আমার ছেলেবেলা রচনা

amar chelebela rochona

আমার ছেলেবেলা রচনা
অথবা, শৈশব স্মৃতি
অথবা, যখন ছোট ছিলাম

[সংকেত: ভূমিকা—শৈশব স্মৃতি বর্তমানের আমি উপসংহার]

ভূমিকা : আজকে যা বা ঘটনা, আগামী দিন তা স্মৃতি। প্রতিটি মানুষের শৈশবের কিছু স্মৃতি তার মনে উজ্জ্বল হয়ে বিরাজ করে। আমার জীবনেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। নিজের মনের অজান্তেই মাঝে মধ্যে আমি হারিয়ে যাই আমার শৈশবের ফেলে আসা দিনগুলােতে। আর তখন মনের মাঝে বেদনার একটি হালকা অনুভূতি বয়ে যায়। সত্যিই শৈশব স্মৃতি, স্নেহ-মমতা আর ভালােবাসার উপাদানে গড়া। তাইতাে আমার মন গেয়ে উঠে।

শৈশবের স্মৃতি আমাদের জীবনের একটি অমূল্য সম্পদ। আজকের ঘটনা কালকে হয়ে যায় স্মৃতি, আর সেই স্মৃতি আমাদের মনে থেকে যায় চিরকাল। আমার জীবনেও শৈশবের কিছু মুহূর্ত আছে, যেগুলো মনে পড়লে আজও হৃদয়ে একটা মিষ্টি অনুভূতি জাগে। মাঝে মাঝে আমি হারিয়ে যাই সেই দিনগুলোতে, আর মনে হয়—শৈশব যেন স্নেহ আর ভালোবাসার একটি রঙিন ছবি।

‘একবার যেতে দে না আমার ছােট্ট সােনার গাঁয়
যেথায় কোকিল ডাকে কুহু
দোয়েল ডাকে মুহু মুহু
নদী যেথায় ছুটে চলে আপন ঠিকানায়।”

শৈশব স্মৃতি

শৈশবের স্কুলজীবন

amar chelebela rochona

আমার শৈশবের অনেকটা সময় কেটেছে গ্রামের স্কুলে। আমার গ্রামের নাম বল্লা, কালিহাতী উপজেলার একটি ইউনিয়ন। প্রথম স্কুলে যাওয়ার কথা এখনও মনে আছে। তখন আমি ‘পুস্তক’ বই শেষ করেছি, কিন্তু বয়স কম হওয়ায় স্কুলে ভর্তি হতে পারছিলাম না। আমার মা আমার পড়ার আগ্রহের কথা শিক্ষক রশীদ স্যারকে জানালেন। তিনি আমাকে দুই টাকা ফি দিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ দিলেন। সেই প্রথম পরীক্ষায় আমি প্রথম হয়েছিলাম—সে আনন্দ আজও ভোলার নয়।
এরপর আমি বল্লা করোনেশন উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি নাটকে অংশ নিই। নাটকের নাম ছিল “প্রতিশোধ”। আমি মোহন চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। জীবনের প্রথম অভিনয় ছিল সেটি, আর সেই স্মৃতি আজও আমার মনে জ্বলজ্বল করে।

Read More >>  পহেলা বৈশাখ রচনা

 একটি গ্রাম হলেও অনেকটাই শহুরে ধাঁচে গড়ে উঠেছে গ্রামটি। তাই এখানে রয়েছে বৈচিত্র্য । প্রথমেই আমার শৈশবের স্কুলজীবনের সূচনার কথা বলি। তখন আমি সবে মাত্র ‘পুস্তক’ বই (মদন মােহন তর্কালঙ্কারের) শেষ করেছি। স্কুলে যাবার প্রবল আগ্রহ কিন্তু বয়সের কারণে স্কুলে যেতে পারছি না।

এ অবস্থায় আমার মেজ ভাইয়ের শিক্ষক রশীদ স্যারকে মা জানালেন আমার স্কুলে পড়ার আগ্রহের কথা। আমার বাড়ির সাথেই যে গার্লস হাই স্কুল আছে তারই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি। তিনি রাজি হলেন এবং দুই টাকা ফি দিয়ে পরীক্ষা দিতে বললে আমি তাই করলাম। জীবনের প্রথম স্কুলে যাওয়া এবং প্রথম পরীক্ষা। অসাধারণ এক অনুভূতি নিয়ে পরীক্ষা দিলাম।

ফল প্রকাশিত হলে আমি প্রথম হলাম। তখন যে কি আনন্দ লাগছিল তা ভাষায় বােঝানাে সম্ভব নয়। এর কিছুদিন পর আমাদের বাজারের স্কুল যার নাম বল্লা করােনেশন উচ্চ বিদ্যালয় এখানে একটি নাটক মঞ্চায়ন হয়। নাটকের নাম ছিল প্রতিশােধ’ । আমি ঐ নাটকে মােহনের অভিনয় করি। জীবনের প্রথম অভিনয় এতটাই ভালাে হয়েছিল যে আজও তা মনে পড়ে।

আসলে আমার শৈশবের বেশির ভাগ সৃতিই নানার বাড়ির সাথে জড়িত। যদিও আমি নানাকে পাইনি তবে নানি ও মামা-খালাদের পেয়েছি যথার্থ ভাবে। নানি আমাকে খুব আদর করতেন। সবার চোখের আড়ালে তিনি আমাকে বিভিন্ন মজাদার খাবার খেতে দিতেন। শুধু তাই নয়, আমার পরীক্ষায় ভালাে ফলাফলের জন্য তিনি আমাকে পাঁচ’শ টাকাও দেন আংটি গড়ার জন্য। আজ নানি নেই কিন্তু আমার স্মৃতিতে সেসব দিনের কথা আজও অম্লান।

Read More >>  দোয়া মাসুরা

আমার শৈশবের আরেকটি স্মৃতির কথা উল্লেখ করেই এ লেখার সমাপ্তি টানতে চাই। সে ঘটনাটি আমার দাদার বাড়ি। ঈদ উপলক্ষে বরাবরই বাবা বড় আকারের একটি খাসি কিনতেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা এলাকার সর্ববৃহৎ হতাে। আমি সেবার ছাগল কিনে আনার পর তা নিয়ে পাড়ায় বের হয়েছি বন্ধুদেরকে দেখানাের জন্য। হঠাৎ আমার কাছ থেকে ছাগলটি প্রচণ্ড শক্তিতে ছুটে যায় ।

আমি বহু চেষ্টা করেও ওটাকে ধরে রাখতে পারিনি। অবশেষে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি আসি। সবাই বিষয়টি বুঝতে পেরে ছাগল খুঁজতে বের হয়। দুই দিন পর ছাগলটির সন্ধান মেলে। এসব স্মৃতি ছাড়াও আরাে বহু স্মৃতি মনকে নাড়া দেয়।

পরিবারের স্মৃতি

আমার শৈশবের আরেকটি বড় অংশ জুড়ে আছে নানার বাড়ি। নানাকে আমি দেখিনি, কিন্তু নানির স্নেহ আমি পেয়েছি প্রচুর। তিনি আমাকে লুকিয়ে মজার মজার খাবার দিতেন। পরীক্ষায় ভালো ফল করলে আমাকে পাঁচশো টাকা দিয়েছিলেন আংটি গড়ার জন্য। নানি আজ আর নেই, কিন্তু তাঁর সেই ভালোবাসা আমার মনে আজও তাজা।

বিশেষ ঘটনা

একবার ঈদের সময় বাবা একটি বড় ছাগল কিনেছিলেন। আমি বন্ধুদের দেখাতে ছাগলটি নিয়ে বের হই। হঠাৎ ছাগলটি আমার হাত থেকে ছুটে পালিয়ে যায়। আমি অনেক চেষ্টা করেও ধরতে পারিনি। কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে এলাম। পরে সবাই মিলে খুঁজতে বের হয়, আর দুই দিন পর ছাগলটি পাওয়া যায়। এই মজার ঘটনা আজও আমাকে হাসায়।

Read More >>  বঙ্গবন্ধুর উক্তি ও ভাষণ

বর্তমানে আমি : বর্তমানের এ আমাকে অনেক অচেনা মনে হয়। মনে হয় অনেক বেশি যান্ত্রিক হয়ে গেছি। এরপরও যখন গ্রামে যাই তখন পুরনাে বটগাছটির নিচে অন্তত একবার হলেও দাঁড়াই। কল্পনায় আপনা আপনিই হারিয়ে ফেলি নিজেকে। মনে হয় এখনও সেই ফেলে আসা দিনের কোনাে এক বিকেলে দাঁড়িয়ে আছি বটতলায়। বন্ধুরা সব মনের আনন্দে দাড়িয়াবাধা খেলছে।

আমি অপেক্ষায় আছি পরের পর্ব থেকে খেলার জন্যে কিংবা এঁটেল মাটির ছােট ছােট গােলা তৈরি করে তা বটতলায় বসে আগুনে পোড়াচ্ছি সব বন্ধুরা মিলে। পরক্ষণেই যখন বাস্তবে ফিরে আসি তখনই বুকটাতে হালকা এক দুঃখানুভূতি বয়ে যায়। মনে হয় যদি ফিরে যেতে পারতাম শৈশবের সেই দিন গুলােতে।

উপসংহার : কালের যাত্রায় সবকিছুই পাল্টে যায়। আমার জীবনেও শৈশব, কৈশাের পেরিয়ে গেছে বহু আগে। কিন্তু ফেলে আসা দিন গুলাের হাজারাে ঘটনার কিছু কিছু চিত্র কখনাে ভােলা যায় না। মনের অজান্তেই সেগুলাে মনের আয়নায় ভেসে ওঠে, আর তখন তৃষ্ণার্ত মন ফিরে পেতে চায় হারানাে শৈশব। কিন্তু তা সম্ভব নয়। তাইতাে কবি গুরুর ন্যায় আমারও বলতে ইচ্ছে হয়-
“দিনগুলি মাের সােনার খাঁচায় রইল না রইল না
সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি।”

You May Also Like

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *