ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

ডিজিটাল বাংলাদেশ রচনা

ভূমিকাঃ বর্তমান নাগরিক সভ্যতার ক্রমােন্নয়নে বিজ্ঞানের গৌরবময় উপস্থিতি বিশ্বসভ্যতাকে পৌছে দিয়েছে আবিষ্কারের চূড়ান্ত পর্যায়ে।বিজ্ঞান বিশ্ববাসীর কাছে তার অফুরন্ত ভাণ্ডার উন্মক্ত করে দিয়ে বিশ্বের জাতিসমূহকে আহ্বান করছে তার স্বপ্নসুধা পান করে বিশ্বে পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হতে। আর এটিই যেন ধ্বনিত হয়েছে বিজ্ঞানী হলডেন -এর কণ্ঠে, “We need Science before.” আর বিজ্ঞানের এ রহস্যময়ী আবেদনে সাড়া দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতাে বাংলাদেশও এগিয়ে ছলেছে।স্বাধীনতার এত গুলো বছর অতিক্রান্ত করেছে বাংলাদেশ, কিন্তু এর উন্নতি বলতে তেমন কিছু আজও দেখা যায়নি। আর তাই বর্তমান দেশকে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ (Digital Bangladesh) হিসেবে ঘােষণা দিয়েছে। যার অর্থ হলাে উনয়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে সনাতন পদ্ধতির স্থলে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির প্রয়ােগ,যার মাধ্যমে একদিন গড়ে ওঠবে স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ। Read more: বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ রচনা

উন্নত বিশ্বে প্রযুক্তিনির্ভরতা : বিজ্ঞানের বা প্রযুক্তির ইন্দ্রজালিক শক্তির প্রতিযােগিতা চলছে বিশ্বব্যাপী। হিংস্র পশুপাখি আর প্রকৃতির বিরুপ আচরণ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য মানুষ যে প্রযুক্তির আশ্রয় নিয়েছিল তা আজ সমদ্ধি লাভ করেছে সর্বত্র। চীন, রাশিয়া, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পৃথিবীর বহুদেশ আজ প্রযুক্তিকে তাদের উন্নয়নের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করেছে। এমনকি এর সহায়তায় বিশ্বে এরা আজ
Super power -এর মর্যাদা লাভ করেছে।

মানবজীবনে প্রযুক্তি : সভ্য জগতের মানুষ এখন সম্পূর্ণভাবে প্রযুক্তিনির্ভর। বৃহত্তর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আছে প্রযুক্তির সক্রিয় ও প্রত্যক্ষ ভূমিকা। কৃষি, শিল্প, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনােদন যেদিকে তাকানাে যায় সেখানেই দেখা যায় প্রযুক্তির আধিপত্য। অর্থাৎ একথা এখন ধ্রুবতারার মতাে সত্য যে, মানুষের জীবনে প্রযুক্তির বিকল্প এখন আর কিছু নেই। মানুষ প্রযুক্তি ছাড়তে চাইলেও প্রযুক্তি তাদেরকে ছাড়বে না।

ডিজিটাল বাংলাদেশ কেমন হবে : বর্তমানে বাংলাদেশের সকল স্তরের মানুষের কাছে আলােচিত বিষয় হলাে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ।সবার মনে একটিই কৌতূহল, কেমন হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ।” ইংরেজি ‘Digital’ শব্দের অর্থ হলাে কম্পিউটার প্রযুক্তির সাথে সম্পর্ক স্থাপন বা সংযুক্ত হওয়া। মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ’ -এর অর্থ হলাে একটি আই.সি.টি (Information and Computing Technology.) অর্থাৎ তথ্য ও কম্পিউটারভিত্তিক প্রযুক্তি। যার লক্ষ্য হলাে প্রযুক্তিনির্ভর সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের আধুনিকায়ন করা যেখানে অন লাইনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সংযুক্ত থাকবে বাংলাদেশের মানুষ। যেখানে এদেশের সকল সরকারি, আধাসরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে তাদের কার্য সম্পাদন করবে। এটিই হলাে ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা।

ডিজিটাল বাংলাদেশের উদ্দেশ্য : ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য হলাে সরকার, ব্যবসায়-বাণিজ্য, কৃষি উৎপাদন, শিক্ষাসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নতি সাধনের ওপর জোর দেওয়া, যার মাধ্যমে একদিন বাস্তব রূপ লাভ করবে স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ।

শিক্ষা ক্ষেত্রেঃ শিক্ষা যেকোনাে দেশের উন্নয়নে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। তাই ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমাদেরকে করতে হবে প্রযুক্তিনির্ভর। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকসহ শিক্ষা ব্যবস্থার সকল স্তরে ডিজিটাল ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান পদ্ধতি চালু করা এবং সারা দেশব্যাপী ইন্টারনেট সংযােগ বিতত করতে হবে।

