শিশুদের বঙ্গবন্ধু রচনা

শিশুদের বঙ্গবন্ধু রচনা

ভূমিকা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কে বলা হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী। তিনি বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন মহান নায়ক। বাঙালি জাতি আজও বিশ্বাস করেন শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম না হলে হয়ত বাংলাদেশ আজও স্বাধীন হতে পারতে না। আর এ কারনেই তাকে “জাতির পিতা” বলা হয়। তিনি একদিকে যেমন একজন সফল নেতা তেমনি তার ভিতরে অন্য সকল গুণাবলিই বিদ্যমান। তিনি শিশুদের অত্যন্ত ভালবাসতেন। এবং শিশুদের মমতা ও স্নেহ করতেন। একই সাথে তিনি ছোট ছোট শিশুদের সাথে সময় কাটাতে খুবই ভালবাসতেন। এ কারনেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিন ১৭ মার্চ তারিখকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এবং এই শিশু দিবসে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিন এবং শিশু দিবস হিসেবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের জীবনী: ১৭ মার্চ তারিখে ১৯২০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সায়েরা খাতুন। ছয় ভাই বোনের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। তার স্কুল জীবন শুরু হয় গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনার মধ্যে দিয়ে ১৯২৭ সালে। এবং গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুলে পড়ালেখা করার সময় থেকেই তার ভিতরে নেতৃত্বের মনোভাব সৃষ্টি হয়। ছোট বড় সকলের জন্যই তার হৃদয় ছিল মায়ায় ভরা। তিনি যখন বিভিন্ন কাজে গ্রামে গঞ্জে যেতেন তখন গাড়ি থামিয়ে ছোট ছোট শিশুদের সাথে তিনি গল্প করতেন। এবং বিভিন্ন উপহার দিয়ে শিশুদের মুখে হাসি ফুটাতেন তিনি। তবে ১৯৭৫ সালে আগষ্টের ১৫ তারিখে কিছু নর পশু এই মহান নেতাকে সপরিবারে হত্যা করে।

শিশুদের বঙ্গবন্ধু: বঙ্গবন্ধু সবসময় শিশুদের অনেক ভালবাসতেন তা তার ব্যাবহার থেকেই সুস্পষ্ট বোঝা যায়। তিনি তার কর্মব্যস্ত জিবনে শিশুদের সাথে সময় কাটাতে খুবই ভালবাসতেন। এবং বিভিন্ন সময় শিশুদের নিয়ে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন আয়োজনে অংশগ্রহণ করতেন। তিনি যখন গ্রামে ফিরতেন তখন পথে শিশুদের সাথে দেখা হলে গাড়ি থামিয়ে তাদের সাথে কথা বলতেন। তাদের মাঝে নিজেকে ভাগ করে নেওয়ার চেষ্টা করতেন। এছাড়াও তিনি শিশুদের বিভিন্ন উপহার সামগ্রি প্রদান করতেন তাদের মুখে হাসি ফোটাতে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে কচি-কাঁচার মেলা আয়োজিত শিশু আনন্দ মেলায় এসেছিলেন ১৯৬৩ সালে সে সময় তিনি বঙ্গবন্ধু উপাধি হয়তো পেয়েছিলেন না কিন্তু তৎকালীন সময় তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের একজন বড় মাপের নেতা। তিনি তখন সেখানে শিশুদের জন্য ক্ষুদে বক্তব্য প্রদান করে। যার থেকে খুব সহজেই স্পষ্ট হয়ে যায় তিনি শিশুদের কতটা ভালবাসতেন সে বিষয়ে। তিনি তখন বলেছিলেন, “এই সকল পবিত্র শিশুদের সঙ্গে মিশি মনকে হালকা করার জন্য”

এরপরে তিনি যখন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হলেন তখন সময়টা ছিল ১৯৭২ সাল। এ সময়ে কেবল মুক্তি যুদ্ধ শেষ হলো। তখনকার শিশুরাও ছিল এ যুদ্ধের প্রতক্ষ্যদর্শী। সে সময়ে কচিঁ কাচাঁর মেলার কিছু ক্ষুদে শিশুরা মুক্তিযুদ্ধের ৩০০ টি ছবি আঁকে বঙ্গবন্ধুকে দেখাবে বলে। এর থেকে ৭০ টি ছবি বাছাই করে শেখ মুজিবুর রহমান-কে দেখানো হয়। তিনি প্রতিটি ছবি মনোযোগ সহকারে দেখেছিলেন এবং সেসকল শিশুদের প্রশংসা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন আমাদের দেশের শিশুরা এতো সুন্দর ছবি আঁকতে পারে এ সকল ছবি না দেখলে জানাতেই পারতাম না। এবং তিনি বললেন এই ছবিগুলো আমি রাশিয়া সফরে যাওয়ার সময় সাথে করে নিয়ে যাবো সে দেশের শিশুদের জন্য শুভেচ্ছা উপাহার হিসেবে।

শিশুদের প্রতি সহিংসতা বন্ধ করতে এবং শিশুদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালের ২২ জুন জাতীয় শিশু আইন (চিলড্রেন অ্যাক্ট) জারি করেন। যার ফলে শিশুরা তাদের প্রাপ্ত অধিকার পেতে পারে তা নিশ্চিত করতে। এছাড়াও শিশুদের জন্য তিনি আরো অনেক কাজ করে গিয়েছিলেন যা বলে শেষ করার মত নয়। এ কারনেই মুলত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন কে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ সরকার। যার ফলে শিশুদের মাধ্যমে তার জন্মদিনকে চিরস্মরণীয় করে রাখা সম্ভব হয়।

উপসংহার: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একদিকে যেমন ছিলেন একজন ক্ষমতাধর সুযোগ্য নেতা তেমনি ছিলেন একজন নির্মল হৃদয়ের অধিকারী মানুষ! আর তার এই বড় মনের প্রকাশ ঘটেছে তার নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন বিভিন্ন সময়। একই সাথে তার এই শিশুদের সাথে মেলা মেশা ও তার বৃহৎ হৃদয়ের পরিচয় দেয়। তিনি ছিলেন একদিকে যেমন অন্যায়োর সাথে আপোষ হীন নেতৃত্ব তেমনি ছিলেন শিশুদের বন্ধু!

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *