিকারী। কিন্তু হটাৎ করেই তাদের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে।তাদের এই দ্রুত ওজন বৃদ্ধির মূল কারন হতে পারে তাদের অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন।হটাৎ করেই কর্মবিমুখ হয়ে পড়া এর অন্যতম কারন।আমরা জানি, আমরা যেসকল খাদ্য গ্রহণ করি তা আমাদের শরিরে ক্যালরি হিসেবে জমা হয়।এবং এই ক্যালরি থেকে আমরা কাজ করার শক্তি পাই।কিন্তু এই ক্যালরি গ্রহনের পাশাপাশি তা খরচ না করি তখন তা শরীরে চর্বি হিসেবে জমা হতে থাকে। যা আমাদের ওজন বৃদ্ধির প্রধান কারন।এই কারনে আমাদের প্রতিদিন যে পরিমান ক্যালরি গ্রহন করা হয় তা খরচ করা উচিত।তাহলে আর শরীরে চর্বি জমতে পারবেনা আর মোটা হওয়ার ঝুঁকি কমে যাবে।
আরো দেখুনঃ কিডনি ভালো রাখার উপায়
ওজন কমাতে হলে আমাদের সবচেয়ে জরুরি যেসকল খাবার ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী তা চিন্হিত করা এবং খাদ্য তালিকা থেকে তা বাদ দেওয়া।এর জন্য আমরা একটি খাদ্য তালিকা তৈরি করে নিতে পারি।এই তালিকায় যেসকল খাবার থাকবে তা হলো,বিশেষ করে অতিরিক্ত ক্যালরি যুক্ত ও মিস্টি জাতীয় খাবার সম্পুর্ন রুপে বাদ দিতে হবে।প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় একটি প্রোটিন যুক্ত খাবার ও একটি চর্বিযুক্ত খাবার রেখে বেশি পরিমান পুষ্টি সমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজি রাখা যেতে পারে।প্রোটিনের উৎস হিসেবে গরু বা মুরগীর মাংস,সামুদ্রিক মাছ,চিংড়ি, ও ডিম রাখা যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে ওজন কমাতে চাইলে অতিরিক্ত প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। তবে একদম বাদ দিলেও চলবেনা।কারন প্রোটিন যুক্ত খাবার খাওয়া একবারে বাদ দিলে শরীরে পুষ্টি ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর ফলে শরীর দূর্বল হয়ে যাবে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।
২:প্রচুর পরিমানে পানি পান করা- পানি আমাদের শরীরের থাকা বিভিন্ন ধরনের টক্সিন বের করে দেয়। এবং পানি চর্বি কমানোর জন্য পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এছাড়াও পানি পান করলে যাদের অতিরিক্ত ক্ষুদা লাগে তাদের জন্য উপকার হবে।খাবার আগে এক গ্লাস পানি পান করা উচিত। এতে খাবার সময় অতিরিক্ত পরিমাণ খাওয়া নিয়ন্ত্রণ হবে।এবং খাদ্য হজমেও সহায়তা করবে। তবে একবারে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করলে অস্বস্তি বোধ হতে পারে। তাই বারে বারে অল্প পরিমাণ পানি পান করুন।
৩:নির্দিষ্ট সময় খাদ্য গ্রহন– ওজন কমানোর জন্য নির্দিষ্ট সময় খাদ্য গ্রহণ অতন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারন সঠিক সময়ে খাদ্য গ্রহণ না করলে তা বিপাকে সমস্যা সৃষ্টি করে। অপরদিকে মোটা হওয়ার ঝুঁকি অনেক গুন বাড়িয়ে দিবে। সকলের খাবার ৭ টা থেকে ১০ টার ভিতরেই সেরে নিতে হবে।দুপুরের খাবার ১ টা থেকে ২ টা মধ্যে খেতে হবে। এবং রাতের খাবার কখনোই বেশি রাত করে খাওয়া উচিত না। বেশি রাতে খাবার খেলে তা হজম হয় না। এবং আমাদের শরিলকে মোটা করে।এই নির্ধারিত সময়ে তিন বেলার খাবার খেতে হবে।এবং খাবার ধীরে সুস্থে চিবিয়ে খান।এতে খাবার পরিপাক ভালো হবে।এবং পেট পরিষ্কার রাখতে সহযোগিতা করবে।
৪:ফাস্ট ফুট এবং ভাজাপোড়া খাওয়া পরিহার করুন -ফাস্টফুড এবং ভাজাপোড়া মোটা হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।কারন ফাস্ট ফুড ভাজাপোড়া প্রচুর পরিমাণ তেল এবং চর্বিযুক্ত উপাদান থাকার কারনে এটি ওজন কমানোর জন্য বাঁধা হয়ে দাড়ায়।তাই এগুলো পরিহার করে ঘরে তৈরি খাবারের দিক ঝুক দিন।প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণ শসা, টমেটো ও পপকর্ন জাতীয় খাবার খান।এসকল খাবার একদিন যেমন লো ক্যালরি অন্যদিকে এগুলো আপনার ক্ষুধা কমিয়ে দিবে।তাই অতিরিক্ত খাওয়ার আশংকা কমে যাবে।
৫:দিনের বেলা ঘুমানো বাদ দিন- একটি মানুষের দৈনিক ৮ ঘন্টা ঘুমানো উচিত। তবে কখনোই দিনের বেলা ঘুমানো উচিত না। দিনের বেলা ঘুমালে মোটা হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পেতে পারে।তাই রাতে বেলা ৮ ঘন্টা ঘুমান কিন্তু দিনের বেলা ঘুমানো সম্পুর্ন রুপে পরিহার করুন। ওজন কমানোর সহজ উপায় .
৬:কাজকর্মে পরিবর্তন আনুন- যদি দ্রুত ওজন কমানোর ইচ্ছে থাকে তাহলে দৈনন্দিন কাজ কর্মে পরিবর্তন আনুন।যেমন সল্প দুরত্বে যাতায়াতের জন্য রিক্সা বা গাড়ি ব্যবহার পরিহার করুন।এবং এর পরিবর্তে পায়ে হেঁটে যাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। লিফট ব্যবহার করার পরিবর্তে সিড়ি ব্যবহার করুন।এছাড়া দৈনন্দিন জীবনের কাজকর্ম নিজের হাতে করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।যেমন ঘর ঝাড়া মোছা,প্রতিদিনে বাজার করা ইত্যাদি কাজগুলো এবং নিজেকে যতটা সম্ভব পরিশ্রমের কাজের সাথে সংযুক্ত করুন।কারন পরিশ্রম করলে আমাদের ক্যালরি গুলো খরচ হবে।এর ফলে ওজন কমানোর ক্ষেত্রে অনেক ভালো ফলাফল অর্জন করতে পারবেন।
৭:নিয়মিত ব্যায়াম করুন- ব্যায়াম আমাদের সবার জন্য দরকারী একটি উপাদান।তাই প্রতিটি মানুষের উচিত দৈনিক ব্যায়াম করা।ব্যায়ামের ফলে শরীর সুস্থ ও রোগ মুক্ত হয়।তবে অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য নির্দিষ্ট ব্যায়াম করা উচিত।এর জন্য আমরা ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যায়াম করা।তবে বয়স ভেদে অনেক ব্যায়াম অনেকের জন্য প্রযোজ্য হয় না।কিন্তু সকল বয়সের মানুষের জন্য হাটা একটি প্রচুর ফলদায়ক উপায়। প্রতিদিন সকালে অন্তত পক্ষে আধা ঘণ্টা হাটলে এবং ব্যায়ার করলে শরীরে অতিরিক্ত ওজন দ্রুত কমতে শুরু করবে।
উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে কোন প্রকার ঔষধ ছাড়াই দ্রুত সময়ের ভিতরে অতিরিক্ত ওজন কমানো সম্ভব।
অতিরিক্ত ওজন কমানোর উপায় সম্পর্কে কয়েকটি উপায় তো জানলাম।এবার ওজন কমানোর ক্ষেত্রে কয়েকটি ভূল ধারনা সম্পর্কে সংক্ষেপো জেনে নেই –
১: ডায়েট কন্ট্রোল এবং না খেয়ে থাকা ওজন কমানোর সহজ উপায় – একটি মানুষের দৈনিক ৩ বার খাওয়া দরকার।কিন্তু ওজন কমানোর জন্য যদি আপনি একবেলা না খেয়ে থাকেন তখন শরীরে ঘাটতি দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক।এর ফলে পরবর্তী বেলায় যখন খাবেন তখন বেশি খাওয়া হয়ে যাবে।অপরদিকে ডায়েট কন্ট্রোলের নামে দেহে যেসকল পুষ্টি উপাদান অপরিহার্য সেসকল উপাদান সমৃদ্ধ খাবার বাদ দিলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
২:অনেক রাতে খাবার খেলে ওজন বৃদ্ধি পাবে – অনেক রাতে খাবার ওজন বৃদ্ধির কারন ঠিকই। কিন্তু প্রধান বিষয় হলো আপনি কতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করলেন এবং খরচ করলেন।
৩:শুধু ডায়েট কন্ট্রোল করলেই ওজন কমবে ব্যায়ামের দরকার নেই-ডায়েট কন্টোল আমাদের শরীরের ক্যালরি গ্রহনের পরিমান হ্রাস করে।আপরদিকে ব্যায়াম আমাদের ক্যালরি খরচের একটি সুন্দর উপায়। তাই ডায়েট কন্ট্রোল পাশাপাশি ব্যায়াম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।