কৃষি খাতেঃ কর্ম নির্ভর অর্থনীতির বাংলাদেশে কৃষিকে বাদ দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করা কখনই সফল হবে না। আর তাই স্বপ্নের কৃষিকে করে তুলতে হবে প্রযুক্তিনির্ভর। জমি কর্ষণ থেকে শুরু করে শস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে প্রযুক্তিকে প্রয়োগ করতে পারলে ৬ গুণ বেশি উৎপাদন সম্ভব। আর তাই কৃষির প্রাণভূমি বাংলাদেশকে ডিজিটাল করে এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার জন্য কৃষিতে আনতে হবে প্রযুক্তির ছোঁয়া।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে : রােগ নিরাময়ের পূর্বশর্ত হলাে সঠিকভাবে রােগ নির্ণয় । আর এটির নির্ভুল সমাধান একমাত্র কম্পিউটার প্রযুক্তির দ্বারা সম্ভব। তাছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পেলে হয়তাে ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে চিকিৎসা হবে দুর্গম স্থানে থাকা কোনাে মূমুর্শ রােগীর।

বিনােদনের ক্ষেত্রে : বিনােদনের ক্ষেত্রে বর্তমান যুগের ছেলেমেয়েদের কাছে কম্পিউটার নেট ওয়ার্ক একমাত্র জনপ্রিয় মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দূর দেশের কারও সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন, খেলাধুলা প্রভৃতি এখন মাউসের একটি ‘ক্লিক’ মাত্র । স্বপ্নের বাংলাদেশের প্রতিটি স্থানেই হয়তাে একদিন বসবে বিনােদনের মিলনমেলা।

যােগাযােগ ক্ষেত্রে : বর্তমান বিশ্বকে বলা হয় এক Global Village. কম্পিউটার প্রযুক্তিনির্ভর ইন্টারনেট, অনলাইন, ফোন, ফ্যাক্স প্রভৃতির মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যােগাযােগ স্থাপন এখন কিছু সময়ের ব্যাপার মাত্র। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে উঠলে দেশের প্রতিটি মানুষ বিশ্ব তথ্য প্রযুক্তি মহাসড়কে তার জ্ঞানের চাকাকে সচল করতে সমর্থ হবে। যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে।

নিরাপত্তা বিধানে : বর্তমান জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই নিরাপত্তার বিষয়টি একটি গুরত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ হিসেবে স্বীকৃত। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে জাতির উন্নয়নের গতি তুরান্বিত হয়। কারণ নিরাপত্তা হীনতায় কোনাে জাতিই দেশের সুষম উন্নয়ন আনতে পারে না। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নে ডিজিটাল বাংলাদেশের কম্পিউটার প্রযুক্তি রাখতে পারবে অগ্রণী ভূমিকা।

প্রকাশনার ক্ষেত্রে : কম্পিউটার প্রযুক্তি অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশের প্রকাশনা খাতে ব্যবহূত হচ্ছে। প্রকাশনা খাতে তার এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সূচিত করেছে। নির্ভুল তথ্য এবং সঠিক বানান নির্ণয়ে কম্পিউটার প্রযুক্তি সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে স্বপ্নের বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

ব্যাংকিং ব্যবস্থার ক্ষেত্রে : বাংলাদেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থায় কম্পিউটারে অবদান অকল্পনীয়। কোটি কোটি টাকার লেনদেনের নির্ভুল হিসাব-নিকাশ মানুষের পক্ষে যা অসম্ভব এবং সময়সাপেক্ষ ছিল, তা বর্তমান কম্পিউটার প্রযুক্তি করছে সব্যসাচীর মতাে। তাছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে বৈদেশিক লেনদেন, এটিএম কার্ডের মাধ্যমে টাকার ঝুঁকিমুক্ত লেনদেন বর্তমান বাংলাদেশকে ভবিষ্যৎ ডিজিটাল বাংলাদেশেরই আভাস দান করছে।

সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে : ইন্টারনেটের সাহায্যে বর্তমানে একটি পত্রিকা বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রকাশিত হচ্ছে। ফলে এখন পত্রিকা মানুষের কাছে পৌছে যাচ্ছে অতিসত্বর। তাছাড়া ওয়েব সাইডের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদও আমরা ঘরে বসেই পেয়ে যাচ্ছি।ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা হলে হয়তাে আমরা ডিজিটাল পত্রিকাও পেয়ে যাবাে হাতের কাছে।

শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে : শেয়ার বাজারের লেনদেন এবং বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পণ্যের ক্রয়-বিক্রয়ের হিসাব রাখতেও এখন ব্যবহৃত।হচ্ছে কম্পিউটার প্রযুক্তি অনলাইনের মাধ্যমে এখন ঘরে বসেও লেনদেনের বিষয়টি অতি সহজেই করে নেয়া যাচ্ছে। যা ডিজিটাল বাংলাদেশ বাজায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অনলাইন তথ্যকেন্দ্র স্থাপন : গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বিভিন্ন তথ্য ও সেবা প্রতিষ্ঠা মানুষের জানার এবং পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আর এটি সম্ভব একমাত্র অনলাইন তথ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন। যার মাধ্যমে প্রতিটি মানুষ সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ ও সেবা গ্রহণ করতে পারবে। যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য একান্ত আবশ্যক এবং প্রয়ােজনীয় একটি বিষয়।

একটি অশনি সংকেত : বলতে অনেক কষ্ট লাগে এই ভেবে যে আমরা বাঙালি জাতি । যে জাতি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বীরের বেশে অর্জন করেছিল স্বাধীনতা, সেই জাতি আজ অলসতার দায়ে অভিযুক্ত।আরামপ্রিয় বাঙালি সমাজ আজ কর্মবিমুখ । সেই জাতি আজ ডিজিটাল।বাংলাদেশের স্বপ্ন বাহ্বায়নে অগ্রসর হচ্ছে। আর সেই সাথে একটি আশঙ্কা জাগ্রত হচ্ছে যে, এটি আমাদেরকে করবে আরও অলস, শুধু
আমাদের প্রেক্ষিতে নয়, সারা বিশ্বের প্রযুক্তি নির্ভরশীল দেশ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের অভিমত। মানুষের সৃষ্ট প্রযুক্তি দিয়ে কাজ করাতে করাতে এমন এক সময় আসবে, যখন কাজের ক্ষুধায় উন্মত্ত দানব তার স্রষ্টা মানুষকে ক্রীতদাস বানাবে। কথাটাকে একটু ঘুরিয়ে দেখলেই দেখা যাবে বাস্তব সত্যটা বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতেও সত্য হয়ে দাড়িয়েছে। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হলে ডিজিটাল প্রযুক্তি মানুষের
কাজ কেড়ে নিলে বেকারের মিছিলে ভরে যাবে দেশ। অন্যদিকে এক শ্রেণির আরাম প্রিয় মানুষ হয়ে পড়বে গৃহ বন্দি। ডিজিটাল শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীরা বই পড়ার অভ্যাস ত্যাগ করবে, ফলে জাতি প্রকৃত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়বে। তবে এটি নির্ভর করবে ডিজিটাল বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার ওপরে যা খারাপ ভালাে দু দিকই বয়ে আনতে পারে।

তবুও আশার আলাে : পূর্ব সংকেত পড়ার পর মনে হতে পারে তাহলে কি ডিজিটাল বাংলাদেশ আমাদের জন্য অকল্যাণই বয়ে আনবে!”অবশ্যই না, আলাে-আঁধারের মতাে সর্বক্ষেত্রে সুবিধা-অসুবিধা থাকবেই। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশে কার্য ব্যবস্থাপনাও যদি ডিজিটালভাবে এবং প্রযুক্তি ও মানুষের সমন্বয়ে করা যায় তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন আমাদেরকে একটি সমৃদ্ধিশালী বাংলাদেশে নিয়ে যাবে।প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে যদি মানুষ কর্মের সুযােগ পায় তবে তারা কাজে যেমন আনন্দ পাবে তেমনি তারা হয়ে উঠবে একেক জন দক্ষকর্মী। তাই শত অন্ধকারের মধ্যেও আমরা আশার আলাে দেখি ডিজিটাল বাংলাদেশে মানুষের স্বচ্ছন্দ বিচরণ ।

উপসংহার : বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল দেশ। এদেশে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন বলতে যা হয়েছে তা অতি সামান্য। যার ফলশ্রুতিতে স্বাধীনতার এত বছর পরও বাংলাদেশ তার অর্থনীতিকে উন্নয়নের ধারায় নিয়ে আসতে পারেনি। এখন প্রযুক্তি বিদ্যার বিজয় সারা বিশ্বে ঘােষিত হচ্ছে মহা সমারােহে, তারই অংশ হিসেবে বর্তমান সরকার, বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যমাত্রা হাতে।নিয়েছে। বাংলাদেশেও প্রযুক্তির ব্যবহারের উন্নতি সাধন করা কঠিন কিছু নয়। এরজন্য শুধু দরকার সরকারের সঠিক দিকনির্দেশনা ও কর্মতৎপরতা আর সাধারণ মানুষের সহযােগিতার হাত। তবেই একদিন বাস্তবায়ন হবে স্বপ্নের এক দেশ বা ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ।’

4 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *