খেজুরের উপকারিতা : খেজুর সারাবিশ্বে জনপ্রিয় একটি খাবার । কারন খেজুরের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। খেজুর মূলত সকল স্থানে জন্মায় না। বিশেষ করে আরব দেশ গুলোতে প্রচুর পরিমাণে খেজুরের চাষ হয়। প্রতিটি গাছে ৮০ থেকে ১২০ কেজি পরিমাণ খেজুর হয়ে থাকে। এবং এসকল দেশ থেকে অন্য দেশে রপ্তানি করা হয়। আমাদের দেশেও সারা বছর প্রচুর পরিমাণে খেজুর খেয়ে থাকে মানুষ। রমজান মাসে খেজুরের চাহিদা ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধি পায়। আজ আমরা এই জনপ্রিয় খাদ্য খেজুরের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা সম্পর্কে জানবো।
কোন কোন পুষ্টিগুণ ও ভিটামিন পাওয়া যায় খেজুরে-
বিভিন্ন এবং ভিটামিনে ভরপুর খেজুর। প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে খাদ্যশক্তি বা কিলো ক্যালরি পাওয়া যায় ২৮২। এছাড়াও খেজুরে আছে শর্করা, চিনি, ফাইবার , স্নেহপদার্থ ও প্রোটিন। রয়েছে বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন এ, ভিটামিন বি (থায়ামিন , রিভোফ্লাবিন, প্যান্টোথেনিক এসিড, ন্যায়সেন, ফোলেট, ভিটামিন b6) , ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে । এ ছাড়াও রয়েছে ক্যালসিয়াম, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ও দস্তা।
খেজুরে কি কি খাদ্য উপাদান রয়েছে এ সকল বিষয় জানলাম। খেজুরের উপকারিতা সম্পর্কে-
উচ্চ রক্তচাপ রোধে খেজুর– হাই ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ বর্তমান সময়ে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করছে। আমাদের দেশে এরকম বহির্বিশ্বে অধিকাংশ লোক উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রয়েছেন। এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে ওষুধ সেবন করা লাগে অধিকাংশ মানুষের। অবাক করা বিষয় হলো আমরা চাইলে ওষুধ সেবন না করেই আমাদের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এর জন্য আমাদের নিয়ম মেনে চলা এবং সুশৃংখল খাদ্যভ্যাস অত্যন্ত জরুরি। এমন অনেক খাবার রয়েছে যেগুলো উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে। এর মধ্যে অন্যতম একটি খাবার হচ্ছে খেজুর। দৈনিক চার থেকে পাঁচটি খেজুর নিয়মিত খেলে উচ্চ রক্তচাপ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে।
গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণে খান খেজুর– গ্লুকোজ আমাদের দেহের জন্য অন্যতম একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। আর একারণেই দেহে যাতে গ্লুকোজের ঘাটতি না হয় সে বিষয়ে আমাদের খেয়াল রাখা জরুরী। গ্লুকোজের অভাব সৃষ্টি হলে স্বাস্থ্যের অবনতি হতে পারে। কারণে শরীরে গ্লুকোজের ঘাটতি হচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এবং দৈনিক চাহিদা মতো গ্লুকোজ গ্রহণ করতে হবে। আর এই চাহিদা পূরণ করার ক্ষেত্রে খেজুর হতে পারে উৎকৃষ্ট মানের একটি খাবার। আমরা প্রতিদিন যে সকল খাবার খাই আর মাধ্যমে অনেকাংশেই গ্লুকোজের ঘাটতি পূরণ হয়। দৈনিক চার-পাঁচটি খেজুর খেলে গ্লুকোজের ঘাটতি হবে না।
রোগ প্রতিরোধে খেজুর– সুস্থ জীবন যাপনের জন্য রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা অত্যন্ত জরুরি। কারণ একটি মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যত কম হবে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পাবে। এই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর খাদ্য এবং ভিটামিন এর কোন বিকল্প নেই। খেজুরে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান এবং ভিটামিন। এগুলো আমরা আগেই জেনেছি। নিয়মিত খেজুর খেলে হার্ট ভালো থাকে, বৃদ্ধি পায় স্মৃতিশক্তি, হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়, অ্যানিমিয়া দূরে রাখে। এবং এতে শরীর খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে। এছাড়াও খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা সকল প্রকার রোগ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করতে বাধা প্রদান করে।
ওজন বৃদ্ধি করতে খেজুর খান– অনেকেই আছেন স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছেন। অতিরিক্ত চিকন এবং স্বাস্থ্যহীনতার ফলে দৈহিক সৌন্দর্য যেমন নষ্ট হয়। ও এর প্রভাব কিন্তু ব্যক্তিগত জীবনেও পরে। তবে যারা ওজন বৃদ্ধি করতে চান তারা দৈনিক পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করুন। এবং এক থেকে দেড় মাস পরে পরিবর্তন দেখুন! কারণ খেজুর একটি পুষ্টিকর ফল যা আপনার দেহের ক্ষয়পূরণ এবং পুষ্টি সাধন করবে। শরীর গঠন করতে সহায়তা করবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে খেজুর খান– কোষ্ঠকাঠিন্য একটি মারাত্মক সমস্যা। অনেকেই এই সমস্যায় ভুগতেছেন। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা রয়েছে তাঁরা প্রতিদিন রাতের বেলা এক গ্লাস পরিমাণ পানির ভিতর চার থেকে পাঁচটি খেজুর ভিজিয়ে রাখুন। এবং সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে খেজুর ভেজানো পানি পান করুন। দেখুন নিমেষেই দূর হয়ে যাবে কোষ্ঠকাঠিন্য।