আয়াতুল কুরসি : কুরআন শরীফ এর সুরা বাকারা এর ২২৫ নম্বর আয়াত কে আয়াতুল কুরসি বলা হয়। আয়াতুল কুরসি এর অগণিত ফজিলত রয়েছে। যারা আয়াতুল কুরসি এর বাংলা উচ্চারন ও অর্থ সহ ফজিলত জানতে চান তারা এই লেখাটি থেকে জেনে নিতে পারবেন। নিচে আয়াতুল কুরসি এর আরবি উচ্চারন, বাংলা উচ্চারন, বাংলা অর্থ এবং ফজিলত উল্লিখ করা হলো।
আয়াতুল কুরসি আরবি উচ্চারণ :
اَللهُ لآ إِلهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ، لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَّلاَ نَوْمٌ، لَهُ مَا فِى السَّمَاوَاتِ وَمَا فِى الْأَرْضِ، مَنْ ذَا الَّذِىْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ، يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيْطُوْنَ بِشَيْئٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَآءَ، وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ، وَلاَ يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا وَ هُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ-
বাংলা উচ্চারণ :
আল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তা’খুযুহু সিনাতুঁ ওয়ালা নাঊম। লাহূ মা ফিস্ সামা-ওয়াতি ওয়ামা ফিল আরদ্বি। মান যাল্লাযী ইয়াশফাউ’ ই’ন্দাহূ ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম, ওয়ালা ইউহিতূনা বিশাইয়্যিম্ মিন ‘ইলমিহি ইল্লা বিমা শা-আ’ ওয়াসিআ’ কুরসিইয়্যুহুস্ সামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদ্বি, ওয়ালা ইয়াউ’দুহূ হিফযুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়্যুল আ’জিম। — (সূরা আল-বাক্বারা আয়াত-২৫৫)
আয়াতুল কুরসি এর বাংলা অর্থ :
আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। কোন তন্দ্রা বা নিদ্রা তাঁকে পাকড়াও করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানাধীন। তাঁর হুকুম ব্যতিত এমন কে আছে যে, তাঁর নিকটে সুফারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখে ও পিছনে যা কিছু আছে সবকিছুই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসমুদ্র হতে তারা কিছুই আয়ত্ত করতে পারে না, কেবল যতুটুকু তিনি দিতে ইচ্ছা করেন তা ব্যতিত। তাঁর কুরসি সমগ্র আসমান ও জমিন পরিবেষ্টন করে আছে। আর সেগুলির তত্ত্বাবধান তাঁকে মোটেই শ্রান্ত করে না। তিনি সর্বোচ্চ ও মহান’।
ফজিলত ও উপকারিতা :
আয়াতুল কুরসি এর ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না। ইহার ফজিলত এতই যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম অনেকগুলো হাদিসে ইহার ফজিলত বর্ণনা করেছেন।
১) আবু উমামা আল বাহিলি (রা.) হতে বর্ণিত আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেন, ” যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফজর নামাজের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তার আর জান্নাতের মধ্যে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।” ( সুনানে নাসায়ি, হাদিস নম্বর ৯৯২৮)
২) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হইতে বর্ণিত আছে, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম এরশাদ ফরমাইয়াছেন, “যে ব্যক্তি ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে আল্লাহ্ তা’আলার পক্ষ থেকে তার জন্য একজন প্রহরী থাকবেন। যিনি ওই ব্যক্তিকে সকাল পর্যন্ত শয়তানের হাত থেকে রক্ষা করবেন।” (সহিহ বুখারী, হাদিস নম্বর ২৩১১)
৩) হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ” প্রতিটি জিনিসের একটি সর্বোচ্চ স্থান থাকে। কুরআনের সর্বোচ্চ স্থান সূরা বাকারা। সূরা বাকারা এমন একটি আয়াত আছে যা কুরআনের অন্য আয়াতে নেতা। সেই আয়াতটি হলো আয়াতুল কুরসি।” ( সুনানে তিরমিজি, হাদিস নম্বর ৩১১৯)
সঠিকভাবে আয়াতুল কুরসি পাঠ করার নিয়ম :
বুজুর্গরা বলেন আয়াতুল কুরসি পাঠের মাধ্যমে শয়তান আমাদের থেকে দূরে থাকে এবং আমরা শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্তি পাই। তাই যখন শয়তান মানব সমাজের মধ্যে পরিভ্রমণ করে তখনই আয়াতুল কুরসী পাঠ করা উত্তম। যেমন সকালবেলা ও সন্ধ্যা বেলা। আল্লামা ইবনে কাইয়িম রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, আমি প্রত্যেক নামাজের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করি। ( তারবিয়্যাতুল নুফুস, পৃষ্ঠা নম্বর ২৩৫)
কেউ যদি প্রত্যেক নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করতে না পারে তাহলে অন্তত যেন ফজরের নামাজের পর এবং মাগরিবের নামাজের পর পাঠ করে। আশানুরূপ এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা পুরো রাত পুরো দিন আমাদেরকে সকল প্রকার বিপদ এবং শয়তানের প্ররোচনা থেকে মুক্ত রাখবেন। আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে আয়াতুল কুরসির উপর উত্তমরুপে আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।