চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

চুল পড়া বন্ধ করার উপায় নিয়ে কিছু সুন্দর কার্যকরী আলোচনা করা হলো ।

আপনি যতই পরিপাটি থাকতে পছন্দ করেন না কেনো যখন খেয়াল করবেন আপনার চুল আলতো ছোঁয়ায় হাতের মুঠো বন্দী হচ্ছে তখন সব সৌন্দর্য্য নিজের কাছে মলিন বলে মনে হবে । তাই সময় থাকতে চুল পড়া এই সমস্যা থেকে খুব দ্রুতই বের হয়ে আসা উচিত। এই সমস্যার সবচেয়ে বড় সমাধান হচ্ছে চুলের সঠিক যত্ন। এর জন্য আপনি নানা ধরনের উপায় অবলম্বন করতে পারবেন। ঘরোয়া নানা চিকিৎসা তো রয়েছেই। আজকের টপিকসে আমরা আলোচনা করবো কিভাবে চুল পড়া সমস্যার সমাধান করা যায়।চুল পড়া বন্ধ করার উপায়

মানব সৌন্দর্য্যের বড় একটা অংশজুড়ে রয়েছে চুল। তাইতো চুলের সঠিক ভাবে যত্নের প্রয়োজন হয়। চুলের ভিন্ন ভিন্ন সাজে আপনার লুক ভিন্ন ভিন্ন দেখায়। তাই চুলের সৌন্দর্য্যের সাথে কোন ছাড় চলবে না।

অতিরিক্ত টেনশনের কারণে , সঠিক পুষ্টির অভাবে বা প্রতিদিন অন্তত আট ঘণ্টা না ঘুমোলে চুল পড়ার সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে। যদিও প্রতিদিন ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু চুল যদি আবার না গজায় তখন ধরে নিতে হবে আপনার চুলের সঠিক যত্নের প্রয়োজন।

চুল পড়া বন্ধ করার উপায় :

১. অবশ্যই গোসলের আগে চুলে তেল লাগিয়ে নিতে হবে, এতে শ্যাম্পু করার সময় চুল কম পড়বে। আবার রাতে ঘুমানোর আগে তেল ম্যাসাজ করতে পারেন চুলে। ধীরে, আলতো হাতে ম্যাসাজ করবেন চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত। পরদিন সকালে কেমিক্যাল ফ্রি বা ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। আর এরপর কন্ডিশনার ব্যবহার করুন।

আরো আছেঃ >>> চুল নিয়ে কবিতা

২. সপ্তাহে দুই দিন ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। এতে চুলের গোড়া শক্ত হবে এবং চুল হবে মোলায়েম, রেশমি।

৩. অ্যালোভেরার পাতা থেকে জেল সংগ্রহ করে ব্লেন্ড করে চুলে লাগিয়ে নিন, ১ ঘণ্টা রেখে কেমিক্যাল ফ্রি শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি চুল পড়া কমাবে পাশাপাশি মাথার ত্বকের চুলকানি ভাব এবং শুষ্ক চামড়া দূর করবে।

৪. ডিমের কুসুম ফেটিয়ে সামান্য অলিভ অয়েল ও লেবুর রস মিশিয়ে নিন, এখন মিশ্রণটি চুলে ঘণ্টা খানেক লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলুন মাইল্ড কোন শ্যাম্পু দিয়ে। এটি চুল পড়া তো বন্ধ করবেই, পাশাপাশি চুলের দ্রুত বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।

৫. শুকনো আমলকী রাতে ভিজিয়ে রেখে পরদিন সকালে চুলের গোড়ায় এবং পুরো চুলে সেই ভিজিয়ে রাখা আমলকীর পানি দিয়ে ম্যাসাজ করুন। এটি চুলের গোড়া শক্ত করতে সাহায্য করে এবং আমলকী প্রাকৃতিক ভাবে চুল সিল্কি করতে সাহায্য করে।

৬. পেঁয়াজের রস চুলের গোড়ায় ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। ধুয়ে ফেলুন ভেষজ শ্যাম্পু দিয়ে। পেঁয়াজের রস আপনার চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে সেই সাথে আপনার অনিদ্রার সমস্যা দূর করবে এই পেঁয়াজের রস।

৭. পরিমাণ অনুযায়ী লেবুর রস নিয়ে তাতে তুলা ভিজিয়ে চুলের গোড়ায় ভালো করে লাগিয়ে নিন এবং ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে।

চুল পড়া রোধে শ্যাম্পু :

চুল পড়া রোধে শ্যাম্পুর একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। বাজারে আপনি বিভিন্ন ব্র‍্যান্ডের হেয়ার ফল সলুশন পেয়ে যাবেন। তবে খেয়াল রাখবেন চুলে যত কম কেমিক্যালযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করা যায় তত ভালো। এক্ষেত্রে অনেক ব্র‍্যান্ডের ভেষজ শ্যাম্পু পাবেন। শ্যাম্পু কেনার আগে দেখে নিবেন এতে আমলকী, শিকাকাই, নিমের গুড়ো উপাদান হিসেবে আছে কি-না। আবার বায়োটিন বা ক্যারেটিন সমৃদ্ধ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। আর দুই মাস অন্তর অন্তর শ্যাম্পু চেঞ্জ করুন। এতে আপনার চুল পাবে প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং থাকবে স্বাস্থ্যজ্জ্বল।

চুলের যত্ন ও চুল পড়া বন্ধ করার উপায়  :

চুল পড়া শুরু হওয়ার আগে চুলের যত্ন শুরু করে দেওয়া উচিত । গুইচুলের যত্নে শ্যাম্পু করার পর অবশ্যই চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে হবে। তবে কন্ডিশনার চুলের গোড়ায় না লাগানোই ভালো। কন্ডিশনার দিয়ে তিন মিনিট পর নরমাল পানিতে চুল ধুয়ে নিন। এতে চুল হবে ঝরঝরে আর দেখতেও অনেকটা ঘন লাগবে। চুলের ভলিউম বাড়াতে চাইলে কন্ডিশনারের তুলনা নেই।

চুলের যত্নে হেয়ার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। আজকাল বাজারে বিভিন্ন ব্যান্ডের হেয়ার প্যাক পাওয়া যায়। আপনি পছন্দসই হেয়ার প্যাক কিনে প্যাকেটের নির্দেশনা অনুযায়ী চুলে ব্যবহার করতে পারেন। কোন হেয়ার প্যাক চুল পড়া রোধ করে, কোন হেয়ার প্যাক চুলে ভলিউম আনে আবার কোন হেয়ার প্যাক চুল করে সিল্কি। চাইলে ঘরেও নিজে চুলের যত্নে হেয়ার প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন- ঘৃতকুমারী, শিকাকাই, নিমের গুড়ো এবং আমলকী একই পরিমানে নিন। এরপর এগুলো মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে চুলে ব্যাবহার করুন । তারপর ঘণ্টা খানেক পর চুল নরমাল পানিতে মাইল্ড কোন শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন।

চুলের যত্নে হেয়ার স্ট্রেইটনার থেকে চুলকে দূরে রাখুন। রোজ রোজ চুলে তাপ দিয়ে চুল সোজা বা কার্ল না করাই ভালো। কারণ, এই গরম তাপ চুলের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। এতে চুল রুক্ষ হয় এবং চুল ভেঙে পড়ে।

সপ্তাহে একদিন চুলে তেল দিয়ে, গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে
চুলে প্যাচিয়ে রাখুন। এতে চুল পড়া বন্ধ তো হবেই সাথে নতুন চুল গজাবে এবং সেই সাথে চুল করবে নমনীয় ও মসৃন।

ঘনঘন চুলের কালার চেঞ্জ করবেন না। চুলের কালারে থাকে ক্ষতিকর অ্যামোনিয়া। যা আপনার চুলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। আর চুলের কালার কিছুদিন পরপর চেঞ্জ করার কারণে আপনার চুল হয়ে উঠে নিষ্প্রাণ, রুক্ষ এবং এটা চুল ভেঙে পড়ার জন্য দায়ী।

চুল পড়া রোধে খাবার :

অপুষ্টিতে চুল পড়তে পারে তাই চুলের যত্নের পাশাপাশি আপনার জন্য প্রয়োজন সুষম ও পুষ্টিকর খাবার। চুল, নখ এবং ত্বকের জন্য প্রয়োজন বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার।

বায়োটিন, যাকে ভিটামিন বি 7 বলে। এটি জল দ্রবণীয় ভিটামিন এবং এটি বি-জটিল ভিটামিন যা খাদ্যকে শক্তিতে রূপান্তর করতে সহায়তা করে। বায়োটিন চুল, নখ এবং ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে মূল ভূমিকা পালন করে থাকে।

বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবারগুলো হচ্ছে :

ডিমের কুসুম, বাদাম, লিভার, মাশরুম, ব্রোকলি, কলা, অ্যাভোকাডো, মিষ্টি আলু এবং দুগ্ধজাত খাবার। এই খাবারে পাবেন আপনি পর্যাপ্ত পরিমাণে বায়োটিন।

এই বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার শুধু আপনার চুলকেই নয়, আপনার নখ এবং ত্বক করে তুলবে ভীষণ প্রাণবন্ত।
চুল কেন পড়ে?

অপুষ্টি, অনিদ্রা বা টেনশন চুল পড়ার জন্য দায়ী হলেও চুল পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে হরমোনের সমস্যা। সেক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শে ওষুধ, শ্যাম্পু এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। আবার অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের পিসিওএস’এর কারণেও চুল পড়তে শুরু করে। তাই চুল পড়া রোধে চুল পড়ার কারণ নির্ণয় করা জরুরি।

চুলের যত্নে কতিপয় ভুল ধারণা :

আমরা মনে করি প্রতি মাসে চুলের আগা কাটলে চুল দ্রুত বাড়ে। তবে এ ধারণার কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি। তাই ঘনঘন চুলের আগা কাটার কোন দরকার নেই। তবে ছয় মাসে একবার চুলের আগা কাটা যেতেই পারে।

আমরা অনেকে মনে করি গোসলের সময় শ্যাম্পুর জন্য চুল বেশি পড়ে। না, এমনটাও ভাবা ঠিক না। তবে গোসলের আগে চুল আঁচড়ে এবং হালকা তেল দিলে চুল পড়া কমে।

আবার অনেকের ধারণা একটি পাকা চুল টেনে তুললে আরও দশটা পাকা চুল হয়। এটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ধারণা হলেও বহুল প্রচলিত আছে। তবে চুল টেনে না তোলাই ভালো। আর চুল যদি অল্প বয়সেই পাকা শুরু হয় তবে একজন হরমনের ডাক্তার দেখাতে ভুলবেন না। এতে আপনার পাকা চুল পুনোরায় কালো না হলেও অন্য চুল আর পাকার সম্ভাবনা কমে যাবে।

অনেকেই মনে করেন প্রতিদিন চুলে শ্যাম্পু করা চুলের জন্য ভালো। তবে প্রতিদিন চুল শ্যাম্পু করা উচিত না। এতে মাথার তালু শুষ্ক হয়ে খুসকির সমস্যা দেখা দেয়। আর চুল প্রাণবন্ত রাখতে একদিন পরপর চুল ভেজানোই উত্তম।

আমরা অনেক সময় মেয়েদের দেখি গোসলের পর চুলে তোয়ালে জড়িয়ে রাখে বা চুল খুব রুক্ষভাবে মোছে। এটা মোটেও উচিৎ নয়, কারণ গোসলের পর চুলের গোড়া নরম থাকে আর তোয়ালের রুক্ষ চাপে চুল ভেঙে আসতে শুরু করে।

তাই আজ থেকে চুলের সৌন্দর্যে আর একফোঁটাও ছাড় নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *