ভুতের গল্প

ভুতের গল্প পড়তে অনেক ভালো লাগে ,তাই এখানে কিছু ভুতের গল্প দেয়া হলো । আশাকরি এই ভুতের গল্প গুলো পড়ে অনেক ভয় লাগবে । কারন ভয় পাওয়ার জন্যই তো আমরা ভুতের গল্প পড়ে থাকি । ভালোবাসার গল্প । এরপর আরো কিছু ভুতের গল্প দেবো ।

ভুতের গল্প অদৃশ্য গানের টিচার:

বাবা বললেন ‘অফিসের কাজে মানিকগঞ্জে যেতে হবে’ এই কথা বলে তিনি শুয়ে পড়লেন । বিজু কে বাবা বললেন, আমাকে তুলে দিস তো ঘুম থেকে । বিজু হেসে বলে, আমিই উঠতে পারি কিনা ? বিজু ইলা আপুর পড়ার টেবিলের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো ।

আপু বাবাকে ভোরে ডেকে দিও । বাবাকে সকাল সাতটার মধ্যেই রওয়ানা দিতে হবে । মানিকগঞ্জ যাবেন ।

ইলা মোবাইল থেকে মুখ না তুলেই বললো ‘ঘড়িতে এলার্ম দিয়ে রাখ’ এলার্ম নস্ট ।
ইলা বললো, আমি জরুরি একটা স্ট্যাটাস লিখছি । তুই এখন যা । বিজু খাটের পাশে গিয়ে দেখলো বাবা নাক ডাকছেন । সে আবার ইলার কাছে গিয়ে বললো- আপু চলো ‘ বাবার নাক ডাকা রেকর্ড করি । ইলা খুশিতে নেচে উঠলো । চল, যাই ।

তারা দুজন বাবার নাক ডাকা রেকর্ড করে ফেললো । মাকে কিছু বলল না । ইলা মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো- আম্মু বাবাকে ভোর বেলা জাগিয়ে দিও । অফিসের কাজে মানিকগঞ্জ যাবেন । ঠিক আছে যদি আমার ঘুম ভাঙ্গে । আমি তো আবার ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাব ।

রাত বারোটার মধ্যে যে যার মতো ঘুমিয়ে পড়লো । ইলা বাবার মসারি টানাতে গেলে বাবা ডান কাত থেকে বাম কাত হলেন । কিছুক্ষণের জন্য তার নাক ডাকা থামল ।

ভোরবেলা ঘুম ভেঙ্গে গেল বিজুর বাবা রহিস উদ্দিন সাহেবের । তিনি শুনতে পেলেন ড্রইংরুমে বসে কেউ হারমোনিয়াম বাজাচ্ছে । উনি বিছানা ছেড়ে উঠে সেদিকে গেলেন । ড্রইং রুমের কোনায় গিয়ে দাঁড়ালেন । হ্যাঁ, তাইতো । কেউ একজন হারমোনিয়াম বাজাচ্ছে । সঙ্গে গান গাইছে ।

বসুন না, আপনার জন্যই বাজাচ্ছি , সঙ্গে গান গাইছি । আপনার ঘুমটা যাতে তাড়াতাড়ি ভাঙ্গে । আপনি তো অফিসের কাজে আজ বাইরে যাবেন । রহিস সাহেব বললেন, কে কথা বলছেন ? আপনাকে তো আমি দেখতে পাচ্ছি না ।

আমার নাম প্রাপ্তি । আমাকে আপনি দেখতে পাবেন না। কেউ কেউ আমাকে দেখতে পায়। সবাই পায় না। আমি কি আপনাকে আরেকটা গান শোনাতে পারি ?

রহিস সাহেব কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললেন- জি শোনান।
প্রাপ্তি নামের মেয়েটি খিলখিল করে হেসে উঠলো । সম্ভবত সে চুড়ি পড়েছে। তার হাতের চুড়িও ঝনঝন করে উঠলো।
বললো- আপনি ভয় পেয়েছেন রহিস সাহেব ?
না, না, ভয় পাবো কেনো ?

Read More >>  হাসির গল্প

প্রাপ্তি বলল, বাসায় আপনারা চারজন মানুষ । কেউ হারমোনিয়াম বাজান না । গান করেন না। এটা কি ঠিক ?
না, না, এটা মোটেই ঠিক না । এটা ভারি অন্যায় আমি আজই ওদেরকে হারমোনিয়াম বাজাতে বলবো । গান শিখতে বলবো ।
কথা শুনে প্রাপ্তি হাসলেন। বললেন, আপনি চাইলে আপনাকে আমি গান শেখাতে পারি। এখন থেকেই শুরু করা যেতে পারে।

কিন্তু আপনাকে তো আমি দেখতে পাচ্ছি না।
আমাকে দেখতে হবে না, আপনি আসুন আমার কাছে ।
রহিস সাহেব ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলেন সেদিকে। তার পা কাঁপছে। তিনি গিয়ে কার্পেটে জোড়-আসন করে বসলেন। বুঝতে পারলেন তার সামনে প্রাপ্তি হারমোনিয়াম ধরে বসে আছে।

চলুন শুরু করা যাক। সা রে গা মা পা দা নি সা । রইস উদ্দিন মিনমিন গলায় ধরলেন । মেয়েটা হেসে উঠল, এভাবে হবে না । আপনি গলা ছেড়ে দিয়ে রেওয়াজ করুন।
আবার, সা, রে, গা, মা
রেওয়াজ করতে করতে এক সময় সকাল হয়ে গেলো। রহিস সাহেবের রেওয়াজের শব্দে সবারই ঘুম ভেঙ্গে গেলো। তারা বিছানা ছেড়ে ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়ালো। দেখল, রহিস সাহেব চোখ বন্ধ করে, সা রে গা মা করছেন। সামনে হারমনিয়াম।

ইলা বললো- বাবা তোমার কি হয়েছে ? এরকম করছ কেন ? রহিস সাহেব চোখ খুললেন। কি হয়েছে মানে ? প্রাপ্তির কাছে গান শুনছিলাম। ইলার মা সাহানা বলেন- “প্রাপ্তি” ? প্রাপ্তিটা আবার কে ? তুমি কি পাগল হয়ে গেছো নাকি ?

বিজু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল, বাবা সাতটা বাজে । মানিকগঞ্জ যাবে না ? বাব হুড়মুড়িয়ে উঠল। তখনই দারোয়ান এসে বলল ” অফিসের মাইক্রবাস এসে দাঁড়িয়ে আছে। আপনাকে এক্ষুনি যেতে বলছে।

রহিস সাহেব ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আগে সেভ করবেন না দাঁত ব্রাশ করবেন ? আগে বাথরুম করবেন না গোসল করবেন ? নাশতাই বা কখন খাবেন ? তিনি কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না।

তার মোবাইলে অফিসের বস ফোন করলেন। জি রহিস সাহেব। আর কতক্ষন ? রহিস সাহেব বললেন “রেডি হতে হতে আমার আধা ঘন্টা তো লাগবেই ।
বলেন কি আপনি ? এটা কি কোন কথা হলো ?
অফিসের বস ড্রাইভারকে বললেন- রমিজ গাড়ি স্টার্ট দাও । উনি আমাদের সঙ্গে যেতে পারবেন না ।
রহিস সাহেব ঠিক আধা ঘণ্টা পড়ে নিচে নামলেন। দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলেন- তাকে রেখে গাড়ি চলে গেছে। মেজাজ খারাফ করে তিনি উপরে ওঠে এলেন।

Read More >>  কিভাবে প্রেম করতে হয়

কি হলো গেলে না বাবা ? রিজু জানতে চাইলো।
বাবা কোন কথা বললেন না। তিনি আর অফিসেও গেলেন না।
অনেক রাত হয়েছে, রহিস সাহেবের আজ আর ঘুম এলো না চোখে। অনেক রাত্রে প্রাপ্তি ডাকলো, আংকেল আসুন। আমি এসে গেছি। তিনি বিছানা থেকে উঠে যাবার সময় দেখলেন- বিজু তাকিয়ে আছে। বাবা জানতে চাইলেন কিরে ঘুমাস নি ?
‘না’
তাহলে আমার সঙ্গে আয় গান শিখবি ।
বিজু বাবার পিছন পিছন গিয়ে ড্রয়িংরুমের কার্পেটে বসলো। প্রাপ্তি জিজ্ঞেস করলো কোন ক্লাসে পড়ো তুমি ?
যাকে চোখে দেখা যায় না তার সঙ্গে আমি কথা বলি না। বিজু বলে । প্রাপ্তি হাসে।
আমাকে তো আপাতত দেখার কোন সম্ভাবনা নেই। তারপরও আমি চিন্তা করে দেখছি । তোমার সঙ্গে দেখা করা যায় কি না।
আজ বাবা ছেলে সা রে গা মা করলেন একসাথে। ভোর বেলা বিজুর মায়ের ঘুম ভেঙ্গে গেলো।
প্রাপ্তি বললেন- আন্টি আসুন না আমাদের সঙ্গে।

তিন জনের সা রে গা মা শুনে চোখ ডলতে ডলতে ইলা চলে এলো তার ঘর থেকে। সবাই সা রে গা মা করলো সারাক্ষন। সা রে গা মা করতে করতে বিজু সোফার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়ল।

ফজরের আজান পড়লো। প্রাপ্তি বললো আমি যাই, আবার আসবো। বিজুর মা জিজ্ঞেস করলো- তুমি কে আসলে ভুতটুত নও তো ? না, আন্টি আমি ভুতে বিশ্বাসী নই। এ কথা বলে সে চলে গেলো।

সকালে নাস্তার টেবিলে বসেছে সবাই। গত রাতের কথা সবার মুখে। শাহানা বললেন- হারমোনিয়াম টা জাগরণী ক্লাবে দিয়ে দেই। তাহলে হয়ত আর মেয়েটা আসবে না।
ইলা বলল, আরে মেয়ে টা গান শেখাচ্ছে অসুবিধা কি ? কারো ক্ষতি তো করছে না।
মা বললেন, বিষয়টা তো অস্বাভাবিক।
রহিস সাহেব বললেন, সন্ধ্যা হলেই আমার কেমন বুক ধড়পড় শুরু হয়। নাস্তা খাওয়ার পরই মা জাগরণী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আসাদ সরকারকে ফোন দিলেন। সে আধা ঘণ্টা পরেই বাসায় এসে হাজির । বলল ‘ধন্যবাদ আন্টি।
আমাদের একটা হারমোনিয়াম বেশ প্রয়োজন ছিলো । দেখি একটু বাজিয়ে দেখি।
নিয়ে যাওয়ার আগে একটা গান শুনাই আপনাদের।

কিন্তু শত চেষ্টা করেও আসাদ সরকার হারমোনিয়াম টি বাজাতে পারলেন না। আন্টি এটা তো নস্ট। এটা দিয়ে কোন কাজ হবে না। আমি যাই।
বিজুর মা বললেন- সরি আসাদ তুমি কিছু মনে করো না।

Read More >>  হাসির গল্প

মাস খানেক কেটে গেছে। এখন বাসার সবাই একটা আক্টু গান গাইতে পারে। রোজ রাতেই প্রাপ্তি আসে। মচমচ শব্দ করে মুড়ি চানাচুর খায়। চায়ে চুমুক দেওয়ার সময় শব্দ হয়। কিন্তু তাকে দেখা যায় না। অদৃশ্য হয়েই আছে।

আশপাশের সবাই জেনে গেছে বিজুরা সবাই গান গাইতে পারে। একদিন বিকেলে আসাদ সরকার এলো বাসায়। বলল- আন্টি আপনারা নাকি পুরো পরিবারের সবাই গান গাইতে পারেন ? পরশুদিন আমাদের সংগঠনের সাংস্কিতিক অনুস্থান।আপনাদের সবাইকে গান গাইতে হবে।
ইলা নেচে উঠে বলল- পত্রিকায় ছবি উঠবে তো আসাদ ভাইয়া ?
পত্রিকায় দেয়ার চেষ্টা করবো। তবে চ্যানেল আইয়ের ক্যামেরাম্যান আসবেন।
অনেক সুন্দর করে ষ্টেজ সাজিয়েছে জাগরণী সংঘ। অনুষ্ঠান শুরুর আগেই সব চেয়ার ভরে গেছে। হটাত একটি মেয়ে এসে বিজুকে জিজ্ঞেস করলো- খুব ভালো করে গান গাইতে হবে কিন্তু। আমি তোমাদের গান শুনতে এসেছি।
ইলার পাশে গিয়ে বলল- হায় আল্লাহ, হায় আল্লাহ তুমি দেখি নার্ভাস হয়ে পড়েছ। বুকে সাহস রাখো। নিশ্চয়ই তুমি অনেক ভালো গাইবে।

একই সঙ্গে চারজন মঞ্চে উঠলো। রহিস সাহেব, সাহানা, ইলা ও বিজু। তারা অসাধারন গাইলেন। করতালি আর থামতেই চায় না। অনেকে বলে উঠলো, ওয়ান মোর, ওয়ান মোর।
অনুষ্ঠান ঘোষক ঘোষণা করলেন- আমাদের পাড়ায় নতুন শিল্পী এসেছে, এখানে ভাড়া বাসা নিয়েছেন। তার নাম প্রাপ্তি রহমান। এখন আমরা তার গান শুনবো।
গান শুরু হয়ে গেলো তার, কিন্তু কিছুক্ষন পরই হই চই শুরু হয়ে গেলো । শিল্পী কই ? শিল্পীকে তো দেখতে পাচ্ছি না। আপনারা তো রেকর্ড বাজাচ্ছেন । শিল্পী কে মঞ্চে আসতে বলেন।
কিন্তু রহিস সাহেব, শাহানা, ইলা আর বিজু কিন্তু ঠিক দেখতে পেল প্রাপ্তি কে। অপূর্ব দেখতে লাগছে তাকে। গাইছেও খুব সুন্দর করে। পিনপতন নিরবতায় সে গান গাইছে।

বিজুর দিকে তাকিয়ে বেশ কয়েকবার হাসলেন প্রাপ্তি রহমান। ওরা চার জনই দেখতা পাচ্ছে প্রাপ্তিকে। কিন্তু বাকী কেউ দেখতে পাচ্ছে না । প্রথম গান শেষ হওয়ার পর চিৎকার করে বলে উঠলো সবাই। ওয়ান মোর, ওয়ান মোর।
অনুষ্ঠান শেষে প্রাপ্তি এসে বিজুর হাত ধরল, আজ থেকে আমি আর গান শেখাতে আসবো না। এখন থেকে তোমার একা একা গান শিখবে। ঠিক আছে ?

বিজু কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল- না ঠি নাই। প্লিজ তুমি আসবে। আমরা তোমার জন্য ওয়েট করবো ।

গল্প টি ভুতম্যান বই থেকে নেয়া হয়েছে।

You May Also Like

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *