ক্রিকেট রচনা

ক্রিকেট রচনা

রচনাঃ ক্রিকেট
অথবাঃ ক্রিকেট ও বাংলাদেশ
অথবাঃ বাংলাদেশ ক্রিকেট রচনা

(সংকেত: ভূমিকা- উৎপত্তি- খেলার নিয়ম-বিশ্বকাপে বাংলাদেশ – বাংলাদেশের সাফল্য -উপসংহার)

ভূমিকা : ক্রিকেট একটি বিদেশি খেলা হলেও দিন দিন আমাদের দেশে এর জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে।পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষের প্রিয় খেলা ফুটবল ক্রিকেট, একথা বলা শক্ত। বিশ্বকাপ ফুটবলের মতাে এটিরও বিশ্ব আসর বসে। সারা দিনব্যাপী এ খেলা উপভােগের মজাই আলাদা।

উৎপত্তি : ক্রিকেট খেলার উৎপত্তি হয় ইংল্যান্ডে। সে সময় ইংল্যান্ডে স্টু’ বল নামে এক রকম খেলার উৎপত্তি ছিল। সেখান থেকে পরবর্তীতে ক্রিকেট খেলার জন্ম হয়। বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা শুরু হয় ১৯৭৫ সাল থেকে। সেই থেকে ক্রিকেট আজ বিশ্বের বহু দেশের প্রাণের খেলা। প্রতি চার বছর পর পর বিশ্বকাপ ক্রিকেটের আসর বসে।

খেলার নিয়ম : ক্রিকেট খেলার জন্য প্রথমেই দরকার একটি বড় মাঠ। মাঠের মাঝখানে ২২ গজ জায়গায় পিচ করা থাকে। এর দুই প্রান্তে ২৭/২৮ ইঞ্চি উঁচু তিনটি কাঠের লাঠি একসাথে মিলিয়ে ৮ ইঞ্চি চওড়া করে তৈরি করা হয় উইকেট। তার ওপর ৪ ইঞ্চি লম্বা দুই টুকরাে শক্ত কাঠ আলগা করে চাপানাে থাকে, তাকে বলা হয় বেল। দুই দিকের উইকেটের দু’পাশে এক লাইনে ৪ ফুট করে একটি সােজা দাগ কাটা থাকে যাকে বলে বােলিং ক্রিজ’। উইকেট থেকে ৪ ফুট এগিয়ে আরেকটি যে সমান্তরাল দাগ থাকে তাকে ‘পপিং ক্রিজ’ বলে । খেলা শুরুর জন্য মাঠে প্রথম পক্ষের দুজন খেলােয়াড়, অন্য পক্ষের ১১ জন এবং দুজন আম্পায়ার সহ মােট ১৫ জন অবস্থান করে। প্রথমে প্রথম পক্ষের দুজন খেলােয়াড় দুটি ব্যাট হাতে নিয়ে দুই প্রান্তের পপিং ক্রিজে এসে দাঁড়াবে। ব্যাটটির হাতল ১-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। যে বল ছােড়ে তাকে বলে বােলার। যে ব্যাট দিয়ে বল মারে তাকে ব্যাটসম্যান বলে। বল করার জন্য উইকেটের পেছনে যে দাঁড়াবে তাকে বলে উইকেট কিপার। এছাড়া বাকি নয় জন খেলােয়াড় মাঠে থাকে যাতে করে বিপরীত দলের যে খেলােয়াড় ব্যাট দিয়ে বলটাকে মারল তা যেন বেশি দূর না যেতে পারে। এদের ফিল্ডার বলা হয়। ফিল্ডাররা বল ছুড়ে দেবার আগে ব্যাটসম্যান নিজেদের জায়গা বদল অর্থাৎ এক পপিং ক্রিজ থেকে অন্য প্রান্তের পপিং ক্রিজে যাওয়াকে রান’ বলে। যতবার দুই ব্যাটসম্যান জায়গা বদল করে তত রান হয়। ব্যাটসম্যান যে বলটি মারল তা যদি ফিল্ডাররা না ঠেকাতে পারে মাটিতে গড়িয়ে গড়িয়ে মাঠের চারপার্শ্বে চিহ্নিত বৃত্তাকার দাগের বাইরে চলে যায় তবে পপিংক্রিজ বদল না করলেও ৪ রান হয়। আর বল যদি উড়ে গিয়ে বৃত্তাকার চিহ্নের বাইরে চলে যায় তখন হয় ৬ রান, যাকে বলে ছক্কা। কেউ একা ১০০ রান করলে হয় সেঞ্চুরি। আর পঞ্চাশ রান করলে হয় হাফ সেঞ্চুরি। যে দল যত বেশি রান করে সেই দলই জয়ী হয়।

Read More  Paragraph The Tree Lover

বিশ্বকাপে বাংলাদেশ : আইসিসি-র নিয়ম মােতাবেক এক এক সময় এক এক দেশে বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয়। এ হিসেবে শতাব্দীর শেষ বিশ্বকাপ ক্রিকেট অনুষ্ঠিত হয় ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ডে। এতে ১২টি দল অংশ নেয়। এ বিশ্বকাপে দুটি দল যােগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। তারা হলাে- নেদারল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এদের স্থানে আসে অপরাজিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ এবং স্কটল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানের মধ্যে ফাইনাল খেলা অনুষ্ঠিত হয়। মাত্র ১৩২ রানে অল আউট হয়ে যায় পাকিস্তান। সুতরাং শিরােপা আসে অস্ট্রেলিয়ার হাতে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের কৃতিত্ব আরাে সমৃদ্ধি লাভ করে। দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠার স্বপ্ন নিয়ে ডেভ হােয়াটমােরের প্রশিক্ষণে মাশরাফি, আশরাফুল, তামিম ওয়েস্ট ইন্ডিজে যায়। বিশ্ব কাপের প্রথম খেলাতেই বিশ্ব ক্রিকেট বােদ্ধাদের বাংলাদেশের ক্রিকেট শক্তির পরিচয় দেয় ভারতকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়ে। শক্তিশালী দক্ষিণ আফ্রিকাকে পরাজিত করে বাংলাদেশ তাদের শক্তির আরাে একবার প্রমাণ দেয়। অপ্রত্যাশিত ভাবে আয়ারল্যান্ডের কাছে পরাজয় বাংলাদেশের বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউড়ে ওঠার স্বপ্ন শেষ করে দেয়। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কাতে। অনুকূল আবহাওয়া, পরিচিত পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে আশা করা যায় বাংলাদেশ আরাে অনেক ভালাে খেলা উপহার দিবে।

Read More  ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা

বাংলাদেশের সাফল্য : ক্রিকেটে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অতি উজ্জ্বল। আইসিসিতে বাংলাদেশ অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে ‘৯৯-এর বিশ্বকাপ ক্রিকেটে অংশ নেয়। একটি খেলায় বাংলাদেশ বিশ্ব সেরা দেশ পাকিস্তান কে হারায় ৬২ রানে। ২০০০ এ বাংলাদেশ টেস্ট খেলার মর্যাদা লাভ করে। সরকার ও জনগণ খুব আন্তরিক ক্রিকেটের জন্য। এখন খেলােয়াড়রা আন্তরিক হলেই আমরা যে বিজয়ের জাতি তা আবারও প্রমাণিত হবে। ২০০৯ সালের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ বিদেশের মাটিতে ক্রিকেট শক্তির বড় ধরনের প্রমাণ রাখে। গ্রেনেডা ও সেন্ট ভিনসেন্ট টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পরাজিত করে বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম ইকবালের সেঞ্চুরি ও জুনায়েদ সিদ্দিকীর ৭৮ রানে বাংলাদেশের ২৭৬ রানের লিড হয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৮১ রানে গুটিয়ে দিয়ে দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট জয়ের নেতৃত্ব দিলেন স্পিনাররা। ৫ উইকেট নিয়ে পুরােভাগে ছিলেন মাহমুদ উল্লাহ। বিশ্ব ক্রিকেটে বাংলাদেশ তার শক্তিকে আরাে একবার প্রমাণ করল ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ড কে হােয়াইটওয়াশ করে। ৫ ম্যাচের সিরিজে একটি খেলা বৃষ্টির কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি বলে ব্যবধান দাঁড়ায় ৪-০। মাশরাফি তামিমের অসুস্থতা থাকার পরেও অধিনায়ক সাকিব সহ ইমরুল কায়েস, শাহারিয়ার নাফিজের ব্যাটিং-এর সাথে সাথে রুবেল, শুভ, রাজ্জাক, সাকিবের বােলিং বাংলাদেশের জয়ের পথকে সহজ করে। অসাধারণ নৈপুণ্যের কারণে সিরিজ সেরা নির্বাচিত হন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। শক্তিশালী নিউজিল্যান্ডকে পরাজিত করে ২০১১ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ নিজেদেরকে শক্তিশালী দলে পরিণত হবার ইঙ্গিত বহন করে।

Read More  অধ্যবসায় রচনা

উপসংহার : আমাদের দেশের খেলাধুলার মধ্যে ক্রিকেটের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এশিয়াতেই ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ আয়ােজক দেশগুলাের একটি। বিভিন্ন প্রতিযােগিতামূলক টুর্নামেন্ট আয়ােজনে বাংলাদেশের অতীত সাফল্য বাংলাদেশ কে বিশ্বের দরবারে আরাে পরিচিত করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় ক্রিকেট বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এদেশের ঢাকার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে। তাছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাম্প্রতিক কালের সাফল্যও ঈর্ষনীয় । ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের অভিমত আসন্ন বিশ্বকাপেও তারা ভালাে ফলাফল করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *