আমরা সকলেই ফুড পয়জনিং এই শব্দটির সাথে পরিচিত। তবে এই ফুড পয়জনিং কেন হয় এ নিয়ে আমাদের মাঝে অনেক ভ্রন্ত ধারনা রয়েছে। আমরা অনেকেই মনে করি বমি হলেই বা পেট ব্যাথা হলেই ফুড পয়জনিং হয়েছে। আসলে বিষয়টি এমন নয়। তাহলে ফুড পয়জনিং কাকে বলে? শুধু মাত্র খাবারের মাধ্যমে মাধ্যমে যে সংক্রমণ সৃষ্টি হয় তাকেই ফুড পয়জনিং বলে। আসুন জানি ফুড পয়জনিং কেন হয়, এর কারন গুলো, কিভাবে ফুড পয়জনিং হতে নিরাপদ থাকা যায়, এবং কেউ আক্রান্ত হলে করনীয় বিষয় সম্পর্কে।
ফুড পয়জনিংয়ের লক্ষন কি? বিভিন্ন লক্ষনের ভিতর অন্যতম হচ্ছে বার বার পাতলা পায়খানা হওয়া, বমি হওয়া, পেটে ব্যাথা, বদহজম ছাড়াও শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে দেহে পানি শূন্যতা সৃষ্টি, দূর্বল হয়ে পরা, গায়ে প্রচন্ড জ্বর হওয়ার এবং কাজের প্রতি অনিহার সৃষ্টি হতে পারে।
ফুড পয়জনিং কেন হয়
বিভিন্ন কারনে ফুড পয়জনিং হতে পারে। বিশেষ করে বাসি খাবার, অনেক দিন যাবত ফ্রিজে রাখা খাবার, খাবারে গন্ধ হয়ে গেলে সে খাবার খেলে ফুড পয়জনিং হওয়ার সম্ভবনা ১০০ ভাগ নিশ্চিত। এছাড়াও রান্নার আগে সবজি বা মাছ মাংস ভালো ভাবে না ধুয়ে নেওয়া এবং কম সিদ্ধ খাবার খাওয়ার কারনে ফুড পয়জনিং হতে পারে। মূলত ফুড পয়জনিং সমস্যার সৃষ্টি হয় ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস ও পরজীবি বা ছত্রাকের কারনে। আর এগুলোর যে কোন একটি খাবার থাকলে আপনি আক্রান্ত হতে পারেন।
ফুড পয়জনিং হতে সুরক্ষিত থাকার উপায়
এটি সেহেতু বেশ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে তাই ফুড পয়জনিং সম্পর্কে আমাদের সচেতনতাও জরুরি। বিশেষ করে গরমের দিনে মানুষের মাঝে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। তাই গরমের দিনে আমাদের আরো বেশি সতর্ক হতে হবে। কখনোই বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। গন্ধ যুক্ত খাবার সম্পুর্ন ভাবে পরিহার করতে হবে। যদি মনে করেন খাবার নষ্ট হয়ে গিয়েছে বা সামান্যতম গন্ধও আসছে তবেও কোন মতে ওই খাবার মুখেও দিবেন না। আমরা খাবার ভালো রাখার জন্য ফ্রিজ ব্যাবহার করি। এবং রান্না করে বহুদিন রেখে দেই। কিন্তু এটি করা মোটেই ভালো নয়। কারন ফ্রিজে খাবার বেশি দিন থাকলে এবং সে খাবার খেলে ফুড পয়জনিং হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
এছাড়াও আমরা যখন খাবার রান্না করি তখন তা ভালো ভাবে ধুয়ে পরিস্কার এবং ব্যাকটেরিয়া মুক্ত করে নিতে হবে। কারন সবজি বা মাছ মাংসে প্রচুর পরিমানে ব্যাকটেরিয়া লেগে থাকে যা ভালো ভাবে না ধুয়ে নিলে যায় না। এছাড়াও রান্নার ক্ষেত্রেও আমাদের সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। রান্না করা খাবার ভালভাবে সিদ্ধ হয়েছে কিনা তা খেয়াল করে দেখতে হবে।
অনেকের ঘরেই আরশোলার উপদ্রপ দেখা যায়। এ কারনে খাবার ভালভাবে ঢেকে রাখতে হবে। কখনোই খাবার জিনিস না ঢেকে রাখা যাবে না। খোলা খাবারের উপর আরশোলা বসতে পারে। যার ফলে তারা বিভিন্ন রোগ জিবানু খাবারে ছড়িয়ে দিতে পারে।
আমরা সকলেই ভাজাপোড়া খেতে পছন্দ করি। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় কোন কিছু ভাজি করার পরে তেল গুলো রাখা হয় পরে ব্যাবহারের জন্য এবং অনেকে অসচেতন অবস্থায় রাখে যার ফলে তেলে বিভিন্ন ময়লা ও জিবানু মিশতে পারে। যার ফলে ফুড পয়জনিং হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যায় কয়েকগুন। একই তেল দিয়ে বার বার কোন কিছু কিছু দীর্ঘদিন ভাজি করা হয় যা মোটেই স্বাস্থ্য সম্মত নয়।
উপরোক্ত নিয়ম কানুন গুলো মেনে চললে ফুড পয়জনিং হতে নিরাপদ থাক সম্ভব। একারনে আমাদের সকলকে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।
ফুড পয়জনিং হলে কি করবেন- উপরে উল্লেখ্য লক্ষন গুলোর মাধ্যমে বোঝা যায় ফুড পয়জনিং হওয়ার ব্যাপারে। যদি কেউ ফুড পয়জনিংয়ে আক্রান্ত হয় তাহলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এবং সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রোগি যেন ডিহাইড্রেট না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা। একারনে প্রচুর পরিমাণ স্যালাইন পানি পান করতে হবে।